You are currently viewing ছাত্রনেতা ভিপি নুরুল হক নুর এর জীবনী ও রাজনীতি
ভিপি নুর

ছাত্রনেতা ভিপি নুরুল হক নুর এর জীবনী ও রাজনীতি

সবাকে স্বাগত জানাচ্ছি আজকের বায়োগ্রাফি আর্টিকেলে। এই আর্টিকেলে আমরা যাকে নিয়ে কথা বলবো তিনি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর সাবেক সহ-সভাপতি বা ভিপি নুরুল হক নুর। সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে এই মহান ছাত্র-রাজনৈতিক নেতার জন্ম, শৈশব, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সহ নানান অজানা বিষয় সম্পর্কে জানবো। তাই ভিপি নুর এর জীবনী সম্পর্কে জানার যাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ রয়েছে তারা সম্পূর্ণ আর্টিকেলটা পড়ে নিতে পারেন।

ভিপি নুর এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

ভিপি নুরুল হক নুর ১৯৯১ সালে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চর বিশ্বাস ইউনিয়নের একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত্ব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ইদ্রিস হাওলাদার এবং মায়ের নাম নিলুফা বেগম। তার বাবা ছিলে একজন ব্যবসায়ী এবং ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে নুর হলেন দ্বিতীয়। নুরের জন্মের পাঁচ বছর পরে ১৯৯৬ সালে তার মা মারা যান।

তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন চর বিশ্বাস জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ২০০৭ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর গোলাম নবী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং ২০২১০ সালে সেখান থেকে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার জন্য ঢাকার উত্তরা হাই স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ২০১২ সালে এইচএসসি পাশ করে ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি ইংরেজিতে অনার্স শেষ করেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়াটা তার জন্য মোটেও সহজ ছিলো।

কারণ তিনি এসএসসি ও এইচএসসি কোনো পরীক্ষাতেই জিপিএ-৫ পাননি। তবুও অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় তিনি তার যোগ্যতার বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে একটা আসন জিতে নেন। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ছাত্র-রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। নুরুল হক নুর ২০১৬ সালে চরবিশ্বাস ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ, নেতা হাতেম মাস্টারের মেয়ে মারিয়া আক্তার লুনাকে বিয়ে করেন। এবং বর্তমানে তাদের একটি কণ্যা সন্তান রয়েছে।

 

ভিপি নুরুল হক নুর এর রাজনৈতিক জীবন

স্কুল জীবনে স্কুল কমিটির দপ্তর সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও নানারকম সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন। তবে তিনি খোলাখুলি ভাবে রাজনীতি শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে। ১৯৭২ সালে চালু হওয়া সরকারি বিভিন্ন চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি। এই আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি প্রথমবার আলোচনায় আসেন এবং হামলা-মামলা সহ বেশ কয়েকবার জেল-হাজতে যেতে হয়েছে তাকে।

এরপর আন্দোলনের মুখে পড়ে সরকার কোটা পদ্ধতির সংস্কার করতে বাধ্য হয়। এতে জয় হয় নুরুল হক নুর সহ আন্দোলনকারী সকল শিক্ষার্থীদের। ২০১৮ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন নুরুল হক নুর। তিনি ১১০৬২ টি ভোট পেয়ে এই আসনে নির্বাচিত হন। আর বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ হলো বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার ও অন্যান্য বৈষম্য দূরীকরণের উদ্দ্যেশ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন।

এছাড়াও ২০১৮ সালের জুলাইয়ের “নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলনেও সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি এবং সারা দেশাবসীর কাছে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবীকে তুলে ধরেছেন। এসব কার্যক্রম তাকে মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলে, শিক্ষার্থীরা তাকে ভরসা করতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের দাবী আদায়ের জন্য নানা সময়ে নানা রকম আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন তিনি, এজন্য ছাত্রলীগ নেতাদের আক্রমনের শিকার হতে হয় এমন কি জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয়েছে নুরুল হক নুরকে।

এভাবেই তিনি সবসময় ন্যায় ও সত্যের পথে বলীয়ান থেকেছেন, মিথ্যা ও অসত্যকে কখনো ভয় করেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের ডাকসু নির্বাচনে দুরবিত্তদের আক্রমের শিকার হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। এরপর হাসপাতালের বেডে থাকা অবস্থায় তিনি দলের বিজয়ী হবার কথা জানেন। এই নির্বাচন নিয়ে তিনি মোটেও খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না। নির্বাচনে এরকম অন্যায় কাজ তিনি কখনো কল্পণা করেননি এবং মানুষের বিশ্বাস উঠে গেছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে, এধরনের কথা বলেন ভিপি নুর।

