You are currently viewing বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী ও রাজনীতি
বেগম খালেদা জিয়া

বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী ও রাজনীতি

বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী (Biography of Begum Khaleda Zia): বাংলাদেশের ইতিহাসে ১২ তম প্রধানমন্ত্রী হলেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বেনজির ভুট্টোর পরে দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদদের একজন এবং জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রধান। দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর স্ত্রী যিনি তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আপনি প্রবন্ধটি পড়লে বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

বেগম খালেদা জিয়া জন্ম গ্রহণ করেন বৃটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির জলপাইগুড়িতে, তৎকালিন অবিভক্ত দিনাজপুর জেলায় ১৫ই আগস্ট ১৯৪৬ সালে। তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর ফুলগাজিতে। কিন্তু তার শৈশব এবং কৈশোরের সোনালি দিনগুলো কেটেছে দিনাজপুরের মুদিপাড়া গ্রামে। ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর তারা দিনাজপরে চলে আসেন। যেটি বর্তমান বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলা।

খালেদা জিয়ার শিক্ষা জীবন

 খালেদা খানম পুতুলের শিক্ষা জীবন শুরু হয় পাঁচ বছর বয়সেই। প্রথমে তিনি দিনাজপুরের মিশনারি স্কুলে এবং পরবর্তিতে অর্থাৎ ১৯৬০ সালে দিনাজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন শেষ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন।

বেগম জিয়ার জন্ম তারিখের অমিল

খালেদা জিয়া তার জন্মদিন হিসেবে ১৫ আগস্ট কে দাবি করলেও এটি একটি বিতর্কিত বিষয় দেখা যায়। তার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার প্রিয়জনরা এই তারিখে নিহত হয়েছিলেন। আর এই মৃত্যুর কারণে ১৫ আগস্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে শোক দিবস পালন করা হয় এবং এই দিন কে শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। খালেদা জিয়ার কাগজপত্রে নির্দিষ্ট কোন জন্ম তারিখ বা সাল পাওয়া যায়নি, একটার মধ্যে একটা পাওয়া যাওয়ার কারণে ১৫আগস্ট কে জন্ম তারিখ হিসেবে দাবী করার কারণে বেগম খালেদা জিয়া কে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়ার বংশ পরিচয়

 খালেদা জিয়ার পিতা চা ব্যবসায়ী ইস্কান্দার আলী মজুমদার। যিনি ১৬ শতকের মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী মুরাদের পৌত্র আজগর আলী মজুমদার এবং আজগরের পৌত্র হলেন খালেদা জিয়ার পিতা ইস্কান্দার আলী মজুমদার। তার মা হলেন বর্তমান দিনাজপুরের মেয়ে তৈয়বা মজুমদার।

খালেদা জিয়ার পরিবার

বেগম খালেদা জিয়ার জীবনীর এই পর্যায়ে তার পরিবার সম্পর্কে জানব। বেগম খালেদা জিয়ার ডাক নাম পুতুল এবং প্রকৃত নাম খালেদা খানম। তার পিতা ইস্কান্দার আলী মজুমদার এবং মাতা তৈয়বা মজুমদারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান হলেন খালেদা খানম। দুইবোন তার বড় এবং দুই ভাই সবার ছোট। তার পিতামহ হাজী সালামত আলী আর মাতামহ জলপাইগুড়ির তোয়াবুর রহমান। খালেদা জিয়ার ছোট ভাই মেজর (অবঃ) সাইদ ইস্কান্দার। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল থেকে ফেনী-১ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। আর দ্বিতীয় ভাই শামীম ইস্কান্দার অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার। তার বোন খুরশিদ জাহান একজন সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন।

বেগম খালেদা জিয়ার জীবনীতে স্থায়ী নিবাস

খালেদা জিয়া মূলত জন্মগ্রহণ করে অবিভক্ত বাংলার জলপাইগুড়িতে। ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান ভাগ হলে পরিবারসহ দিনাজপুরে শহরের মুদিপাড়ায় চলে আসেন এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আদি পিতৃ-ভিটা হিসেবে ফেনী জেলার ফুলগাজীকে ধরা হয়ে থাকে। বাড়ি হলো উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ি।

এক নজরে বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী বৃত্তান্ত :

