You are currently viewing বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ- শেখ মুজিবুর রহমান
বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ- শেখ মুজিবুর রহমান

Table of Contents

বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধ

সুজলা সুফলা অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা এই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্রে পূর্ণময়ী হয়ে আছে। এই পূর্ণময়ী মায়ের মত আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে আমাদেরকে। পরিচিত অপরিচিত পর্যটক স্থান, মসজিদ, সমুদ্র, পাহাড় আর অরণ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সৌন্দর্য মণ্ডিত হয়ে আছে। যেগুলো দেশি- বিদেশি পর্যটকদের মুগ্ধ করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। প্রত্যেকটি স্থান বা অঞ্চল স্বতন্ত্রভাবে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। এই ভূমির সৌন্দর্যে প্রাণ হাসে মন কাড়ে।

★ বাংলাদেশের পরিচিতি

দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের উত্তর এবং পূর্বে অবস্থিত এই রূপসী বাংলা। হিমালয় পর্বতের দক্ষিণে এবং বঙ্গোপসাগরের উত্তরে অবস্থিত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাথে অবস্থিত ২টি সীমানার একটি হলো ভারত আর অন্যটি মায়ানমার। বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং মেঘালয়। পূর্বে ত্রিপুরা, আসাম, মিজোরাম এবং মায়ানমার।

বাংলাদেশের মধ্যখান দিয়ে অতিক্রম করে গেছে কর্কটক্রান্তি রেখা। বাংলাদেশের অবস্থান ২০ডিগ্রী ৩৪’ উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬ডিগ্রী ৩৮’ মধ্যে এবং ৮৮ডিগ্রী ০১’ পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে ৯২ডিগ্রী ৪১’ পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা পর্যন্ত।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা :

সার্বভৌম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার আয়তন ১৪৬৩.৬০ বর্গ কি.মি। এই অঞ্চলটি পাঁচবার বাংলার রাজধানী হয়। ১৬১০ সালে প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন সুবাদার ইসলাম খান যখন এটি সুবা বাংলা নামে পরিচিত। ৪র্থ এবং ৫ম বারে রাজধানী হয় ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সময় এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সময়, এটির স্থাপনকারী হলেন পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সরকার।

ব্রিটিশ আমল থেকেই এটির ইংরেজি বানান Dhacca লেখা হয়ে থাকলেও এটির বর্তমান নাম হলো Dhaka। ১৯৮২ সালে সামরিক প্রশাসক লে. জে. এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে এটির ইংরেজি নামের শব্দ পরিবর্তন করা হয়। যেটি ধ্বনিতাত্ত্বিক দিক থেকে বাংলা উচ্চারণের নিকটবর্তী।

★ বাংলাদেশের ইতিহাস

বাংলা শব্দের উৎস :

বেঙ্গল অথবা বাংলা শব্দের উৎপত্তি বা আদি উৎস সম্পর্কে জানা না গেলেও ধারণা করা হয়ে থাকে যে সুলতানি আমলের বাঙ্গালা শব্দ থেকেই এই নামটির আগমন। ঐতিহাসিকদের মতে, বাং নামক দ্রাবিড়ীয় ভাষী উপজাতির আগমন ঘটে, যারা খৃষ্টপূর্ব ১০০০ বছর আগে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলো। অন্য তত্ত্ব বা ধারণা অনুযায়ী নূহ (আঃ) এর বংশধরদের মধ্যকার একজনের নাম বঙ্গ আর সে বঙ্গের উত্তরসূরিদের বসবাসের স্থানই বঙ্গ নামে পরিচিত।

ইতিহাসের ২টি উপাদানের লিখিত উপাদানের মধ্যে দলীলপত্র, বৈদেশিক বিবরণ এবং সাহিত্য রয়েছে। সাহিত্য তথা ঐতরেয় আরণ্যকে সর্ব প্রথম বঙ্গের আলোচনা পাওয়া যায়। আইন-ই আকবরি তেও দেশবাচক বাংলা শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। আর বাংলাদেশ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায় বিংশ শতাব্দীর দিকে। কাজী নজরুল ইসলাম এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত গান এবং বিভিন্ন সাহিত্য থেকেই প্রথম বাংলাদেশ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের ইতিহাস :

দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা লাভ করার পর এটি একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিগণিত হয়েছে এবং বিশ্ব দরবারের মানচিত্রে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। এই দেশটির সভ্যতার ইতিহাস ক্যাথলিক যুগ থেকেই ক্রমাগত। এই অঞ্চলের ইতিহাস হিসেবে হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর প্রতিযোগিতার ইতিহাস লক্ষ্যণীয়। ৭ম শতাব্দীতে এ স্থাবে ইসলামের আগমন হয়। বখতিয়ার খলজির নেতৃত্বে সামরিক বিজয়ের পাশাপাশি সুন্নি দাঈদের নিরলস চেষ্টায় এদেশে ইসলাম ধর্ম নিজ স্থান করে নেয়।

 ইসলাম ধর্ম নিজ স্থান করার পাশাপাশি এটি পাকাপোক্ত ভাবে মসজিদ মাদ্রসা দ্বারা সমৃদ্ধ হতে থাকে। চতুর্দশ শতাব্দীর দিকে যখন ইউরোপীয়রা বাংলাকে ব্যবসা বানিজ্যের জন্য সবচেয়ে উত্তম দেশ বলে উল্লেখ করেন, তখন এই অঞ্চল সুলতান ইলিয়াস শাহ দ্বারা শাসিত হয়ে আসছিলো। আর পরবর্তীতে এই শাহী বাংলা মুঘলদের অধীনে আসলে মুঘল সাম্রাজ্য সবচেয়ে ধনী সাম্রাজ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। তখন মুঘল সাম্রাজ্যের জিডিপি সমগ্র পশ্চিম ইউরোপ সাম্রাজ্য থেকেও বেশি ছিলো। আর সে সময়েই বাংলার রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা এক মিলিয়নের উপর পৌঁছে যায়।

মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চল নবাবদের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে পরিগণিত হয়। নবাব আলিবর্দি কর্তৃক এ অঞ্চলের শাসনভার তার নাতি সিরাজ উদ্দৌলার কাছে পৌঁছায়। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের মাধ্যমে এটি ইংরেজদের আয়ত্বাদিন হয়ে পড়ে। এই বাংলা ব্রিটেনের শিল্পবিপ্লবের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়। এতে করে নিজের শিল্প ধ্বংস হয় আর বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারতের বিভক্তের কারণে পূর্ব পাকিস্তান তথা আধুনিক বাংলাদেশের সীমানা প্রতিষ্ঠাতা লাভ করে। পুর্ব বাংলা তথা ভারত পাকিস্তান বিভক্তের পরের পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ভারত ভাগের পর এই দুই অঞ্চলের মানুষ এবং সবকিছুর মধ্যেই ছিলো আকাশ পাতাল ব্যবধান। আর সেসব প্রার্থক্যকে কেন্দ্র করেই দুই পাকিস্তানের রাজনৈতিক জীবনে আবির্ভাবের সূচনা। প্রার্থক্যগুলোর মধ্যে ভাষাগত প্রার্থক্য ছিলো উল্লেখযোগ্য। পূর্ব পাকিস্তানি মানুষদের মাতৃভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবী ভাষা আন্দোলনের প্রধান বিষয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবৃন্দ এই আন্দোলনে যোগ দেয়। আর সেদিন বহু ছাত্র মারা যায় পুলিশের গুলিতে। আর সে কারণে এটি চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

আর ১৯৭১ সালে মার্চের স্বাধীনতার যুদ্ধের ঘোষণার ফলে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সে যুদ্ধে বিজয়ী বেশে বাংলা পায় এক শান্তির স্বাধীনতা, ভাষার স্বাধীনতা বাক স্বাধীনতা। আর যুদ্ধের পর নতুন দেশটি নানা সমস্যায় জর্জরিত হতে থাকে। ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কারণে এটির শান্তি স্থাপিত হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অগ্রগতি বৃদ্ধি পায়। অবশেষে যুদ্ধে বিধ্বস্ত এই বাংলা দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের অর্থনৈতিক শক্তির দ্বিতীয় এবং শীর্ষ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়।

★ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ

১৯৭০ থেকে ১৯৭১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে পাকিস্তান সরকার সাংবিধানিক প্রশ্নে আওয়ামীলীগ এর সাথে আলাপ আলোচনায় বসে। প্রদেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা এবং জাতীয় সরকার গঠন করা হয়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করলে এতে করে পূর্ব-পাকিস্তানিরা বিক্ষোভ শুরু করে। স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের এক ছাত্র নেতা এক নতুন পতাকা উত্থাপন করেন ২মার্চ ১৯৭১ সালে। যা আমাদেরই জাতীয় পতাকা সবুজের মধ্যখানে লাল বৃত্ত।

পল্টন ময়দানে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করার পর ৭মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক সমাবেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের সম্পর্কে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন। আর জনগণকে প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়ে থাকে। সে পর্যন্ত ও তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করেননি। ৭ মার্চের ভাষণকে এই যুদ্ধের মূলমন্ত্র হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আর সে ভাষণের সারসংক্ষেপ হলো – এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।

যুদ্ধ :

২৬ ই মার্চের প্রথমে শেখ মুজিবকে কে গ্রেফতার করা হলে রাজনৈতিক নেতারা ছত্রভঙ্গ হয় পড়েন। কিন্তু শেখ মুজিব গ্রেফতার হওয়ার আগেই সাক্ষরিত নোট পাঠান বেতার কেন্দ্রে। যে নোট টি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র নামেও পরিচিত। এই ঘোষণাটি পত্রটি বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয়। আর্মি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান রেডিও স্টেশন দখল করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করে থাকেন। সামরিক উদ্দেশ্যে দেশকে ১১সেক্টরে ভাগ করা হয়। আঞ্চলিক বাহিনী গুলো আরো ৩টি বিশেষ বাহিনী গঠন করে থাকে। এই বাহিনীর নাম মূলত তাদের কমান্ড দের নামের থেকে নেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- জেড ফোর্স, অ্যান্ড ফোর্স এবং কে ফোর্স।

পূর্ব পাকিস্তানের উপর ভারত ছিলো সহানুভূতিশীল ১৯৭১ সালেএ যুদ্ধের ব্যাপারে। ৩রা ডিসেম্বরে ভারত পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। দুই সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে এক বিধ্বংসী যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে থাকে। আর সে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষে বিজয়ী হয় পূর্ব পাকিস্তান। ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে জেনারেল এ. কে নিয়াজী ভারত ও বাংলাদেশের মিত্রবাহিনীর নিকটে আত্মসমর্পণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর ইতিহাসে পাকিস্তানই একমাত্র দেশ, যে দেশের নিকটে পশ্চিম পাকিস্তান ৯০ হাজারের ও বেশি সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।

★ এক নজরে বাংলাদেশ বৃত্তান্ত :

সাংবিধানিক নাম : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।

সঙ্গীত : আমার সোনার বাংলা ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
জাতীয় রণ-সঙ্গীত : নতুনের গান ( কাজী নজরুল ইসলাম)

সরকার : সংসদীয় প্রজাতন্ত্র।
রাষ্ট্রপতি : আব্দুল হামিদ
প্রধানমন্ত্রী : শেখ হাসিনা
সংসদের স্পিকার। : শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধান বিচারপতি : সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
আইন সভা : জাতীয় সংসদ।
সাপ্তাহিক ছুটি : শুক্রবার, শনিবার।
আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোড : ৮৮০

পাকিস্তান ও স্বাধীনতা অর্জন
ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত : ১৯৪৭ সাল।
পূর্ব পাকিস্তান। : ১৯৫৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা : ১৯৭১, ১৬ ডিসেম্বর।
বিজয় দিবস : ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১।
সংবিধান : ১৯৭২

পর্যটন : ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, কুয়াকাটা, সুন্দরবন এবং কুমিল্লা।
বিমানবন্দর : ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর, কক্সবাজার।

তথ্য প্রযুক্তি
জাতীয় ডোমেইন। : bd
মোবাইল অনুপ্রবেশ : জনসংখ্যার ৮০%
মোবাইল ব্যবহারকারী : ১২কোটি ৮৩ লক্ষ।
ইন্টারনেট অনুপ্রবেশ : ৬.৬৭ কোটি।

জনগণ : ১৬.১৭ কোটি( পরিসংখ্যান ব্যুরো বাংলাদেশ)
নারী : ৮.০৭ কোটি
পুরুষ : ৮.১০ কোটি।
জাতীয় ভাষা : বাংলা
বাংলাভাষী জনসংখ্যা : ৯৫%
অন্যান্যভাষী জনসংখ্যা : ০৫%

জাতীয় ধর্ম : ইসলাম।
মুসলিম জনসংখ্যা : ৮৬.৬%
হিন্দু জনসংখ্যা : ১২.১%
খ্রিষ্টান জনসংখ্যা : ০.৪%
অন্যান্য ধর্মের জনসংখ্যা : ০.৩%

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। : ১.৩৭%
জন্মহার : হাজারে ১৮.৮%
মৃত্যু হার : হাজারে ৫.১%
জাতিগোষ্ঠী :
বাঙ্গালি : ৯৮%
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী : ২%
নৃ-গোষ্ঠী সমূহ। : চাকমা, মারমা, সাওতাল, গারো, মনিপুরী ইত্যাদি।
সীমানা : উত্তরে- ভারত, পশ্চিমে – ভারত, পূর্বে -ভারত, দক্ষিণা- বঙ্গোপসাগর
রাজধানী : ঢাকা
প্রধান শিল্প : পোশাক, চামড়া, পাট, শিল্প, চা, সিরামিক, সিমেন্ট ইত্যাদি।
আমদানি : গম, সার, পেট্রোলিয়াম , তুলা, খাবার ইত্যাদি।
বাংলাদেশী মুদ্রা : টাকা- ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০, ১০০০

জলবায়ু : উপ- ক্রান্তীয় মৌসুমি বায়ু।
গড় তাপমাত্রা : শীতকালে ১১ডিগ্রী থেকে ২০ ডিগ্রী সি।
বৃষ্টিপাত : ১১০০- ৩৪০০ মিমি.
আদ্রতা : সর্বোচ্চ হলো ৯৯% আর সর্বনিম্ন – ৩৬ %

অর্থনীতি :
মাথাপিছু আয় : ১,৬০২$
জিডিপি : ৭.২৪
দারিদ্রের হার। : ২৩.৫%
ফসল : ধান, পাট, চা, গম, ডাল, সরিষা, সবজি ইত্যাদি।

★ বাংলাদেশের ভু-প্রকৃতি এবং সীমানা

বাংলাদেশ হলো পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। এটি সামান্য পাহাড়ি অঞ্চল, সীমিত উঁচু আর নদীবিধৌত সমভূমি নিয়ে গঠিত। ভুপ্রকৃতি নিচু ও সমতল। জলবায়ুর উপর স্তরে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অনেক বেশি থাকে। ঋতুর আবহমানে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অবস্থার পরিবর্তন দেখা যায়, কখনো শীত আবার কখনো গরম উপলদ্ধি হয়। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি , বন্যা জালোচ্ছ্বাস মানুষের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এ অঞ্চল পলল গঠিত আদ্র অঞ্চল। এ অঞ্চলের উত্তর এবং পশ্চিম অংশ সামান্য উঁচুভূমি ছাড়া পুরো বাংলাদেশ নদীবিধৌত সমভূমি। 

দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি বড় নদীর অববাহিকায় এই অঞ্চল অবস্থিত। আর ভুপ্রকৃতি হলো নিচু সমভূমি। এই অঞ্চলের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং মেঘালয় অবস্থিত। পশ্চিমে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ আর পূর্বে আছে ত্রিপুরা, আসাম এবং মিয়ানমার। বঙ্গোপসাগর এ দেশের দক্ষিণে অবস্থিত। ভারত সীমানার দৈর্ঘ্য ৪০৫৩ অন্যদিকে মায়ানমারের হলো ১৯৩ কি.মি। সমুদ্র এলাকা হলো ১২ নটিক্যাল মাইল।

★ বাংলাদেশের সম্পদ

বাংলাদেশ তার সম্পদ নিয়ে বিশ্ব দরবারে শীর্ষস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক অনেক সম্পদের মধ্যে এমন কিছু সম্পদ আছে যার জন্য রপ্তানির মাধ্যমে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে আছে। সে সব সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলো-

কৃষি মন্ত্রণালয় :

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, দেশের উৎপাদনের মধ্যে কৃষিখাতের অবদান কম নয়। তবে বাংলাদেশের হাজার একর জমি কৃষি ছাড়াও অন্য খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর সেজন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন দেশের কাছে কৃষি জমি ইজারা চেয়েছে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট ঢাকায় অবস্থিত। পানির অভাবে যেসব এলাকায় উৎপাদিত পাট পচানোর সমস্যা হতো সেসব কৃষকদের জন্য বিজ্ঞানীরা রিবন রেটিং পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে।

ভূমি মন্ত্রণালয় :

ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ প্রবর্তনের মাধ্যমে জমির মালিকদেরকে বীজ, সার এবং সেচ এর খরচাদি সমান ভাবে ভাগ করা এবং উৎপাদিত ফসল ভাগের বিধান দেওয়া হয়েছে।

খাদ্যশস্য :

বাংলাদেশের ৮০% জমিতে খাদ্যশস্যের উৎপাদন হয় আর তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য খাদ্যশস্য হলো – ধান, গম, ভুট্টা, ডাল ইত্যাদি। ধান হলো প্রধান খাদ্যশস্য। এটির উৎপাদন ও বেশি হয় বাংলাদেশে। সময়ের ভিত্তিতে ধান ৩রকমের হয়ে থাকে। আউশ, আমন এবং বোরো। প্রধান উৎপাদিত শস্যের মধ্যে বোরো অন্যতম। এটি শীতকালের ফসল হওয়াতে এটির চাষ নিম্ন জমিতে হয়ে থাকে।

অর্থকরী ফসল :

যে সকল ফসল রপ্তানির মাধ্যমে দেশে টাকা আসে সেসকল ফসল কে অর্থকরী ফসল ধরা হয়ে থাকে। আর সেসব অর্থকরী ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ফসল হলো- পাট, চা, আখ, তামাক, রেশম, রাবার ইত্যাদি।
পাট হলো বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধান অর্থকরী ফসলের মধ্যে একটি। পৃথিবীর একটি প্রায় ৩ভাগের এক ভাগ পাটই বাংলাদেশ থেকেই উৎপন্ন হয়। পাটের রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় বলে এটিকে সোনালি আঁশ ও বলা হয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ :

বাংলাদেশের জলজ সম্পদের মধ্যে মাছ এবং পানি অন্যতম। মৎস্য আইন অনুযায়ী মৎস্য হল কোমলাস্থি ও অস্থিবিশিষ্ট মাছ এবং অন্যান্য খাবার উপযোগি ক্রাসটেসিয়ান, উভচর, ঝিনুক, শামুক ইত্যাদিকে বুঝিয়ে থাকে। ৮০ এর দশক থেকেই বাগদা চিংড়ি রপ্তানি হয়ে আসছে। আর এটি রপ্তানির মাধ্যমে এক বিরাট বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়ে থাকে। প্রাণি সম্পদের মধ্যে গরু, ছাগল এবং মুরগি উল্লেখযোগ্য।

খনিজ সম্পদ:

গ্যাস, খনিজ তেল, কয়লা, চুনাপাথর, চীনামাটি, কাচ বালি এবং সৈকত বালি খনিজ সম্পদ হলেও প্রধান খনিজ সম্পদ হল গ্যাস। বাংলাদেশে প্রায় ৩০ টি গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। ১৯৫৫ সালে বার্মা কোম্পানি প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে আর সেখান থেকেই সর্বপ্রথম ১৯৫৭ সালে গ্যাস উত্তোলন করা হয়ে থাকে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ গ্যাস উত্তোলন করা হয়ে থাকে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে।

বস্ত্র শিল্প :

বস্ত্রশিল্পের নাম আসলেই যেটি মাথায় আসে তার নাম হলো ঢাকাই মসলিন। এটির খ্যাতি বিশ্বব্যাপী। তাছাড়া জামদানির খ্যাতির এবং চাহিদার ও অভাব নাই। তারপর আসে খাদি বা খদ্দরের। ঢাকাই মসলিনের মতই কুমিল্লার এই খদ্দর বিখ্যাত হয়ে আছে সবার কাছে। বস্ত্র শিল্পে বাংলাদেশ শীর্ষ দেশ গুলোর অন্যতম।

★ বাংলাদেশের প্রত্নস্থল

বাংলাদেশের প্রধান এবং প্রাচীনতম প্রত্নস্থলগুলোর মধ্যে উয়ারী বটেশ্বর। এই গ্রাম দুটি রৌপ্যমুদ্রার প্রাপ্তিস্থান হিসেবে পরিচিত। ধারণা করা হয়ে থাকে যে মৌর্য যুগের আগেই এখানে সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল। ধাতব অলংকার, অল্প মূল্যের পাথর, কাঁচের পুঁথি, মৃৎপাত্র, ইট দ্বারা বানানো স্থাপত্যকলা ইত্যাদি সভ্যতার পরিচয় বহন করে। প্রাচীনতম জনপদ হলো পুণ্ড্র নগর। পুণ্ড্রদের আবাস্থন হওয়ার কারণেই এটিকে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে। 

পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী হলো এই পুণ্ড্রনগর। এই নগরের নতুন নাম মহাস্থানগড়। আর এখানের করতোয়া নদীর তীরেই রয়েছে শীলাদেবির ঘাট, বেহুলার বাসর ঘর নামক সম্রাট অশোকের তৈরিকৃত বৌদ্ধ স্তম্ভ। তাছাড়া আরো রয়েছে সুলতান বলখির মাজার, খোদার পাথর ভিটা, বৈরাগির ভিটা, পদ্মাদেবির বাসভবন ইত্যাদি। ঈসা খাঁ এর স্ত্রী সোনা বিবির নাম অনুসারেই এই সোনারগাঁও’র নামকরণ হয়েছে। এখানের দর্শনীয় স্থান গুলো হল – সোনাবিবির মাজার, পাঁচবিবির মাজার, গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড ইত্যাদি। মুঘল সম্রাটের নির্মিত হোসেনি দালান ও প্রত্নস্থল গুলোর মধ্যে অন্যতম। 

১০৫২ হিজরিতে সৈয়দ মীর মুরাদ এটি তৈরি করেছিলেন। তাছাড়া ও রয়েছে নারায়ণগঞ্জ এর সোনাকান্দা দূর্গ, ঢাকার চকবাজার এর বড় কাটরা এবং ছোট কাটরা, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের লালবাগ কেল্লা, দিনাজপুরের রামসাগর, ঢাকার কুমারটুলির আহসান মঞ্জিল, নাটোরের রানী ভবানীর রাজবাড়ি, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, পুরান ঢাকার তারা মসজিদ, গুলিস্তান এর বাইতুল মোকাররম, ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির এবং দিনাজপুরের কান্তাজীউ মন্দির ইত্যাদি প্রত্নস্থল।

★ বাংলাদেশের অর্থনীতি

বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যবস্থা মিশ্র পদ্ধতির। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জাতীয় আয় পরিমাপ করে থাকে। এটি প্রতি বছরের বাজার মূল্য, স্থির মূল্য, সেবার মূল্য পরিমাপ করে জিডিপি এবং জিএন-আই বের করে থাকে। দেশীয় উৎপাদন গণনার জন্য অর্থনীতিকে ১৫ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- কৃষি, মৎস, খনিজ, শিল্প, বিদ্যুত গ্যাস এবং পানিও সম্পদ, নির্মাণ, বানিজ্য, হোটেল রেস্তোরাঁ, পরিবহন, প্রাতিষ্ঠানিক সেবা, ভাড়া ও অন্যান্য ব্যবসা, লোক প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা, কমিউনিটি ইত্যাদি।

নির্দিষ্ট আর্থিক বছরের সম্ভাব্য সরকারী আয় – ব্য্যের হিসাব নিকাশকে বাজেট বলা হয়ে থাকে। অর্থবছর হলো ১জুলাই থেকে পরের ৩০ জুন পর্যন্ত। বাংলাদেশের অর্থনীতির বাজেট প্রথম প্রকাশ করেন ১৯৭২ সালের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক বিভাগ গুলো হলো – পুজিবাজার, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড, এক্সচেঞ্জ কমিশন, ব্যাংক, বীমা, ক্ষুদ্র ঋণ।

★ বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে। এটির যোগাযোগ ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে চমৎকার। যোগাযোগ ব্যবস্থা গুলোর মধ্যে সড়ক, সেতু, নৌ-পরিবহন, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বিমানপথ ইত্যাদি। দেশের মোটরযান, রুট পারমিট, ভাড়া নির্ধারণ সহ যাবতীয় কার্যাবলী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় করে থাকে। ১৫০০ মিটার বা তার উপরের সেতু, ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে টানেল ইত্যাদির দায়িত্ব বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের উপর অর্পিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন এর সদর দপ্তর ঢাকায় অবস্থিত। অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের কার্যালয় মতিঝিলে অবস্থিত। আর এটি দেশের নদীবন্দর, টার্মিনাল, লঞ্চঘাট এর রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। আর বাংলাদেশের প্রধান নদীবন্দর গুলো হলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল ইত্যাদি।

রেলওয়ের প্রধান দপ্তর ঢাকায় অবস্থিত। ১৮৫৩ সালে লর্ড ডালহৌসি উপমহাদেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেন। ১৯৭২ সালের জাতীয় বিমান সংস্থা এয়ার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হিসেবে কাজ শুরু করে। আর ৭সালে বিমানকে পাবলিক লি. কোম্পানিতে রূপান্তরিত করা হয়। বাংলাদেশ বিমানের প্রতীক হলো বলাকা। ব্রিটিশ থেকে ভাড়া করা একটি বিমান দিয়ে ১৯৭২ সালের ৪মার্চে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়, যেটি ঢাকা থেকে লন্ডন এবং লন্ডন থেকে ঢাকার ফ্লাইট ছিলো।

★ বাংলাদেশের ঐতিহ্য

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশের সংস্কৃতি বলতে সর্বজনিন মানুষের সাহিত, সংগীত, নৃত্য, ভোজনরীতি, পোষাক এবং উৎসব ইত্যাদি কে বুঝানো হয়ে থাকে। এ দেশের ঐতিহ্যের রয়েছে শতশত বছরের ইতিহাস আর সংস্কৃতির ধারণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি।

এ দেশের ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস ঐতিহ্য হাজার বছরের পুরনো। আর চর্যাপদ হলো তার প্রাচীনতম নিদর্শন। বিংশ শতাব্দীর দিকে বাংলা কাব্য ও গদ্য সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলাম এ দেশের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। আধুনিক সাহিত্যিক দের মধ্যে আল মাহমুদ এবং হুমায়ন আহমেদ উল্লেখযোগ্য।

নৃত্য :

নানা নৃত্য শিল্প দিয়েই বাংলাদেশের আনন্দময় সময়কে বরণ করা হয় বা শুরু করা হয়। গ্রাম অঞ্চলে যাত্রা গানের প্রচলন উল্লেখযোগ্য রয়েছে আর ঢাকা কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র গুলোতে নৃত্যের অবস্থান বিদ্যমান।

রন্ধন :

বাংলাদেশের ঐতিহ্য সমূহের মধ্যে রান্নাবান্না ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে, মধ্যপ্রাচ্য এ ভারতের রান্নার প্রভাব বাঙ্গালীর রান্নায় রয়েছে। তেল, মশলাযুক্ত খাবারই এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্যতালিকার প্রধান খাদ্য। তার মধ্যে বিরিয়ানি, পোলাও সহ ক্যালরি জাতীয় খাবার ও উল্লেখযোগ্য।

পোশাক :

বাংলাদেশের নারী পুরুষদের মধ্যে পোশাকের ব্যবধান দেখা যায়। নারীদের প্রধান পোশাক হলো শাড়ি আর মেয়েরা পরিধান করে সালোয়ার কামিজ যদিও বর্তমান যুবতিরা অন্যদেশের পোশাক দ্বারাও প্রভাবিত। পুরুষদের মধ্যে গ্রাম আর শহরের বিবেচনা করা হয়, শহরের পুরুষরা শার্ট এবং প্যান্ট পরিধান করে থাকে আর গ্রামাঞ্চলের পুরুষরা লুঙ্গি পরিধান করে। দাপ্তরিক ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষ ও শার্ট প্যান্টের উপর নির্ভর আর অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি পায়জামা উল্লেখযোগ্য।

সামাজিক অনুষ্ঠান :

এ দেশে সামাজিক অনুষ্ঠান গুলোর মধ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান অন্যতম। মুসলিমদের উৎসবের ক্ষেত্রে ঈদ উল ফিতর এবং ঈদ উল আজহা প্রধান। হিন্দুদের ক্ষেত্রে দূর্গা পূজা, বৌদ্ধদের বুদ্ধ পূর্ণিমা এছাড়াএ বড়দিন ও রয়েছে। আর সর্বজনিন উৎসবের ক্ষেত্রে পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারি উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে।

ক্রীড়া :

বাংলাদেশে অনেক অনেক ক্রীড়া প্রচলিত থাকলেও তাদের প্রধান হিসেবে রয়েছে ক্রিকেট এবং ফুটবল। আর জাতীয় খেলার মধ্যে রয়েছে কাবাডি। যেটি গ্রামাঞ্চলে খুবিই বেশি লক্ষ্যণীয়। আর তাছাড়াও দাবা, হকি, হ্যান্ডবল, সাঁতার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

লোক ও কারুশিল্প :

