You are currently viewing ওবায়দুল কাদের এর জীবনী ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার
ওবায়দুল কাদের

ওবায়দুল কাদের এর জীবনী ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার

কেমন আছেন সকলে? আশা রাখি, সুস্থ্য আছেন। আজকে বাংলাদেশের অন্যতম একজন সফল রাজনীতিবিদকে নিয়ে কথা বলবো এই ব্লগে। তিনি হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বাংলাদেশের অন্যতম উদার, নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ ওবায়দুল কাদেরের জন্ম ১৯৫২ সালের  ১ জানুয়ারি নোয়াখালি জেলার কোম্পানিগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে। তাঁর ভাই বোনের সংখ্যা ৯ জন। তিন ভাই আর ৬ বোনের মধ্যে তাঁর শৈশব কাটে নোয়াখালি জেলাতেই। বাবা মোশারফ হোসেন প্রথমে সরকারি চাকুরি করলেও সরকারি চাকুরির প্রতি বিরক্তির কারণে চাকুরি ছেড়ে যোগদান করেন শিক্ষকতায়, বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয়ে। মোশারফ হোসেন কলকাতাঁর ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী ছিলেন।

ওবায়দুল কাদের এর শিক্ষাজীবন

তাঁর মাতাঁর নাম ফজিলাতুনেছা। এক ভাই আব্দুল কাদের মির্জাও হলেন একজন উল্লেখযোগ্য রাজনীতিবিদ। বর্তমানে তিনি কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার পৌর মেয়র হিসাবে কর্মরত আছেন। সর্বশেষ ১৬ জানুয়ারি ২০২১ সালে নির্বাচনে জয় লাভ করে টানা তৃতীয়বারের মত মেয়র হন। ওবায়দুল কাদের বাবার বিদ্যালয় থেকেই মাধমিক পাশ করেন প্রথম বিভাগ পেয়ে। তাঁরপর ভর্তি হন নোয়াখালি সরকারি কলেজে। মেধাতালিকায় স্থান পেয়ে উচ্চমাধমিক পাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হন। রাজনীতি শুরু করেন নোয়াখালি সরকারি কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়েই।

ওবায়দুল কাদের এর রাজনৈতিক জীবন

১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশ নেন। অংশ নেন ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলন আর ১১ দফার দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনেও। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন মুজিব বাহিনীতে (বি.এল.এফ)। অত্যন্ত দক্ষ এ নেতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিব বাহিনীর কোম্পানিগঞ্জ থানা শাখার অধিনায়ক ছিলেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যূর পর তাকে কারাবন্দি করা হয় আড়াই বছরের জন্য। কারাবন্দী থাকাকালীন সময়েই তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পর পর ২ বছরের জন্য দ্বায়িত্ব পালন করেন।  ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বই  Bangladesh: A Revolution Betrayed। বইটি প্রকাশিত হয় কলকাতাঁর মনিষা পাবলিশার্স থেকে। স্পষ্টবাদী এ নেতা ১৯৯১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মোট ৬ বার নোয়াখালি-৫ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। অংশ নেন পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম, একাদশ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ১৯৯১ সালে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ছিলেন মওদুদ আহমদ। মওদুদ আহমেদ এ সময় জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনে মনোনয়ন পান এবং জয়লাভ করেন। হেরে গেলেও মনোবল হারাননি দৃঢ় প্রত্যয়ী এ নেতা। পড়ে গেলে ঘুড়ে দাড়ানোর সাহস দেখিয়েছেন। ১৯৯৬ সালে নোয়াখালি ৫ আসনে আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন এবং জয় লাভ করেন।

সফল ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের

ওবায়দুল কাদের ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। এই দ্বায়িত্বে বহাল ছিলেন ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত। তাঁর দ্বায়িত্ব পালন কালেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আই.সি.সি ট্রফি অর্জন করে। অর্জন করে টেস্ট খেলার মর্যাদাও। ফুটবলের ক্ষেত্রেও তাঁর রয়েছে কৃতিত্ত্ব অনেক। তাঁর দ্বায়িত্ব পালনকালেই বাংলাদেশ ফুটবল দল সাফ গেমসে সোনা অর্জন করে। আর তিনি হয়ে উঠেন শ্রেষ্ঠ ক্রীড়া সংগঠক। তাঁর একান্ত আগ্রহেই বি.কে.এস.পি হয়ে উঠে এশিয়ার অন্যতম ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে বাংলাদেশের ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, ভলিবল, শুটিংএর মত ক্রীড়ার। যুবদের উন্নয়নে ৬৪ জেলায় কারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্র স্থাপন করেন। ৪৫ জেলায় প্রতিষ্ঠা করেন যুব প্রশিক্ষন কমপ্লেক্স। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন ১৬ লক্ষ যুবক- যুবতীর। সংস্কৃতিমনা এই নেতা দ্বায়িত্ব পালনকালে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাংলা একাডেমি আর শিল্পকলা একাডেমিকে নিয়ে গঠন করেন সোনার বাংলা সাংস্কৃতিক বলয় প্রকল্প। লালন স্মৃতি কমপ্লেক্স, রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র, নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রের ব্যপক সংস্কারে পদক্ষেপ নেন প্রজ্ঞাবান এ নেতা।

