You are currently viewing মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর জীবনী ও রাজনীতির ক্যারিয়ার
নিক্সন চৌধুরী

মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর জীবনী ও রাজনীতির ক্যারিয়ার

মজিবুর রহমান (নিক্সন) চৌধুরী- Biography of Mojibur Rahman (Nikson) Chowdhury; বাংলাদেশের তুখর ও তুমুল জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অন্যতম একজন ব্যক্তিত্ব হলেন নিক্সন চৌধুরী। তার জনসেবা মূলক কার্যক্রম এবং মুক্ত চিন্তা ধারা তাকে অল্প বয়সেই রাজনৈতিক জনপ্রিয়তার উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। যার ফলে তিনি ফরিদপুর জেলায় তার নির্বাচনি এলাকা থেকে দুই দুই বার স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন।

জনপ্রিয় এই রাজনৈতিক নেতার পূর্ণ নাম মজিবুর রহমান চৌধুরী, ডাক নাম নিক্সন চৌধুরী এবং এই নামেই তিনি সারাদেশে ব্যপকভাবে পরিচিত। মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী ১৯৭৮ সালের ৩ মার্চ মাদারীপুর জেলার শিবচরের দত্তপারা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেছেন, তবে তার সাংসদের তথ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতায় তিনি এসএসসি পাস বলে উল্লেখ করেছেন। পারিবারিকভাবেই তিনি রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। বলতে গেলে জ্বিনগতভাবেই তার রক্তে রাজনীতি মিশে আছে।

এক নজরে নিক্সন চৌধুরী

মূলনামঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী

ডাকনামঃ নিক্সন চৌধুরী

জন্মঃ ৩ মার্চ ১৯৭৮

জন্মস্থানঃ দত্তপাড়া, শিবচর, মাদারীপুর

ভাষাঃ বাংলা

ধর্মঃ ইসলাম

জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী

পেশাঃ রাজনীতিবীদ, ব্যবসায়ী

প্রেসিডিয়াম সদস্যঃ  আওয়ামী যুবলীগ

রাজনৈতিক দলঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

প্রথম সংসদ সদস্যঃ ২০১৪ সালে

বাবাঃ ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী

মাঃ ফিরোজা বেগম

বৈবাহিক অবস্থাঃ বিবাহিত

বিয়ে করেনঃ ২০১৬ সালে

স্ত্রীঃ তারিন হোসেন

সন্তানঃ ১ টি

শ্বশুরঃ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

ভাইঃ নূর-ই-আলম চৌধুরী ( সংসদ সদস্য)

দাদীঃ ফাতেমা বেগম ( বঙ্গবন্ধুর বোন)

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ ঢাকা কলেজ

দাদাঃ জানা নেই

নিক্সন চৌধুরীর পরিবার ও প্রাথমিক জীবন

নিক্সন চৌধুরীর বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী এবং মা ফিরোজা বেগম। তার বাবা ইলিয়াস চৌধুরী, (যিনি দাদাভাই নামে পরিচিত) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবীদ, গণপরিষদের প্রাক্তন সদস্য এবং সাবেক সাংসদ। ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদে তৎকালীন ফরিদপুর- ১৩ আসন থেকে ও ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদে মাদারীপুর -১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর বড় ভাই নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন ও বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবীদ ও মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য। নূর-ই আলম চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মাদারীপুর-১ থেকে ২০১৪ সালে সংসদে নির্বাচিত হন এবং তিনি সংসদের প্রধান হুইপ। এছাড়াও তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।

মজিবুর রহমান এর পিতামহী, অর্থাৎ দাদী ছিলেন শেখ ফাতেমা বেগম, যিনি শেখ মুজিবুর রহমানের বড় বোন এবং তার নানী ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় বোন শেখ আমেনা বেগম। তার বাবা-মা ছিলেন ফার্স্ট-কাজিন। পারিবারিক সূত্রে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ এর ফুফাতো ভাই ও বোনের ছেলে হন মজিবুর রহমান চৌধুরী।

আরো পড়ুনঃ শামীম ওসমানের জীবনী

মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর বিয়ে

মজিবুর রহমান চৌধুরী ১৯৯৭ সালে বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম মুনতারিন চৌধুরী। মুনতারিন মজিবুর রহমান চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী। নিক্সন চৌধুরীর সাথে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মুনতারিনের বিয়ে হয় এবং তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তান আছে। কিন্তু ২০১৪ সালে তাদের প্রায় ১৮ বছরের দাম্পত্য জীবনের সমাপ্তি হয় মুনতারিনের রহস্য জনক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।

মুনতারিন চৌধুরী মাত্র ৩৩ বছর বয়সে মারা যান এবং তার মৃত্যুর আনেক চাঞ্চল্যকর তথ্যও পাওয়া যায়। তবে পারিবারিক তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, মুনতারিন এক ঝড়ের রাত্রিতে গুলশান-২ অবস্থিত একটি বাসার চার তলার বারান্দা থেকে পা পিছলে পরে মারা যান এবং পিছনে ছিলো তার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে এবং বাসার গৃহ কর্মী। এরপর পাশের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মুনতারিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