বাংলাদেশের সংস্কৃতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য অথবা প্রধান হিসেবে কারুশিল্পের অবস্থান প্রথম দিকে। এই শিল্পের বিশাল ভাণ্ডারে রয়েছে জামদানি, শতরঞ্জি, ধাতব শিল্পক্স শঙখশিল্প, মৃৎশিল্প, ঝিনুক, পুতুল, পিতল-কাঁসা, বাঁশ- বেত, শীতল পাটি, মাটির ফলক, খড় পাতার জিনিস, লোকচিত্র ইত্যাদি

★ গণমাধ্যম

গণমাধ্যম বলতে মুদ্রিত, অনলাইন এবং সম্প্রচারিত গণমাধ্যম গুলোকে বুঝানো হয়ে থাকে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের বিধিনিষেধের নিশ্চিয়তা প্রদান করে সংবিধান। গণমাধ্যমগুলো সরকারি এবং বেসরকারি উভয় রকমেরই হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় ২ শতাধিক দৈনিক পত্রিকা এবং ১৮০০ এর মত সাপ্তাহিক আর মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হয়। 

জনসংখ্যার ১৫-১৭% মানুষজন নিয়মিতভাবে এই পত্রিকা গুল পড়ে থাকেন। একবিংশ শতাব্দীর দিকে কিছু বেসরকারি এফ’এম বেতারকেন্দ্র চালু হওয়ার কারণে মানুষরা পত্রিকা থেকে বেতার এর দিকে ঝুঁকে পড়ে। সরকারি টেলিভিশন ছাড়াও ২৫ টির ও বেশি উপগ্রহ ভিত্তিক চ্যানেলের সম্প্রচার করা হয়ে থাকে। স্বাধীনতা সূচকে ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ১৫০ তম স্থানে অবস্থান করে আছে।

২০১৫ এর রিপোর্ট অনুসারে ৪ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। আর ইন্টারনেট ভিত্তিক অনলাইন সংবাদপত্র অথবা নিউজ পোর্টাল রয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি নিউজ পোর্টাল থাকার কারণে বাংলাদেশ সরকার স্মারকলিপি তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে বর্তমান বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুক, টুইটার এবং ওয়ান মিরর গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী মিডিয়া হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে।

★ খেলাধুলা

খেলাধুলা মানসিক আনন্দ দানের পাশাপাশি দৈহিক সুস্থতার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি যেমন মনের আনন্দের খোরাক তেমনি শরীর সুস্থ রাখতেও পিছপা হয়না। মানুষ আগে নিজ দৈহিক শক্তির উপর নির্ভর ছিলো অর্থাৎ হাঁটার জন্য পা এর ব্যবহার বিদ্যমান। যান্ত্রিকতার দিন না থাকাতে মাইলের পর মাইল হেঁটেই স্থান সমূহ অতিক্রম করতো। শরীরচর্চার ক্ষেত্রে সবাই ছিলো এক পায়ে দাঁড়ানো, খেলাধুলার জনপ্রিয়তা সে জন্যই বেশি ছিলো। 

নিয়মিত খেলার আয়োজন, অনুষ্ঠানের কারণে বিশ্বব্যাপী খেলাধুলার আয়োজন লক্ষ্যণীয়। খেলাধুলাকে গুরত্ব দেওয়ার কারণেই বিশ্ব অলম্পিকের আগমণ। অলম্পিকের প্রবর্তনকারী হলেন ব্যরন পিয়ারে দ্যা কুবার্তো। আর এটির আগমন হয় ১৮৯৬ সালের দিকে ম্যারাথন দৌড়ের মাধ্যমে, এটি তখন আন্তঃমহাদেশীয় প্রতিযোগিতা ছিলো। আর গ্রিসের এথেন্সেই এই খেলার প্রথম প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে খেলাধুলার উন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য বিএসসিবি গঠন করা হয়। আর সেসময়ের কিছু খেলার ফেডারেশন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলো- ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, হ্যান্ডবল এবং দাবা। আর তাছাড়াও খো-খো , ঘুড়ি ওড়ানো, ব্রীজ, বিলিয়ার্ড, নৌকা বাইচ, রোলার স্কেটিং, স্কোয়াশসহ অনেক রকমের ফেডারেশন রয়েছে।

বিশ্ব প্রতিযোগিতায় ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করে পদক অর্জন একটি গৌরবের বিষয়, দেশকে সবার সামনে তুলে ধরার বিষয়টা অবশ্যই অসম্ভব সুন্দর সময়। খেলাধুলা এক অমূল্য সম্পদ মানব জীবনে যদি তা চর্চার মধ্যে থাকে। খেলাধুলা কে ২ভাগে ভাগ করা যায়। এক হলো ইনডোর খেলা আর দুই হলো আউটডোর খেলা।

নির্দিষ্ট হলরুমে অনুষ্ঠিত খেলাই ইনডোর খেলা নামে পরিচিত। আর সেগুলো হলো – টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ফেন্সিং, ওয়েটলিফটিং, বডি-বিল্ডিং, রেসলিং সহ ইত্যাদি। আর বর্তমানে অনেক আউটডোর এর খেলাও ইনডোরে অনুষ্ঠিত হয় যেমন সুইমিং এবং হকি। ইনডোরে খেলার ক্ষেত্রে ঘরের তাপমাত্রা সহ মাপকাঠি ঠিক হওয়া জরুরি।

আউটডোর খেলা :

যেসব খেলা আউটডোরে অনুষ্ঠিত হয় সে সব খেলা আউটডোর খেলা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। আআউটডোর খেলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল- ফুটবল, বেসবল, ক্রিকেট, হকি, সাঁতার, এথলেটিক্স ইত্যাদি।

জনপ্রিয় খেলাধুলা :

প্রাচীনকাল থেকে খেলেধুলার গুরুত্ব অত্যাধিক। আর বাংলাদেশেও এর চাহিদা বা জনপ্রিয়তা কম নয়। কুস্তি, হর্স রাইডিং, পোলো খেলা এবং তাস খেলাসহ অনেক অনেক খেলা রয়েছে যেগুলোর জনপ্রিয়তা নেহাৎ কম নয় বৈ বেশি ছাড়া।

★বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে তিন ধরণের শিক্ষা কমিশন এর উল্লেখ পাওয়া যায়। জাতীয় শিক্ষা কমিশন যেটি ১৯৭২ সালে বর্তমান ছিলো। এরপরে আসে শামসুল হক শিক্ষা কমিশন, যেটি ১৯৯৭ সালে ছিলো। আর তারপর হলো কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন, ২০০০ সালের শিক্ষাব্যবস্থা কে সময়ের উপযোগি করার জন্য ২০০৯ সালে অধ্যাপক কবির আহমেদের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। যেটির স্তর হলো – প্রাথমিক – প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি, আর দ্বিতীয় স্তর হলো – নবম থেকে দ্বাদশ যেটা মাধ্যমিক স্তর নামেএ পরিচিত। আর তৃতীয় পর্যায়ের শিক্ষা হলো স্নাতক থেকে তার পরবর্তী সময়ের শিক্ষাকে বুঝানো হয়ে থাকে। 

শিক্ষা প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনার কাজে ২টি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করে আসতেছে আর সেগুলো হলো – প্রাথমিক, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধানে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনিন হিসেবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর মধ্যে রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ আর অন্যটি হলো কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে রয়েছে – পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়।

★ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যাসেবা

স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দুইটি বিভাগ রয়েছে তন্মধ্যে একটি হলো স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং পরিবার কল্যাণ বিভাগ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গুলো হলো – মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ১৯৫৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান্র পরিবার পরিকল্পনা সমিতি নামের একটি বেসরকারি সংগঠন চালু হয়। পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা হয় সবুজ ছাতা স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রের প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে।

★ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী

বাংলাদেশে অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃ – গোষ্ঠীদের অধিকাংশের সমাজ ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক হয়ে থাকলেও মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাও তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর সংখ্যা সঠিক করে বলা না গেলেও জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের প্রধান ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী হলো চাকমা আর তারপর মারমা সাঁওতাল অবস্থান করে আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম কে তিনটি স্তরে অথবা সার্কেলে ভাগ করা হয়েছে। চাকমা সার্কেলের প্রধান কার্যালয় রাঙ্গামাটি, আর দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী বোমাং সার্কেলের কার্যালয় হলো বান্দরবন এবং তৃতীয় স্থানে অবস্থানকারী মং সার্কেলের কার্যালয় হলো খাগড়াছড়ি। গারো সমাজ মাতৃতান্ত্রিক, এদের সমাজের প্রধান হলো মা, আর মা’ই হলো সম্পদের মালিক। 

এরা সাধারণত নিজেদেরকে পাহাড়ি মানুষ হিলসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। চাকমা রা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, এদের উৎসব মধ্যে বৌদ্ধ পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা, বৈশাখী পূর্ণিমা উল্লেখযোগ্য হলেও প্রধান উৎসব হিসেবে বিজু পরিচিত। মারমা গোষ্ঠীও বৌদ্ধ আর সেজন্য চাকমাদের মত তাদের ও বৌদ্ধ, মাঘী, বৈশাখী পূর্ণিমা হলো উল্লেখযোগ্য তবে তারা প্রতিমাসে ল্যাব্রে উৎসব পালন করে থাকে। আর ল্যাব্রে বলতে মূলত পূর্ণিমাকেই বুঝানো হয়ে থাকে। এই নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যার মধ্যে নানা মত থাকলেও সরকার কর্তৃক স্বীকৃত হল ৪৮টি।

বাংলাদেশের বিখ্যাত সবকিছু

★ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

শেখ মুজিবুর রহমান: যিনি ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে কিছু উচ্চাভিলাষী সেনা সদস্যের হাতে নিজ পরিবার নিহত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক এবং একজন শ্রেষ্ঠ নেতা। তার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভিকতা হয় এবং তার সমাপ্তি তথা বিজয়ী লাভ করে। তিনি হলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তার কৃতিত্বের শেষ নাই। বঙ্গবন্ধু হিসেবে জাতির অন্তর্গহীণে বেঁচে আছে।

জিয়াউর রহমান : জিয়াউর রহমান, যার ডাকনাম কোমল, তিনি বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালের মে মাসে এক সামরিক অভ্যুত্থানে সৈন্যদের হাতে নিহত হন। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি, যিনি ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমিশন পদ লাভ করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং ২৭ ই মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করেন।যেটি বঙ্গবন্ধু তার গ্রেফতার হওয়ার আগেই দিয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ১নং সেক্টরে কমান্ডার হিসেবে ছিলেন এবং যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন।

শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক। যিনি বাকেরগঞ্জ জেলায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৬২ সালে মৃত্যু বরণ করেন। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন নেতা।

মাওলানা আব্দুর হামিদ খান ভাসানী : ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৬ সালে মৃত্যু বরণ করেন। অসাধারণ এক ব্যক্তিত্বের অধিকারি এই নেতা ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনে পা দেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠা করে দেশ ও জাতির উন্নতি নিশ্চিত করেন। কৃষক এবং শ্রমিকদের ব্যাপারে ছিলেন এক পায়ে দাঁড়ানো তাদের সকল সমস্যায় ঝাঁপিয়ে পড়তেন এবং সকল ধরণের স্বার্থের ব্যাপারেও মনযোগী।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম: যিনি ১৯২৫ সালে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালে উপরাষ্ট্রপতির পদে পদন্নোতি করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

★বিখ্যাত খাবার

বাঙ্গালীর ভোজনরসিক, আর এটিই সংস্কৃতির সঙ্গে লেগে গেছে। পৃথিবীর বিখ্যাত সব খাবারের তুলনায় এই দেশের বিখ্যাত খাবার কম না। আলাদা স্থান ভেদে এর খাবারের ভিন্নতা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটা অঞ্চলই খাবার, পণ্য এবং নানা কারণে বিখ্যাত হয়ে আছে। সে সবের মধ্যে বিখ্যাত খাবার গুলোর আলোচনা নিম্নরূপ :