এখানে বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত দেয়া হলঃ

আসল নাম : খালেদা খানম।
ডাকনাম : পুতুল।
বিবাহ পরবর্তী নাম। : বেগম খালেদা জিয়া।
জন্ম তারিখ। : ১৫ আগস্ট।
জন্ম সাল : ১৯৪৫
বর্তমান বয়স : ৭৬বছর।
জন্ম স্থান : ব্রিটিশ ভারতের জলপাইগুড়িতে।
স্থায়ী নিবাস : দিনাজপুরের মুদিপাড়ায়।

পিতার নাম : ইস্কান্দার আলী মজুমদার।
পিতার পেশা : চা- ব্যবসায়ী।
মাতার নাম : তৈয়বা মজুমদার।
পিতামহ : হাজি সালামত আলী।
মাতামহ : তোয়াবুর রহমান।
বংশ পরিচয় : ১৬ শতকে মধ্যপ্রাচ্যের মুরাদের পৌত্রের পৌত্র হলেন ইস্কান্দার আলী মজুমদার।
বড় ভাই এর নাম : সাঈদ ইস্কান্দার।
ছোট ভাইয়ের নাম : শামীম ইস্কান্দার
বোনের নাম : খুরশীদ জাহান।

বৈবাহিক অবস্থা : বিবাহিত।
বিয়ের সাল : ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে।
স্বামী : জিয়াউর রহমান।
স্বামীর পেশা : সাবেক রাষ্ট্রপতি।
স্বামীর মৃত্যু : ১৯৮১ সালের ৩০ মে। সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন।
সন্তান সংখ্যা : ২ ছেলে।
বড়ছেলের নাম : তারেক রহমান পিনু।
ছোটছেলের নাম : আরাফাত রহমান কোকো।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : দিনাজপুর গার্লস স্কুল এবং সুরেন্দ্রনাথ কলেজ।
পেশা : রাজনীতিবিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
রাজনৈতিক দল : বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী দল। চার দলীয় জোট, বিশ দলীয় জোট।
ধর্ম : ইসলাম।
লিঙ্গ : মহিলা।
বিখ্যাত : সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয়তা : বাংলাদেশি।
স্থায়ী ঠিকানা : বাংলাদেশ।
দেশ : বাংলাদেশ।

খালেদা জিয়ার বিয়ে

ব্যবসায়ী পিতা ইস্কান্দার আলী মজুমদারের কন্যা সেনা কর্মকর্তার সাথে পরিণয়ে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকেই নানা ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে খালেদা খানম জিয়াউর রহমান নামক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন কে বিয়ে করেন। জিয়াউর রহমানের ডাক নাম ছিল কমল। অফিসার হিসেবে তিনি তখন দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন।

খালেদা খানমের বৈবাহিক জীবন

বিবাহ পরবর্তি জীবনে তিনি খালেদা খানম পুতুল থেকে খালেদা জিয়া অথবা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। বেগম খালেদা জিয়া তার স্বামীর সাথে ১৯৬৫ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি জমান। আর ১৮৬৯ সালে সেখান থেকে নিজ দেশে অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন করাচি থেকে। জয়দেবপুরে অবস্থানকালে জিয়াউর রহমানের পোস্টিং চট্টগ্রামে হলে ফ্যামিলিসহ চট্টগ্রামের ষোলশহরে বসবাস শুরু করেন।

বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান (বীরউত্তম) যিনি বাংলাদেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ও রাজনীতিতে তার উপস্থিতি ছিলোনা বললেই চলে। পরে নেতাকর্মীদের আহ্বানে বিএনপির হাল ধরে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই শুরু করেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমাম চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে সেনা সদস্যের হাতে নিহত হোন ১৯৮১ সালের ৩০ মে।

খালেদা জিয়া এবং জিয়াউর রহমান দম্পতির দুই ছেলে, একজনের নাম তারেক রহমান পিনু যার জন্ম ১৯৬৭ সালে এবং অন্যজন হলেন প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো, জন্ম ১৯৬৯ সালে। দুই ভাই এর মধ্যে তারেক রহমান বড়। পেশায় তারেক রহমান একজন রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দলের প্রথম ভাইস-চেয়ারম্যান। আর আরাফাত রহমান পেশায় একজন ব্যবসায়ী, তাছাড়া ও
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও সিটি ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু পরবর্তিতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালায়া হাসপাতালে ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারিতে মারা যান।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন এরপর ১৬ মে ঢাকা এসে বড় বোন খুরশিদ জাহানের বাসায় ১৭ জুন পর্যন্ত থাকেন। ২ জুলাই পাক সেনারা তাকে ও তার দুই ছেলেকে বন্দী করে। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দী থেকে ১৬ ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছাড়া পাই।

আরো পড়ুনঃ শেখ হাসিনার জীবনী

জিয়াউর রহমানের মৃত্যু পরবর্তী জীবন

খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন সাধারণ একজন গৃহবধু। জিয়াউর রহমান জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি ঘরের কাজ আর সন্তানদের দেখা শোনার কাজেই ব্যস্ত ছিলেন এবং বিয়ের পরের সময়গুলোতে বর্ণাঢ্য জীবন পার করার পর অল্প বয়সে বিধবা হয়ে সংগ্রামময় জীবন শুরু করেন আর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা শূন্য এই মহিলা হাসবেন্ড এর পর নিজে দলের হাল ধরে দল কে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে রাজনীতিতে বেশ ভালো ভূমিকা রাখেন।

রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া

আপোষহীন নেত্রী হিসেবে খ্যাত এই নারী নীতি এবং আদর্শে দীক্ষিত। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দলের কর্মীদের আহবানে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৮২সালে খালেদা জিয়া বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন এবং অনেক প্রশংসা কুড়িয়ে নেন অল্প সময়েই। আর পরবর্তীতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদোন্নতি পান। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অসুস্থ হলে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ কর্তৃক বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের ক্ষমতাচ্যুতির বিরুদ্ধে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।

১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। বিচারপতি সাত্তারের অসুস্থতায় তিনি পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৮৪ তে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হোন এবং পরবর্তীতে বিনা প্রতিযোগিতায় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হোন আর তার নেতৃত্বেই বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়।

এরশাদ বিরোধী আন্দোলন

বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই এরশাদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে অর্থাৎ বহু প্রতিকূল মুখে পড়লে দলের ঐক্য ঠিক রেখে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বরে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হলে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন এবং পরবর্তী জোটের মাধ্যমে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন।

দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া প্রথমে তার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে নিয়ে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন এবং পরে পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে ১৯৮৬ সালে।

১৯৮৬ সালে পাঁচ দফায় আন্দোলন চলতে থাকলে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী অর্থাৎ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্মতি জানান এবং তার নেতৃত্বে দল ভাগ হয়ে যায়। আট দল নির্বাচনে যেতে চাইলেও বাকি পাঁচ আর সাত দল এরশাদ বিরোধী কর্মকাণ্ডে আন্দোলন করে যায়। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া “এরশাদ হটাও” এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙ্গে দেয় এতে করে আবার শুরু হয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।

দীর্ঘ আট বছরের সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় খালেদা জিয়া এবং জামায়াতে ইসলামির সমর্থনে প্রথমবারের মত প্রধানমন্ত্রীর পদে নির্বাচিত হোন। ১৯৯৩ সালের চতুর্থ কাউন্সিলে দ্বিতীবার, ২০০৯ সের পঞ্চম কাউন্সিলে তৃতীয়বার এবং ২০১৬ সালের দশম কাউন্সিলে চতুর্থবারের মত চেয়ারপার্সন হোন। দ্বিতীয়বার প্রধান মন্ত্রী হোন ১৯৯৬ সালে এবং তৃতীয়বার হোন ২০০১ সালে জোটগত নির্বাচনে।

খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং সে ছিল প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়া চার বারে মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে নির্বাচনের পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন এবং তিন বারে প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ পরিচালনা করেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন হিসেবে তিনি ৩২ বছর দায়িত্ব পালন করে গেছেন একনাগাড়ে।

আরো পড়ুনঃ শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের জীবনী

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তার সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার গঠন করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এই বিল উত্থাপন করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ কে স্বপদে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়।, পবর্তীতে ৯৬ এর একদলীয় নির্বাচন হিসেবে গণ্য হলে সকল বিরোধীদলের আপত্তির পর ও খালেদা জিয়া ও তার দল একক নির্বাচন করেন। সকল বিরোধী দল এই নির্বাচন বয়কট করার ফলে সংসদ মাত্র ১৫ দিনের মত স্থায়ী হয়। খালেদা জিয়া এই সংসদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বহির্বিশ্বের চাপ ও প্রবল আন্দলোনে জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস হয় এবং তখন দেশনেত্রী বেগম জিয়া পদত্যাগ করেন।