এরপর ২০১৬ সালে মজিবুর রহমান নিক্সন দিত্বীয় বিয়ে করেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর কন্যা তারিন হোসেন কে। তারিন হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছেন এবং তিনি ‘দৈনিক ইত্তেফাকের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক। জন্মসূত্রে তারিনও রাজনৈতিক পরিবারের মেয়া এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ- কমিটিতে তারিন সদস্য পদ লাভ করেন।
মজিবুর রহমান চৌধুরী ও তারিন হোসেন উভয়েরই এটা দিত্বীয় বিয়ে। তারিন হোসেনেরও আগের বিয়ের একটি কন্যা সন্তান আছে।

আরো পড়ুনঃ আন্দালিব রহমান পার্থের জীবনী

মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর রাজনীতির ক্যারিয়ার

মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। মজিবুর রহমান চৌধুরী ২০১৪ সালে বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর জেলার চর ভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসন থেকে সিংহ প্রতিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথম বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এরপর ২০১৮ সালের বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে মজিবুর রহমান চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচন না করায় এবারও তিনি স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচন করেন এবং বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। উক্ত নির্বাচনে মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী পেয়েছিলেন এক লাখ ৪৩ হাজার ৭০৭ ভোট এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংসদ কাজী জাফরুল্লাহ পেয়েছিলেন ৯৫ হাজার ১৮৮ ভোট।

মজিবুর রহমান এর সিংহ আওয়ামী লীগের নৌকাকে ৪৮ হাজার ৫১৯ ভোটে পরাজিত করেন। বরাবরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এলাকা বৃহত্তর ফরিদপুর আওয়মী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ঘাটি এবং এর আগে ১৯৯১ সালে একবার শুধু নৌকার বাইরে বিএনপি ধানের শীষ প্রার্থী চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ।

মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী অত্যন্ত দাপটের সাথে ফরিদপুর-৪ আসনে পর পর দুই মেয়াদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছেন। এর আগে ২০০৮ সালে একচেটিয়া ভাবে জয়ী হয়ে আসা আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফরুল্লাহ নির্বাচন করতে না পারায় তার স্ত্রী নিলুফার জাফর নির্বাচিত এমপি হন। নির্বাচনী সময়ে কাজী জাফরুল্লাহ এক প্রকার কোণঠাসা হয়ে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দিলে নিক্সন বলেন- তাকে চাপে রাখতেই জাফরুল্লাহ এই কৌশল এঁটেছেন।

আরো পড়ুনঃ ছাত্রনেতা নুরুল হক নূরের জীবনী

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য

২০২০ সালে, মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীকে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। ২০২০ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের ২০১ সদস্যের যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন তার ২৭ সদস্যের সভামন্ডলিতে তিনি ৮ নম্বরে আছেন।

মজিবুর রহমান চৌধুরী ‘পদ্মা সেতু দুর্নীতি’ কেলেঙ্কারিতে তার ভূমিকার জন্য ব্যপকভাবে সমালোচিত হন। SNC-লাভালিন চুক্তি পাওয়ার জন্য তাকে ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলাটি শুরু হওয়ার পরপরই, শেখ হাসিনা তার ভাগ্নে নিক্সন চৌধুরীকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ২০১৪ সালের বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষের পক্ষে প্রচারণা চালান।

বির্তক

নিক্সন চৌধুরী ফরিদপুর-৪-এ কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের হুমকি দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি চরভদ্রাসনের ইউএনওকে (UNO) ফোন করেন এবং তাকে গালিগালাজ করেন বলে জানা গেছে।
মজিবুর রহমান চৌধুরী বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, “সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নির্বাচনের আগের দিন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO), নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং স্থানীয় প্রশাসনকে হুমকি ও মানহানি করেছেন।”

এছাড়াও তিনি একটি রাজনৈতিক সমাবেশে ফরিদপুরের ডিসিকে ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে মানহানি করেন ও হুমকি দেন। নিক্সন চৌধুরী মৌখিকভাবে একজন নির্বাহী কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করার একটি অডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যদিও তিনি দাবি করেছেন যে এটি বানোয়াট।

নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য একটি মামলা দায়ের করেছে। চৌধুরীর আইনজীবীরা আগাম জামিন চেয়ে বাংলাদেশের হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেন। ১৮ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে তাকে আগাম জামিনের আবেদন করা হয় এবং ৮ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তাকে জামিন দেওয়া হয়।

সরক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা মজিবুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ আনলে নিক্সন চৌধুরী এই অভিযোগকে পাগলের প্রলাপ বলে আখ্যায়িত করেন।

আরো পড়ুনঃ সোহেল তাজের জীবনী

অবশেষে

মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী বর্তমান প্রজন্মের কাছে খুবই জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। নিক্সন চৌধুরী বাংলাদেশের রেমিটেন্স ফাইটারদের অধিকার আদায়ের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন এবং প্রবাসীদেরকেই ভিয়াইপি ট্যাগ দেওয়া উচিত বলে দাবী করেন। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ও প্রবাসীদের নেতা এই মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী।