You are currently viewing মোঃ আবদুল হামিদের জীবনী ও রাজনৈতিক রাজনীতি
আব্দুল হামিদ

মোঃ আবদুল হামিদের জীবনী ও রাজনৈতিক রাজনীতি

আব্দুল হামিদ-(Biography of President Abdul Hamid); পুরো নাম মোঃ আব্দুল হামিদ,তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান (২১তম) রাষ্ট্রপতি। তিনি একজন রাজনীতিবীদ, আইনজীবী, বিশিষ্ট সমাজসেবক এবং শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। তিনি পর পর দুই মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে ১৭তম ব্যক্তি এবং তিনিই বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি যিনি দুইবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

মোঃ আব্দুল হামিদ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রাম। তার পিতা ছিলেন মোঃ তায়েব উদ্দিন এবং মাতা তমিজা খাতুন। তিনি কিশোরগঞ্জের নিকলী জিঃসিঃ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন কিশোরগঞ্জের ‘সরকারি গুরুদয়াল কলেজে’ এবং এখান থেকে তিনি আইএ (এইচএসসি) ও বিএ পাশ করেন।

‘সরকারি গুরুদয়াল কলেজে’ পড়াশোনা করা কালীন সময়ে তিনি অত্র কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে এলে তিনি আবদুল হামিদকে আইন বিশয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন। আতপর তিনি ‘সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং একজন আইনজীবী হিসেবেই তিনি তার কর্মজীবন শুর করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ জজ কোর্টে ওকালতি করেছেন এবং বেশ কয়েকবার কিশোরগঞ্জ বার অ্যাসসিয়েশনের সভাপতিও ছিলেন।

আরো পড়ুনঃ তাজউদ্দীন আহমদের জীবনী

আবদুল হামিদের পারিবারিক জীবন

এডভোকেট আব্দুল হামিদের সহধর্মিনী হলেন মোছাঃ রাশিদা হামিদ, তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। তাদের সংসারে তিন ছেলে, বড় ছেলে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলের একজন সংসদ সদস্য। অপর ছোট ছেলেরা রাসেল আহমেদ তুহিন ও রিয়াদ আহমেদ তুষার এবং তার একমাত্র মেয়ের নাম স্বর্না হামিদ।

মোঃ আব্দুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন

১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬১ সালে এডভোকেট আব্দুল হামিদ আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তখন তিনি সরকারি গুরু দয়াল কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং ১৯৬২ সালে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে তিনি পাকিস্তান সরকার দ্বারা কারারুদ্ধ হন। এরপর তিনি ১৯৬৩ সালে গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক হন।

এডভোকেট আবদুল হামিদ ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি হন এবং ১৯৬৫ সালে সরকারি গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সহ সভাপতি হন। এরপর ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হন। ১৯৬৮ সালে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে তিনি পুনরায় কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬৯ সালে আওয়ামি লীগে যোগদান করেন।

১৯৭০ সালে এডভোকেট আবদুল হামিদ তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তৎকালীন ময়মনসিংহ- ১৮ নির্বাচনি এলাকা থেকে পাকিস্তান জতাইয় পরিষদের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। এমনকি বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদেরও তিনি সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।

আরো পড়ুন; সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জীবনী

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি

২০১৩ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান যখন অসুস্থ হন তখন আবদুল হামিদকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর মাত্র ৬দিন পূর্বে তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে্র ২৪ এপ্রিল ১ম মেয়াদে এবং ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল ২য় মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণ করেন।

তিনি ১৯৯৬ সালের ১৪ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি পুনরায় ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত নবম সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে আব্দুল হামিদ

এডভোকেট আবদুল হামিদ ১৯৭১ সালে সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ৭১-এর মার্চের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোতে তিনি কিশোরগঞ্জে স্বাধীনতার পক্ষে জনবল গঠন করা শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ তিনি কিশোরগঞ্জের রণখোলা মাঠে জনসভায় স্বাধীন বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে টেলিগ্রামে স্বাধীনতার ঘোষণা পেয়ে তিনি সেইদিনই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেন। এপ্রিলের প্রথম দিকে সামরিক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের- কিশোরগঞ্জ, ভৈরব ও বাজিতপুর শাখা থেকে প্রায় ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা নিরাপদ স্থান হিসেবে বিবেচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ন্যাশনাল ব্যাংক শাখায় জমা রাখেন।

এরপর জনাব আবদুল হামিদ ভারতের আগরতলা যান যেখানে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালি ও কুমিল্লার অশিকাংশ সংসদ সদস্য অবস্থান করছিলেন, সেখানে তাদের সাথে এবং আগরতলার উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ ও মত বিনিময় করেন। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য আগরতলায় আগত যুবকদের নিয়ে তিনি ইয়ুথ রিসিপশন ক্যাম্প চালু করেন এবং এর চেয়ারম্যান হন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি শরণার্থীদের দেশে ফেরার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন এবং তারা দেশে ফিরলে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনিও দেশে ফিরে আসেন।

আরো পড়ুনঃ সৈয়দ নজরুল ইসলামের জীবনী

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত

দেশে ফিরেই তিনি কিশোরগঞ্জের ত্রান ও পুনর্বাসন কমিটির দায়িত্ব পালন করেন এবং একই বছর তিনি গণপরিষদের সদস্য মনোনিত হন। এরপর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ময়মনসিংহ -৩০ (বর্তমান কিশোরগঞ্জ- ৫) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আবার ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হন।

১৯৭৬- ১৯৭৮ সালে তৎকালীন সরকারের সময় জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার সহ নৃশংস হত্যা কান্ডের পর তিনি কারা বরণ করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে ২৪ জানুয়ারি ২০০৯ সাল পর্যন্ত জনাব আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বার কিশোরগঞ্জ বার এ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৬ সালে দেশের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ- ৫ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আবার ১৯৯১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ- ৫ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন পুনরায় তিনি দেশের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ- ৫ আসন থেকে তৃতীবারের মতো তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এডভোকেট আবদুল হামিদ ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় সংদের ডেপুটি স্পিকার এবং ২০০১ সালের ১২ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর তিনি দেশের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ- ৫ আসন থেকে ৪র্থবারের মতো তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি দেশের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ- ৫ আসন থেকে ৫মবারের মতো তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় সংদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আরো পড়ুনঃ তোফায়েল আহমেদের জীবনী

পুরষ্কার

বাংলাদেশের স্বাধিনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এডভোকেট মোঃ আবদুল হামিদকে ২০১৩ সালে স্বাধিনতা পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়।

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ নিজ জন্মস্থান কিশোরগঞ্জে মিঠামইন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মিঠামইন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিঠামইন কলেজ সহ প্রায় ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৪টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ৩টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার আইনজীবী সমিতি, জেলা পাবলিক লাইব্রেরী, জেলা শিল্প কলা একাডেমি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং কিশোরগঞ্জ রাইফেলস ক্লাবের আজীবন সদস্য।

এডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন সমাজ সেবক। তিনি দেশ ও দেশের জনগনের কল্যাণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মহান এই নেতাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা দীর্ঘজীবী করুন।