১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মোট ১১৬ আসনে জয় লাভ করে, আর এই আসনসংখ্যা সরকার গঠনে যথেষ্ঠ ছিলনা। আওয়ামী লীগ মোট ১৪৭ টি আসন লাভ করে এবং তারা জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। আর বিএনপি সপ্তম সংসদে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বেগম খালেদা জিয়া তখন আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর শাসনকালে সংসদে বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন।

বাংলাদেশের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী দল বিএনপি বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সাথে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। চারদলীয় ঐক্যজোট ২০০১ সালের ১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া এই সংসদেও প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন। পরিশেষে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। ২৬০ টি আসনের বিপরীতে তারা মাত্র ৩২টি আসন লাভ করে।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট সহ বাংলাদেশের অন্যসব রাজনৈতিক দল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে।

আরো পড়ুনঃ মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর জীবনী

গ্রেফতার

১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির সদস্য হিসেবে যোগ দেওয়ার পর তিনি একে একে চার বার গ্রেফতার হোন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি গ্রেফতার হন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে দূর্নীতির অভিযোগে পুত্র তারেকসহ গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বার তিনি হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন অতঃপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক গ্রেপ্তার হন। এরপর দীর্ঘ এক বছর সাত দিন কারাগারে অবস্থানকালে তার বিরুদ্ধে চলতে থাকা কোন মামলারই উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি এবং চলতে থাকা তদন্তে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি।

২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের পর রাজনৈতিকভাবে চাপ আসে খালেদা জিয়ার উপর। তার বিরুদ্ধে করা দূর্নীতির মামলা তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দূর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কারাগারে অবস্থান করছেন একবছর ধরে।

সেনানিবাসের বাসা ত্যাগ

বেগম খালেদা জিয়ার জীবনীর একটা কাল অধ্যায় ছিল সেনানিবাসের বাসা ত্যাগ করা। ১৩ নভেম্বর ২০১০ বেগম খালেদা জিয়া তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছেড়ে যান। তিনি অভিযোগ করেন তাকে বলপ্রয়োগ করে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তিনি স্বেচ্ছায় বাসা ত্যাগ করেছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যূত্থানে নিহত হয়। ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি খালেদা জিয়া এর নামে বরাদ্দ দেন।

ভাল নেই খালেদা জিয়া


২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের পর থেকে বিএনপি রাজনৈতিক দিকে অনেকটা চাপে পড়ে যায়। খালেদা জিয়ার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে হাজির হয় তার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলা। গত এক বছর ধরে তিনি কারাগারে।

কিন্তু তার কারাবাস যে এতোটা দীর্ঘ হবে সেটি অনেক মানুষই ভাবেনি। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার শরীরও ভালো যাচ্ছে না।তাই তাকে কারাগারে রেখেই সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি।

বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী সম্পর্কে আরো কিছু কথা

বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের নির্বাচনগুলোর কোনটাতেই হেরে জাননি তিনি। সবগুলোতেই বিজয়ী হয়েছিলেন।

নারী অধিকার রক্ষায় তিনি সোচ্চার ছিলেন। এ ব্যাপারে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার এবং সচেতনতার পরিচয় দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।

বাংলাদেশ একটি রক্ষণশীল দেশ, যেখানে নারীদেরকে ঘিরে হাজার হাজার প্রচলিত কুসংস্কার রয়েছে সে সব কিছুর মধ্য দিয়ে গিয়েই তিনি একজন প্রধানমন্ত্রী। এ থেকে বুঝা যায় যে, তার লড়াইটা আসলে প্রথম থেকেই।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সময় তিনি মারাত্মক রকমের পারিবারিক ট্র‍্যাজেডিও পার করছেন ২০১৫ সালে ছোট ছেলে আরাফাতের মৃত্যুর সময়টায়।

সমাপ্তি

 প্রখ্যাত এই রাজনীতিবিদ দেশের অনেক উন্নতি সাধন করছে। ৭৬বছরের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী এখন কারাগারে অবস্থান করতেছে। রাজনৈতিক বিচারে একজন সেরা রাজনীতিবিদ যা ৩বারের প্রধানমন্ত্রীত্বই প্রচার করে থাকে। বর্তমান বিএনপি নেত্রীর রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে অনেকে নানা রকম সমীকরণ করছেন।আশা করি বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী থেকে অনেক কিছু জানতা পেরেছেন। আপনি যদি বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী সম্পর্কে কিছু মতামত জানাতে চান আমাদের কমেন্ট করতে পারেন।