You are currently viewing ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর জীবনী। গ্রামীন ব্যাংক ও নোবেল পুরস্কার
মুহাম্মদ ইউনূস

ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর জীবনী। গ্রামীন ব্যাংক ও নোবেল পুরস্কার

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ আমলে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪০ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম হাজী দুলা মিয়া সওদাগর । কাজ করতেন স্বর্ণকার হিসাবে।তার মাতার নাম ছিল সুফিয়া খাতুন। ১৯৪৪ সালে তাঁর পরিবার চট্টগ্রাম শহরে চলে আসে। ডক্টর ইউনুস এর বয়স যখন ১৫ বছর তখনই তিনি বয়েজ স্কাউটসে যোগদান করেন এবং সেখান থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়াসহ ইউরোপের আরো অনেক দেশে ভ্রমণ করার সুযোগ পান।

১৯৬৭ সালে ভেন্ডারবেল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সাথে দেখা হয় রুশ তরুনি ভেরা ফরস্টেনকোর সাথে। বেশ কিছুদিন পর ১৯৭০ সালে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জন্ম নেয় তাদের সন্তান মনিকা ইউনূসের। ১৯৭৯ সালে ঘটে বিবাহবিচ্ছেদ।  পরে আবার বিয়ে করেন আফরোজি ইউনুসকে। মুহাম্মদ ইউনূস ছিলেন দুই সন্তানের পিতা। ১৯৮৬ সালে তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় আরেক কন্যা দিনা আফরোজ ইউনূস।

এক নজরে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস

মূল নামঃ মুহাম্মদ ইউনূস
ডাকনামঃ ইউনূস
জন্ম সালঃ ১৯৪০ সালের ২৮ জুন
জন্ম স্থানঃ চট্টগ্রাম
পিতাঃ হাজী দুলা মিয়া সওদাগর
মাতাঃ সুফিয়া খাতুন
স্ত্রীঃ ডাঃ আফরোজী ইউনুস
সন্তানঃ দুই জন
ভাই; মুহাম্মদ ইব্রাহিম ও মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর
প্রথম বিদ্যালয়ঃ মহাজন ফকিরের স্কুল
প্রতিষ্ঠাতাঃ গ্রামীণ ব্যাংক
র্ধমঃ ইসলাম
জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এর শিক্ষা জীবন

ডক্টর ইউনুস চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় মেধা তালিকার ১৬ তম স্থান দখল করেন মোট ৩৯০০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে। এবং তারপর তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। তারপর ধীরে ধীরে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থেকেই নিজেকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত করে তোলেন। নাটকে অংশ নেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার পুরষ্কার পান। এ সময়ে তিনি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা এবং আজাদ পত্রিকায় কলাম লেখার কাজে নিজেকে যুক্ত করে তোলেন।  তারপরে ১৯৫৭ সালের মুহাম্মদ ইউনুস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই তিনি বিএ এবং এমএ সম্পন্ন করে থাকেন।

বিএ পাশ করেন ১৯৬০ সালে। আর এমএ শেষ করেন এক বছরের মধ্যে ১৯৬১ সালে। তারপরে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস ১৯৬১ সালেই চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। কেবল শিক্ষকতা করেই তিনি থেমে থাকেননি। একইসাথে চালু করেন একটি প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি। ১৯৬৫ সালের দিকে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। বাংলাদেশ যখন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লো তখন তিনি বিদেশে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন করার জন্য সেখানে চেষ্টা করতে থাকেন। তারপরে যুদ্ধশেষে ১৯৭২ সালে তিনি আবার দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। পরে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পান এবং ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে বহাল থাকেন।

মুহাম্মদ ইউনূস

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এর অর্জন

১৯৭৪ সালে যখন বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয় তখন ডঃ ইউনুসও দারিদ্র্যের মধ্যে সংগ্রাম শুরু করেন। তিনি ওই সময়ে বুঝতে পারেন যে স্বল্প পরিমাণে ঋণ দরিদ্র মানুষের জীবন যাপনের মান উন্নয়ন করতে অনেক সহায়তা করতে পারে। আর তিনি তারই পরিপ্রেক্ষিতে গবেষণার লক্ষ্যে গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্পটি চালু করেন। তারপর ১৯৭৪ সালে মোহাম্মদ ডক্টর ইউনুস তেভাগা খামার প্রতিষ্ঠা করেন যা সাধারণত সেই সময় সরকার প্যাকেজ প্রোগ্রামের আওতায় চলে আসে।

তিনি সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল গরীব এবং দরিদ্র যারা তাদেরকে স্বল্প ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। ১৯৮৩ সালে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা পায় এক সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে। এ সময় দেশে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। গ্রামীণ ব্যাংকের পথচলা শুরু হয় মাত্র ৩ কোটি টাকা নিয়ে। এ টাকার বেশিরভাগই ছিল সরকারের। ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকাই ছিল সরকারের। আর ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ছিল ঋণ গ্রহীতাদের। ড ইউনুস নোবেল পান ২০০৬ সালে।

