You are currently viewing বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমা্নের জীবনী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমা্নের জীবনী

এশিয়া মহাদেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অন্যতম হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভারত ও পাকিস্তান ভাগে সরাসরি অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচিত মহানায়ক, যিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন।

বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা থেকে ষাট মাইল দক্ষিণ এবং পশ্চিমে ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ এর টুঙ্গিপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ জন্ম নেয় শেখ মুজিবুর রহমান। আর মুজিবের জন্মের পর তার নানা তার নাম রাখেন “মুজিব” যার অর্থ হলো সঠিক উত্তরদাতা। কিন্তু তার ডাকনাম ” খোকা”। তার মা বাবা তাকে খোকা নামেই সম্বোধন করতেন বা ডাকতেন। শেখ মুজিবের পিতা হলেন শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুন। 

পিতা লুৎফর রহমান পেশায় একজন হিসাব রক্ষক বা আদালতের সেরেস্তাদার এবং স্পষ্টভাষী ও অসাধারণ চরিত্রের অধিকারী। শেখ লুৎফর রহমান এবং সায়েরা খাতুনের ছয়জন সন্তানের মধ্যে শেখ মুজিব হলেন তৃতীয় তম। শেখ মুজিবের চার বোনের মধ্যে বড় হলেন ফাতেমা বেগম, মেজ বোন হলেন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট লাইলি আর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের।

★ শেখ মুজিবুর রহমান ও তার বংশ পরিচিতি

বাংলার জনক শেখ মুজিবুর রহমান মূলত “শেখ মুজিব” বা শুধু “মুজিব” নামে পরিচিত এবং লোকমুখে “মুজিব ভাই” হিসেবেও জনপ্রিয়। নামের মাধ্যমে যতটা পরিচিত ঠিক ততটাই উপাধির মাধ্যমে পরিচিত, উপাধিগুলোর মধ্যে হলো বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা এবং জাতির জনক। বঙ্গবন্ধু বা বাংলার বন্ধু হিসেবে খ্যাতি অর্জন তাকে বিশ্ব দরবারে বেশ পরিচিত করেছে।

সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ইতিহাসে অবিসংবাদিত মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ব-পুরুষ তথা বংশের পূর্বাপর খুঁজতে গেলে পাওয়া যায় শেখ মুজিব হলেন ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ভূমি ইরাক থেকে আগত দরবেশ শেখ আউয়ালের বংশধর হিসেবে। দরবেশ তার গুরু বায়েজিদ বোস্তামি ( রহ.) এর আদেশ মান্য করতে এবং তার সঙ্গী হয়ে বাংলাদেশে আগমন করেন খৃষ্টীয় পঞ্চদশ শতকে।

 সোনারগাঁও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে তিনি সেখানেই বসতি স্থাপন করেন। সত্যপথে চলার উপদেশ এবং ধর্মের বাণী শোনাতেই তার আগমন। তার চরিত্র আকৃষ্ট হওয়ার মত ছিলো আর সেজন্য তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিলো চারদিকে। স্থানীয় বাঙ্গালী পরিবারের মেয়ে বিয়ে করে তিনি সেখানকার অধিবাসী হয়ে যান। তাদের ঘর আলোকিত করে এক পুত্র সন্তান আগমন করে যার নাম রাখেন জহির উদ্দিন।

জহির উদ্দিন কে বাবার আদর্শে বড় করেন এবং পড়াশোনা করান। সম্মানিত বাবাকে শ্রদ্ধা এবং সম্মানে মাথায় রাখেন জহির উদ্দিন। খুবই ভালো দিন যাচ্ছিলো। কিন্তু এর সমাপ্তি খুব শীগ্রই আসে, দরবেশ শেখ আওয়াল হজ্জ পালন করতে পবিত্র মক্কায় পাড়ি দেয়, হজ্জ মৌসুম শেষ হলেও তাকে আর পাওয়া যায়না। বছরের বছর বছর গেলেও তিনি আর ফেরেননি।

 দরবেশ শেখ আওয়ালের ৭ম বংশধর হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আর এভাবেই বিখ্যাত শেখ পরিবারের গোড়াপত্তন ঘটে। কালের বিবর্তনে বহু উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে যায় এই পরিবার। নাম, যশ, প্রভাব, অর্থ, বিত্ত হ্রাস পেলেও সুমহান ঐতিহ্য এবং ইতিহাস বিস্মৃত হয়নি কোন কালেই এবং সময়ের সাথে সাথে সুকীর্তির উচ্চস্তরে উপনীত হয়েচ্ছে ও আলোর বিচ্ছিরণ ঘটেছে যা কখনোই হ্রাস হওয়ার মত না।

আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ” শেখ মুজিব আমার পিতা” নিবন্ধটিতে যা লিখেছেন তার সারসংক্ষেপ এই যে, তাদের পূর্ব পুরুষরা টঙ্গী পাড়ায় বসতি স্থাপনের জন্য এখানে জমিজমা কিনে প্রসিদ্ধ কারিগরদের দিয়ে দালানবাড়ি তৈরি করেন। কালের বিবর্তনে এখনো সেই দালানগুলোর ধ্বংসাবশেষ দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা সে দুইটি দালান ও জ্বালিয়ে দেয় যেগুলো বসতি হিসেবে ছিলো।

আরো পড়ুনঃ শেখ হাসিনার জীবনী

★ শেখ মুজিবের সোনালি শৈশব এবং শিক্ষাজীবন

শেখ মুজিব তার সোনালি শৈশব গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় কাটিয়েছিলেন। শৈশবকাল থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক কার্যাদিতে বিশেষ আগ্রহী থাকা ছাড়াও কিশোর বয়সেই রাজনীতিতে দলনেতা হিসেবা দায়িত্ব পালন করেন। কলেজ জীবনেই রাজনীতিতে সক্রিয়দের অন্তর্ভুক্ত হয়েযান তিনি। রাজনীতিতে শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গুরু মেনে তার ভক্তদের অন্যতম হয়ে যান তিনি।

১৯২৭ সালে টুঙ্গিপাড়ার গিমাভাঙ্গা প্রাইমারী স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন, পরবর্তিতে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। যদিও তিনি চার বছর পড়াশোনা থেকে দূরে অবস্থান করেছিলেন বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে, এরপর গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হয়ে চোখের অপারেশন ও করান। গোপালগঞ্জের মিশনারী হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করেন। ১৯৪২ সালে মাওলানা আজাদ কলেজে ইন্টারে ভর্তি হন এবং ৪৭সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে বি এ পাশ করেন পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।

আরো পড়ুনঃ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবনী

★ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈবাহিক জীবন

তথ্যসূত্রে পাওয়া যায় ১৯৩৮ সালে অর্থাৎ শেখ মুজিবুর রহমানের মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি বেগম ফজিলাতুন্নেছার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ মতে তিনি ১২ কিংবা ১৩ বছর বয়সেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আর তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় দুই কন্যা এবং তিন পুত্র। দুই কন্যা হলো শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা, আর পুত্রগণ হলেন শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল।

★ বেগম ফজিলাতুন্নেছা কথন

দেশবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা। যার অন্য নাম রেণু। জন্মগ্রহণ করেন ফরিদপুরের অন্তর্গত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ৮ই আগস্ট ১৯৩০সালে। তার পিতা জহুরুল হক এবং মাতা হোসনে আরা বেগম। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছার পিতা ছিলেন কৃষিজীবী এবং শেখ লুৎফর রহমানের জ্ঞাতি ভাই। অর্থাৎ শেখ মুজিবুর রহমানের জ্ঞাতি চাচা। দুইবোনের মধ্যে আদরের ছোটবোন হলেও তিনি মাত্র তিন বছর বয়সেই থাকাকালেই তার পিতা জহুরুল হক বিয়োগ হন।

 এতে করে শেখ মুজিবুর রহমানের মাতা সায়েরা খাতুন তাকে নিয়ে যান এবং নিজ সন্তানের মত লালনপালন করে বড় করেন। ছেলেমেয়দের সাথে পড়ালেখা ও করান। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ শেষ করার পর তিনি শিক্ষকতার পেশাও বেছে নেন। মুজিবদের ঘরে অবস্থান করার কারণে শেখ মুজিবুরের সকল কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যেমন অবগত তেমনি সঙ্গী ও ছিলেন।

এমনকি ইতিহাসে এমন বিবৃতি ও রয়েছে যে, ৭ মার্চের ভাষণের পূর্বে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেন ” তোমার সামনে সামনে জনগণ, পেছনে গুলি, তোমার হৃদয় যা চাইবে তুমি তাই বলবে আজ।

আরো পড়ুনঃ শেখ রেহানার জীবনী

★ এক নজরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কথন

জন্মের সময় : রাত ০৮ টায়।
বার : বুধবার
জন্মসাল : ১৭ই মার্চ ১৯২০ খৃষ্টাব্দ।
আর বাংলা ২০চৈত্র, ১৩২৭।
জন্মস্থান : টুঙ্গিপাড়া, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ।


উপাধি : বঙ্গবন্ধু, আম জনতার কাছে শেখ ভাই, শেখ মুজিব এবং মিয়া ভাই।
ডাকনাম : খোকা।

শিক্ষা : মাধ্যমিক শেষে আজাদ কলেজে ইন্টার এবং বি এ পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : গিমাভাঙ্গা প্রাইমারী স্কুল, গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল, গোপালগঞ্জের মিশনারী হাইস্কুল, মাওলানা আজাদ কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


পিতা : শেখ লুৎফুর রহমান। ( পেশায় সেরেস্তাদার)
মাতা : সায়েরা খাতুন।
ভাইবোন : ৪ বোন এবং শেখ মুজিবসহ ২ ভাই।
বড় বোন : ফাতেমা বেগম।
মেজবোন : আছিয়া বেগম।
সেজবোন : আমেনা বেগম।
ছোট বোন : খোদেজা বেগম লিপি


বিবাহ : ১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে এবং ১২/১৩ বছর বয়সে আত্মজীবনী গ্রন্থমতে।
স্ত্রী : শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
স্ত্রীর ডাকনাম : রেণু
সন্তানসন্ততি সংখ্যা : দুই মেয়ে, তিন ছেলে।
সন্তানদের নাম : হাসিনা,
কামাল,
জামাল,
রেহানা,
রাসেল।

পূর্ব পুরুষ : শেখ মুজিবের পূর্ব পুরুষ ইরাক এর বাগদাদ থেকে আগত।

পুরস্কার : স্বাধীনতা পুরস্কার (২০০০)
গান্ধী শান্তি পুরস্কার : ( ২০২০)

 

জাতীয়তা : ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯২০- ১৯৪৭)
পাকিস্তানি (১৯৪৭- ১৯৭১)
বাংলাদেশি (১৯৭১-১৯৭৫)
রাজনৈতিক দল : বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক।
আওয়ামী লীগ।
অন্যান্য রাজনৈতিক: সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ।

মৃত্যু : ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালে।
মৃত্যুর সময়ে বয়স : ৫৫ বছর
মৃত্যুর কারণ : গুপ্তহত্যা

★ শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনে বিচরণের শুরু

ব্রিটিশ ভারত :

শেখ মুজিবুর রহমান অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশনে যোগদিয়েই রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হন ১৯৪০ সালে। বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগদান করার পর পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রের জন্য পাকিস্তানের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকেন এবং ইসলামিয়া কলেজে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হন। কারো কারো মতে তখন থেকেই তিনি দলের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে কাজ করেন।

পাকিস্তানি নেতা :

ভারত এবং পাকিস্তান বিভাজনের পর শেখ মুজিব পাকিস্তানেই স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। পূর্ব পাকিস্তানে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। আর পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগের প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময়কার দারিদ্রতা বেকারত্বসহ সমস্যাগুলোর সমাধান স্বরূপ সমাজতন্ত্রের প্রতি অনুরাগী ছিলেন।

ভাষা আন্দোলন :

ভারত এবং পাকিস্তান ভাগের একবছর পরই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘোষণা অনুযায়ী পূর্ব বাংলার জনগণকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য চাপ দেওয়া হলে জনগণের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে এবং বিক্ষোভ শুরু করে। মুজিবসহ অন্যরা এই ঘোষণার বিরোধিতা করে এবং তাদের আন্দোলন করে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যকার সভা অনুষ্ঠিত হয় মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে। মুসলিম লীগ থেকেই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উঠে। 

আর এই সম্মেলন থেকেই সর্বদলীয় সংসদীয় পরিষদ গঠিত হয় এবং ঢাকায় হরতাল পালিত হয়। হরতাল চলমান অবস্থাতেই মুজিবসহ কিছু রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ছাত্রদের বিক্ষোভের জন্য তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

 পুলিশ এখানেও বাধা প্রদান করলে মুজিব দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এ মুজিব আবার গ্রেফতার হলে পরবর্তী বছরের ২১ জানুয়ারিতে কারাগার থেকে মুক্তি পান। জেল থেকে বের হয়ে আবার ও আন্দোলনসহ নানা রাজনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। 

তৃতীয় বারের মত জেল খাটার পর শেখ মুজিবকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়ে থাকে। এর মূল কারণ হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শ্রমিকদের অধিকার আন্দোলনের নেতৃত্বে দেওয়া। ২৩ শে জুন পূর্ব পাকিস্তানি আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ছেড়ে এই দলে যোগদান করেন। জুনের শেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেলে খাদ্য সংকট এর বিরোদ্ধে আন্দোলনে নেমে পড়েন।

 তারপর আবার তাকে আটক করা হয় ১৪৪ ধারা জারী লঙ্ঘণের কারণে। যদিও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিলো। ১৯৫০ এর দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পূর্ব পাকিস্তানে আগমন উপলক্ষ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ দুর্ভিক্ষ বিরোধী মিছিল করে। এখানেও মুজিবের নেতৃত্বের কারণে মুজিব আটক হন এবং ২বছর কারাবরণ করেন।

শেখ মুজিব জেলে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দু ভাষা রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে তিনি জেলে থেকেই এ ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এবং প্রতিবাদ সংগঠিত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন ভাষা আন্দোলনের নির্দেশনা দিয়ে। ২১ শে ফেব্রুয়ারি কে রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয় এবং মুজিব ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। ১৩ দিনের অনশন শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারিতে তিনি কারাগার থেকে মুক্তিপান।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা :

শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ছেড়ে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদান করেন যেটির সভাপতি মাওলানা ভাসানী ছিলেন। ১৯৫৩ সালের দিকে শেখ মুজিব কে সাধারণ সম্পাদক করা হলে পরের বছর যুক্তফ্রন্ট জোটের টিকিটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলিতে সম্মানের সাথে নির্বাচিত হন। তারপর কিছু সময়ের জন্য কৃষি মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে থাকেন। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিত্ব বরখাস্ত করার কারণে কেন্দ্রিয় সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার কারণে মুজিবকে আবারো গ্রেফতার করা হয়।

১৯৫৫ – ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত গণপরিষদ এর সদস্য পদ প্রাপ্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ সালের দিকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের জন্মের শুরুর দিকে এক ইউনিটের পক্ষ থেকে পশ্চিমের প্রদেশগুলোকে পশ্চিম পাকিস্তান করা হয়ে থাকে। আর পূর্ব বাংলার নাম পূর্ব পাকিস্তানে রূপান্তর করা হয়। গণপরিষদ এর সভাপতি বলেন – তারা পূর্ব বাংলা শব্দের পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তান বসাতে চায়। 

বাংলা শব্দের বহু ইতিহাস আর সেজন্য সভাপতি বাংলা শব্দ ব্যবহার করতে চাইতেন এবং বলতেন। তিনি জনগণের পক্ষ থেকে বলতে চান জনগণকে যাতে তাদের ভোটাধিকার দেওয়া হয় অথবা ভোটের মাধ্যমের রায়ের ব্যবস্থা করা হয়। শিল্প, বানিজ্য এবং গ্রামীন সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মন্ত্রি হিসেবে জোট সরকারের অনুপ্রবেশ হয় ১৯৫৬ সালের দিকে। আর তার পরের বছরই দলীয় সাংগঠনিক কার্যাদির জন্য পদত্যাগ করেন। আইয়ুব খান সংবিধান স্থগিত করে সামরিক আইন জারি করেন ১৯৫৮ সালের দিকে। 

মুজিব প্রতিরোধ সংগঠনের জন্য গ্রেফতার হন। ১৯৬১ সালের পর মুক্তি পেলে আইয়ুব খানের শাসনের বিরোধিতা করেন। এরপর এক বিপ্লবী পরিষদ নামক এক রাজনৈতিক সংগঠন শুরু করে এবং পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্য কাজ করে। ১৯৬২ এর বিক্ষোভের কারণে পুনরায় আবার গ্রেফতার হন।

ছয়দফা আন্দোলন :

সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের নেতৃত্বদানে সংযুক্ত হন, যা পাকিস্তান এর বৃহৎ রাজনৈতিক দল হয়ে উঠে। ধর্মনিরপেক্ষতার কারণ স্বরূপ দল টি থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দেওয়া হয়। আইয়ুব খানের কার্যাদির বিরোধিতাকারী হিসেবে মুজিব শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতেন। বিভিন্ন সংস্থার সাথে কাজ করে মুজিব ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন করেন আইয়ুব খানের বিরোধিতা করেন।

শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযুক্ত করে এক বছরের জন্য জেলে রাখা হয় আর সে বছরগুলোতেই পূর্ব পাকিস্তানের যাবতীয় চাহিদা উপেক্ষা করায় পূর্ব পাকিস্তানিদের অসন্তোষ দেখা দেয়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধেও পূর্ব পাকিস্তানের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। লাহোর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর একটিতে মুজিব ছয়দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। একটি দুর্বল কেন্দ্রিয় শাসকের প্রতি ফেডারেশন। তার পরিকল্পনাগুলো হলো-