বাংলাদশ আওয়ামীলীগ এর বিভিন্ন পদে ওবায়দুল কাদের

ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মওদুদ আহমদ মনোনয়ন পান বিএনপি থেকে। মওদুদ আহমদ এবার জয়লাভ করেন। মওদুদ আহমেদ অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। ওবায়দুল কাদের ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত এ দ্বায়িত্ব আলন করেন নিষ্ঠার সঙ্গে। বেশ অনেকবারই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। এসময় হারান ২৪ জন সহকর্মীকে।

২০০৭ সালের ৯ মার্চ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাঁর মাঝে গ্রেফতাঁর হন। কারাগারে কাটান ১৭ মাস ২৬ দিন। ২০০৮ সালের ৫ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান। তবে কারাগারে বসেই লিখে ফেলেন “অনুস্মৃতিঃ যে কথা বলা হয়নি” গ্রন্থটি। একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বায়িত্ব পান তথ্য মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসাবে। ২০০৯ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হিসাবে।

২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর যোগাযোগ মন্ত্রী হিসাবে দ্বায়িত্ব শুরু করেন তিনি। ২০১৪-২০১৮ সালেও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সন্মেলনে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের জন্য সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর ২য় বারের মত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মন্ত্রীসভা গঠন করে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালে মোট চারবার। এই চারবারই ওবায়দুল কাদের মন্ত্রীসভায় স্থান করে নিয়ে হয়ে উঠেন অনন্য। কেবল ২০০৮ সালে গঠিত মন্ত্রী সভায় প্রথম দিকে মন্ত্রী সভায় জায়গা পাননি তিনি। পরে সরকারের মেয়াদের মাঝামাঝি এসে যোগাযোগ মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পান। ২০১৫ সালের দিকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ভেঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেল মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। এসময় তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্ব পান।

২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামা থেকে দেখা যায় তাঁর পেশা ছিল সাংবাদিকতা। জীবনের বেশ বড় সময় ধরে সাংবাদিকতা করেছেন ওবায়দুল কাদের। ছিলেন দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক। এসময় কবি নির্মলেন্দু গুণও তাঁর সহকর্মী ছিলেন।  সাংবাদিকতা থেকে তাঁর আয় ছিল এক লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর আয় ছিল এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর পেশা ছিল মন্ত্রীত্ব , বই আর পত্রিকায় লেখালেখি করা। বাড়তি আয় হতো বাড়িভাড়া দিয়ে।  তাঁর বাৎসরিক আয় ৩১,১৭,৬৫১ টাকা। ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে তাঁর ব্যাংকে জমার পরিমান ছিল ৪,৮৮,০০০ টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩,৬০,০০০ টাকায়। ২০০৮ সালে তাঁর কোনো গাড়ি ছিলনা। ২০১৮ সালে ৭৭,৫০,০০০ টাকা মূল্যের গাড়ি ছিল।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ওবায়দুল কাদেরের নামে মামলা ছিল ২৪ টি। বর্তমানে তাঁর নামে কোনো মামলা নেই।

ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী

ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর নাম ইশারাতুন্নেসা। পেশায় তিনি আইনজীবী। রাজনৈতিক পথচলায় তাঁর সঙ্গী হতে গিয়ে নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরোতে হয়েছে তাঁর স্ত্রীকেও। ২০০৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর কর ফাকি দেওয়ার যড়যন্ত্রমূলক মামলায় ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইশারাতুন্নেসাকে ৮ বছরের কারাদন্ডাদেশ দেয় আদালত। এসময় মগ বাজার আর সেগুনবাগিচায় থাকা দুটি ফ্ল্যাটও বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওবায়দুল কাদেরের সাংবাদিক জীবনও ছিল বেশ বৈচিত্রে ভরা। জীবনে অসংখ্য সম্পাদকীয়- উপসম্পাদকীয় আর কলাম লিখেছেন। ওবায়দুল কাদের এ পর্যন্ত লিখেছেন মোট ৯টি বই। বইগুলো হল Bangladesh: A Revolution Betrayed, বাংলাদেশের হৃদয় হতে, পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু, এই বিজয়ের মুকুট কোথায়, তিন সমুদ্রের দেশে, মেঘে মেঘে অনেক বেলা, রচনা সমগ্র, কারাগারে লেখা অনুস্মৃতি: যে কথা বলা হয়নি, নির্বাচিত কলাম।

অবশেষে

এই ছিলো সাহসী, নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক নেতা ওবায়দুল কাদেরের প্রাথমিক, শৈশব, শিক্ষা ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে। পরবর্তীতে আপনারা কোন মহান ব্যক্তির সম্পর্কে জানতে চান তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা অতিশত্তর তাঁর সম্পর্কে লিখতে বসবো।