রাজু ভাষ্কর্যে সমাবেশ কর্মসূচীর ডাক দেন ভিপি নুর

২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজু ভাষ্কর্যে সমাবেশ কর্মসূচীর ডাক দেন ভিপি নুর। আর এই সমাবেশে বাধা দিতে আসে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের অনেক নেতাকর্মীরা। এসময় ভিপি নুর ও শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের সংঘর্ষ তৈরি হয়। একপর্যায়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ মঞ্চের নেতা কর্মীরা ভিপি নুরুল হক নুর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে।

এই হামলায় ভিপি নুর সহ অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। এর দুই দিন পরে ২৪ ডিসেম্বর পুলিশ বাদী হয়ে ঢাকার শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করলে হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান শান্ত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত তূর্য।

ডাকসু নির্বাচন চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে প্রোভোস্টকে হয়রানি, লাঞ্চিত ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে নুর সহ দলের অনেকের অপর। এই ঘটনায় নুর সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এবং এই পর্যন্ত ভিপি নুরুল হক নুর বিভিন্ন আন্দোলনে ৭ বার হামলার শিকার ও আহত হয়েছেন। এছাড়াও নুরুল হক নুরকে নানা সময়ে নানা কারণে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তী বছরের ২১ সেপ্টেম্বর নুর সহ আরো সাত জনের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষনের অভিযোগ করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

এই মামলার বিরুদ্ধে শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে নুরু সহ তার দলের সদস্যরা। বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে সেখান থেকেই নুরকে গ্রেফতার করে থানায় আনা হয় এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পড়ে কয়েক ঘন্টা পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।এরকম নানাভাবে আলোচনায় আসেন ভিপি নুর। শুধু আলোচিতই হন নি বরং অনেকের কাছে সমালোচিতও হয়েছেন তিনি।

ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুর মিলে রাজনৈতিক দল গঠন

অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুর মিলে একটা রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন এবং ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবার ঢাকার পল্টনের একটি কার্যালয়ে দলটির নাম ঘোষণা করেন “বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ”। বর্তমানেও তিনি শিক্ষার্থী সহ দেশের সাধারন মানুষের অধিকার রক্ষায় নানারকম উদ্যোগ নিয়েছেন এবং অনবরত কাজ করে যাচ্ছেন। তরুণ এই ছাত্রনেতা অল্প বয়সী রাজনৈতিক জীবনে নানাভাবে হামলা মামলার স্বীকার হয়েছেন।

তারপরেও তিনি মোটেও দমে যাননি বরং আরো কঠোর হয়েছেন অন্যায়, শোষণ ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে। তাই তো তিনি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করে নিতে সফল হয়েছেন। অনেকবার সরকারের নানারকম অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে আলোচনায় এসেছেন। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশো, সংবাদ মাধ্যমে অনিয়ম, অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কথা বলেছেন তিনি। লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর অনুকরন হয়ে উঠেছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়া সহ বাস্তব জীবনেও ব্যাপক ভাইরাল এই জনপ্রিয় ছাত্রনেতা। মানুষের ইচ্ছে, দেশের সকল স্থানে এমন একজন রাজনৈতিক নেতার জন্ম হোক।

উপসংহার

এই ছিলো ডাকসু ভিপি, বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং জনপ্রিয় ছাত্ররাজনৈতিক নেতা ভিপি নুরুল হক নুর সম্পর্কে। এখানে হয়তো অনেক খুঁটিনাটি তথ্যই উল্লেখ নাও থাকতে পারে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সহ ওয়েবসাইট থেকে সঠিক তথ্যগুলো একত্র করে ভিপি নুর সম্পর্কে জানাতে। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণে সফল হয়েছে। এরপরে কার সম্পর্কে জানতে চান সেটা আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আমরা আপনাদের চাহিদামাফিক আর্টিকেল দিতে সবসময় চেষ্টা করি।

ভিপি নুরের সোসাল মিডিয়াঃ ফেইসবুক