1. সংবিধানের লাহোর রেজোলিউশন অনুসারে পাকিস্তানের ফেডারেশন এবং সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরকার গঠনের ব্যবস্থা করা।

2. ফেডারেল সরকার ২টি বিষয়ে মোকাবেলা করার সুযোগ পাবে একটি হলো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অন্যটি হলো বৈদেশিক বিষয়।

3. দুটি উইং এর জন্য পরিবর্তনযোগ্য মুদ্রা চালু করা উচিত। আর তা সম্ভব না হলে একটি মুদ্রাই চালু রাখা উচিত। আর পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভ স্থাপন করা উচিত।

4. কর ও রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষমতা ফেডারেটিং ইউনিটের উপর ন্যস্ত থাকবে। ফেডারেশন তার ব্যয় মেটাতে রাষ্ট্রীয় করের অংশের অধিকারী হবে।

5. ২শাখার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে দুইটি পৃথক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। ফেডারেল সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজনীয়তা দুই উইং দ্বারা সমানভাবে একটি অনুপাত স্থির করতে হতে। দেশীয় পণ্য দুই শাখাতে শুল্কমুক্ত ভাবে চলাচল করা, সংবিধানের ইউনিটগুলোকে বিদেশি দেশের সাথে বানিজ্য সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা দেওয়া।

6. পূর্ব পাকিস্তানের একটি পৃথক মিলিশিয়া থাকা উচিত বা আধাসামরিক বাহিনী থাকা উচিত।

মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু জনগণ, অন্য ধর্মীয় ও সম্প্রদায়ের অনেক সমর্থন পায়। আর তার দাবিগুলো পশ্চিম পাকিস্তানে উগ্রপন্থী হিসেবে প্রকাশ পায়। আর তাছাড়াএ এগুলা পূর্ব পাকিস্তানেত অবাঙ্গালী এবং মৌলবাদীদের কাছেও উগ্রপন্থী হিসেবে বিবেচিত হয়।

আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন :

শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে কারাবন্ধী হয়ে সেখানে দুইবছর পর্যন্ত অবস্থান করেন। আর তারপর সামরিক আদালতে বিচার শুরু হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র হিসেবে পরিচিত, মুজিবসহ ৩৪ জন বাঙালীকে সরকার অভিযুক্ত করে। মুজিবের গ্রেফতার এবং তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে অস্থিতিশীল করে রেখেছিলো। সরকার চাপের কাছে নত স্বীকার করে অভিযোগ প্রত্যাহার করে এবং মুজিবকে মুক্তি দেয়। জননায়ক হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যায়, ২৩ শে ফেব্রুয়ারি তাকে রেসকোর্স ময়দানে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়, আর বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হয় জনগণ কর্তৃক।

রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান :

১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহবান করে সম্মেলনে যোগ দেয়। আর মুজিব তার সব দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানায় আর তা প্রত্যাখ্যান হওয়ার পর ওয়াক আউট করে। ১৯৬৯ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত জনসভায় মুজিব বলেন – অতঃপর পূর্ব পাকিস্তানকে “বাংলাদেশ” বলা হবে। অনেকে বিশ্বাস করে থাকে যে, বাঙ্গালী আন্দোলন দ্বি-জাতী তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য জোর প্রদান করে।

 যে মামলার জন্য পাকিস্তানি রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে সে জাতী হিসেবে বাঙ্গালীদের জাতিগত – সাংস্কৃতিক পরিচয় জাহির করে। কিন্তু মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে নিজের সমর্থক জোগাড় করে নেয়। আর এভাবেই তাকে পাকিস্তানি শক্তিশালো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। মুজিব কে তার সমর্থকগণ বঙ্গবন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে এবং ডাকে।

১৯৭০ সালের নির্বাচন :

১৯৭০ সালে উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় পূর্ব পাকিস্তান্র আঘাত হানে এবং লক্ষের ও বেশি মানুষ মারা যায়। এই বিপর্যয় এর প্রতি সরকারের দুর্বল প্রতিক্রিয়ার প্রতিবাদ স্বরূপ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অশান্তি শুরু করে। পাকিস্তানের রাজনীতিবিদগণ ফায়দা হাসিলের অভিযোগে আওয়ামী লীগকে দোষারোপ এবং আক্রমণ করে। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আইনসভায় বিজয়ী হয়। পশ্চিম শাখার বৃহত্তম সফল দল জুলফিকার আলী ভুট্টোর অধিনে ছিলো। আর তিনি। মুজিবের স্বায়ত্তশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান করছিলেন।