  • বিরিয়ানি : বাংলাদেশী মানুষ ভোজনরসিক হওয়ার কার‍ণে বিরিয়ানি তথা অধিক ক্যালরির জিনিস তাদের প্রথম দিকের পছন্দ হিসেবে পরিগণিত। বিরিয়ানি নামটি শুনলেই ভোজন রসিকরা নড়ে চড়ে বসে। আর তা যদি পুরান ঢাকার হাজি বিরিয়ানি হয় তাহলে তো কথাই নাই। কিন্তু বর্তমানে বিরিয়ানি পুরান ঢাকা ছেড়ে পুরো বাংলাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। পুরান ঢাকার খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো- বুন্দিয়া পোলাও, খাসির বিরিয়ানি ইত্যাদি। পুরান ঢাকা গেলেই পোলাও আর বিরিয়ানি গন্ধ মন মাতানো সৌরভের মত লাগবে।
  • ইলিশ মাছ : মাছার রাজা ইলিশের স্বাদ অতুলনীয়, আর মাওয়া ফেরিঘাটের ইলিশ হলেতো মুখে রা থাকার কথাই নাই। ইলিশের পদ গুল শুধু লোভ জাগায়, ইলিশ ভাপা, ইলিশের পোলাও এর গন্ধ অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
  • কাবাব : ভোজনরসিক দের প্রিয় খাবারের তালিকায় কাবাব প্রধান কয়েকটির মধ্যে একটি। মোঘল দের থেকেই এটির প্রচলন শুরু। ঐতিহ্যগত কারণে কাবাব আজ ও পুরান ঢাকার মানুষের নিকটে সন্ধ্যাভোজ বা রাতের খাবার হিসেবে বিবেচিত। পুরান ঢাকার এই কাবাবের স্বাদ এখন পুরো দেশেই।
  • বাখরখানি : পুরান ঢাকার এই বাখরখানির সজনাম বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশে পৌঁছে গেছে। এটি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এটি তৈরির মূল জিনিস ময়দা, তেল ও লবণ। পুরান ঢাকার বাখরখানি আর দুধ চা জমে যাওয়ার মত জিনিস। যা একবার খেলেই হলো, ভুলার মত না।
  • বগুড়ার দই : বগুড়ার দই মূলত দেশ জুড়েই স্বাদ প্রচার করে আছে। নিজেদের নিয়মনীতিতে তৈরি করা এই খাবার মানে ও গুণে অতুলনীয়। ভোজন রসিক দের ভোজনের তালিকায় এর অবস্থান প্রথম দিকে।
  • শ্রীমঙ্গলের সাত রঙ চা : সীমান্তবর্তী এবং শীতলতম স্থান হিসেবে শ্রীমঙ্গ উল্লেখযোগ্য। আর এর চা মানুষের মনে দারুণ ভাবে জায়গা করে নেয়। সাত লেয়ারের এই চা অসাধারণ। পুরো দেশেই ছড়িয়ে রয়েছে নানা ধরণের অসাধারণ সব খাবার।
  • ফল ফলাদি : আম, লিচু যেমন বিখ্যাত তেমনি কাঁঠাল ও কোন অংশে কম না। জাম, জামরুল, জাম্বুরা, আতা, সফেদা, কমলা, তরমুজ ইত্যাদি ফলের সম্ভার রয়েছে এই দেশে। মধুমাসে মধুর মত ফল আসে এই দেশে।

বিখ্যাত বা দর্শণীয় স্থান

সুন্দর এই রূপসী বাংলা তার রূপে গুণে মুগ্ধ করে রেখেছে মানুষদেরকে। আর এর দর্শণীয় স্থান গুলোর আলোচনা করলে তা ভালোভাবেই বুঝা যাবে।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, যেটি সাফারি পার্ক হিসেবেই পরিচিত। গাজিপুর জেলায় এই অসাধারণ সুন্দর স্থানটির অবস্থান। এটি ছোট বড় সব ধরণের প্রাণীর জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে বিবেচ্য।

টাঙ্গুয়ার হাওর :
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশেই এই টাঙ্গুয়ার পাহাড়ের অবস্থান। মেঘালয় পাহাড় থেকে ঝর্ণা গুলো এখানে এসে পৌঁছেছে। টাঙ্গুয়ার হাওর হলো সে জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি।

কুয়াকাটা :
বাংলাদেশের দক্ষিণ এবং পশ্চিমাংশের পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে কুয়াকাটা অন্যতম। এটি সাগর কন্যা হিসেবে সুপরিচিত। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এই সৈকতের দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার। আর এটিই একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে অবস্থান করলে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় উভয়েই দেখা সম্ভব।

সাজেক :
সাজেক ভ্যালি একটি চমৎকার উপত্যকা। যেটি রাঙামাটি জেলার বাঘাই উপজেলায় অবস্থিত। আর ভ্যালিতে ২টি পাহাড় রয়েছে, একটি হলো- রুইলুই পাহাড় আর অন্যটি হলো কংলাক পাহাড়। চমৎকার বিষয় এই যে , রুইলুই পাড়া ১৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।

রাতারগুল :
সিলেট অঞ্চলের গোয়াইন ঘাটে অবস্থিত এই রাতারগুল। বড় সুন্দর এবং অদ্ভুত এক পানির রাজ্য হলো এই রাতারগুল যেখানে হিজলে ফলে ধরে আছে গাছে গাছে, বট গাছ ও চোখে পড়ে।

কক্সবাজার :
বালির নরম বিছানা আর তার সামনে অবস্থিত বিশাল সমুদ্র এ যেন স্বর্গ সৌন্দর্য প্রদর্শন করে আছে। সারি সারি ঝাউবন এ জায়গার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে। এখানে রয়েছে নীলাভ জলরাশি আর তার গর্জন। সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া সেন্টমার্টিনসহ আরো কিছু জায়গা কক্সবাজারকে আরো বেশি সৌন্দর্যে সৌন্দর্য মণ্ডিত করে রেখেছে।

সমাপিকা

এই দেশ চিরশান্তির চির সৌন্দর্যের দেশ হিসেবে বিবেচিত। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই ভূমি। এটির রয়েছে রক্তমাখা ইতিহাস তেমনি ঐতিহ্যে ভরপুর এক পূর্ণভূমি।