তবে অর্থনীতিতে তাকে নোবেল দেওয়ার বদলে তাকে নোবেল দেওয়া হয় শান্তিতে। পৃথিবীর দরিদ্র অসহায় মানুষকে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে শান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্ঠাই তাকে নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার দাবিদার করে তোলে। নোবেল থেকে প্রাপ্র অর্থ আর ব্যাংকের প্রচেষ্ঠা থেকে ২০১০ সালে গ্রামীন ব্যাংকের মোট সম্পদ অনেক বেড়ে যায়। যেটি জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবে, সেটির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৫৩৯ কোটি ৬৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা প্রায়।

আস্তে আস্তে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিধি শাখা অনেক বৃদ্ধি পায় এবং তখন গরিবদের রক্ষা করার জন্য ব্যাংক অন্যান্য পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। গরিবের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক সেই সময়ে যা কাজ করেছে সেই কাজগুলো অন্যান্য দেশকেও অনেক উদ্ভুদ্ধ করেছে। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গরিবের জীবনযাত্রা উন্নয়নের রূপকার এ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট ৬২ টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।

মুহাম্মদ ইউনূসের জীবনে অনেক প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থের নামঃ
Three Farmers of Jobra
Grameen Bank, as I See it

তিনি এমন কিছু প্রকাশিত গ্রন্থের জন্য অনেকের কাছে বিখ্যাত হয়ে আছেন। ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের উল্লেখযোগ্য কিছু পুরস্কার এর মধ্যে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার,আন্তর্জাতিক গান্ধী শান্তি পুরস্কার, নোবেল শান্তি পুরস্কার অন্যতম।

ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের গুরুত্বপূর্ণ অবদান

ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস মূলত ছিলেন একজন অর্থনীতিবিদ। তিনি ছাত্র জীবনে যখন স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করতে যান তখন আমাদের দেশে যুদ্ধ বিরাজমান অবস্থা ছিল। তখন তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার জন্য সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন সেখান থেকেই। বিদেশে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তিনি সেখানে পালন করেন।

ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস হাজার ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ খুবই কাছ থেকে দেখেছিলেন তাই তিনি সেই সময়ে দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।  কিছুদিন পর গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্পটি শুরু করেন এবং পরবর্তীতে হাজার ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটি রুপায়ন হয়ে থাকে। তারপরে তাদের সেই ব্যাংক থেকে বিভিন্ন দরিদ্র মানুষদের কে স্বল্প ঋণ দেওয়া শুরু হয় এবং যার ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে পরবর্তীতে সক্ষম হয়।

তাছাড়া তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে গিয়েছেন সকল সময়। তার এসব উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তিনি দেশে-বিদেশে সব জায়গাতেই পুরস্কৃত হয়েছেন।
তাঁর কাজ এতটাই প্রভাবশালী আর কার্যকর, ২০২১ সালে এসে, গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাত্র ৪০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর ৪২ টি দেশের ১৩২ টি প্রতিষ্টান গ্রামীন ব্যাংকের দেখানো পথে অসহায় দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে। ৩৩ টি দেশের ৮৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছে ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার। ২০১২ সালের অক্টোবরে তিনি চ্যান্সেলর হন স্কটোল্যান্ডের গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান ইউনিভার্সিটির। ২০১০ সালেই এ বিশ্ববিদ্যালয়টি গঠন করে ইউনূস চেয়ার।

তবে বাইরের দেশে তাঁর এত প্রভাব থাকলেও নিজের দেশে তিনি বেশ কিছুটা অবহেলিত বলা চলে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই তিনি ছিলেন গ্রামীন ব্যাংকের এমডি বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০১১ সালে তাঁর পরিচালক পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাকে অব্যহতি দেওয়া হয় সে বছরই। এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গেলে আদালতও তাঁর পক্ষে রায় দেয় নি। কত মানুষকে স্বাবলম্বী করেছেন তাঁর দিকে না তাকিয়ে কিছু ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে মডেল বানিয়ে আজ তাকে বলা হচ্ছে গরীবের রক্তচোষা।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এর নোবেলসহ অন্যান্য পুরষ্কার

মোহাম্মদ ইউনুস ১৯৭৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার সহ মোট ১৪৫ টি পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬০+ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পান। তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় পুরস্কার বা সম্মাননা হল নোবেল বিজয়। তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে বাংলাদেশকে গর্বিত করেন। তাছাড়া বড় পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার, ২০০০ সালে আন্তর্জাতিক গান্ধি শান্তি পুরস্কার সহ আরো অনেক।