 পরবর্তীতে সরকার গঠনের জন্য মুজিবকে আমন্ত্রণ করা হলে ভুট্টো সমাবেশ বয়কট এবং সরকারের বিরোধিতা করার হুমকি দেয়। সামরিক বাহিনীসহ বিভিন্ন দল মুজিবকে বিরোধী দল ভাবতো এবং মুজিবের বিরোধীতা করতো। কিন্তু ওই সময়ে মুজিব বা পূর্ব পাকিস্তানের কেউই স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক নিয়ে কিছু বলতোনা। ভুট্টো ভয় পেয়ে গিয়ে অভ্যন্তরীণ বৃত্তের নিকট গোপন বার্তা পাঠায়। আর মুবাশ্বির হাসান নামক একজন ভুট্টোর সাথে সরকার গঠনে রাজি করিয়ে ছাড়ে। আর অন্যদিকে ভুট্টো ইয়াহিয়া খান কে চাপ দিতে থাকে যাতে করে সরকার ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেওয়া হয়।

আরো পড়ুনঃ জিয়াউর রহমানের জীবনী

★ বাংলাদেশের জন্ম

দেশের দুর্দিনে রাজনৈতিক ভয়াবহতার সময়ে ইয়াহিয়া খান সমাবেশের ডাকে দেরি করে আসে। বাঙ্গালীরা মুজিবের দলকে অর্থাৎ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জনকারী দলকে দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকার করার পরিকল্পনা হিসেবে দেখেছিলো। ১৯৭১ সালে ৭মার্চের ভাষণে মুজিব স্বাধীনতার ডাক দিয়ে আইন অমান্যের বড় অভিযান শুরু করতে বলেন এবং প্রতিরোধ সংগঠন করেন।

চুক্তিকে লালন করার লক্ষ্যে ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন ঘোষণা করে মুজিবসহ বাঙ্গালী নেতা কর্মীদের গ্রেফতার এবং আওয়ামীলীগ কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। আর সেনাবাহিনী সে উদ্দেশ্যে অপারেশন সার্চলাইট চালু করে। ভারতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মিলিমিশিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট চলাকালেও মুজিব রেডিওতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলেন।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানোর পাশাপাশি ঢাকায় গণহারে মানুষ হত্যা করে। এসব ঘোষণার একপর্যায় অভিযোগ ছাড়াই মুজিবকে গ্রেফতার করে হানাদার বাহিনি। মুজিবকে রাতেই পশ্চিম পাকিস্তানে স্থানান্তর করে ফয়সালাবাদের কারাগারে কড়া পাহারায় রাখা হয়। আর তারপর মিয়ানওয়ালি নামক নির্জন এক কারাগারে স্থানান্তরিত হন তিনি। মুজিবকে তিন বার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও শেষে তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

শান্তি ও শৃঙখলা ফিরে পাওয়ার আশায় সেনাবাহিনীরা অভিযান চালায়। রাজাকার নামক মিলিমিশিয়াদের সাথে সেনাবাহিনী, সাধারণ সামরিক বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ ও লক্ষ্যবস্তু করে। পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে গেলে সিংহভাগ হিন্দু সীমান্ত পার করে ভারতে চলে যায়। মুজিব পরিবারের অনেকেই ঘরবন্দী হতে লাগলো। লীগ নেতৃত্ব ঢাকায় সরকার গঠণ করে যার নাম দেওয়া হয় মুজিবনগর সরকার। জুলফিকার আলী ভুট্টো আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে শেখ মুজিবকে মুক্তিদেন ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারিতে।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের ইতিহাস

★ শেখ মুজিবের দেশ শাসন

মুজিব অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিলেও পরবর্তিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করে এবং ১৯৭০ এ নির্বাচিত কর্মীরা নতুন রাষ্ট্রের জন্য অস্থায়ী জাতীয় সংসদ গঠন করেন। শেখ মুজিব যুদ্ধের পতন কে বর্ণনা করেছেন মানব বিপর্যয় হিসেবে। ২ লাখের বেশি নারী ধর্ষণ এবং ৩ মিলিয়নের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ধর্ম নিরপেক্ষতায় শ্রুতিবদ্ধ থেকেও আচরণে রাজনৈতিক দিকে ইসলামের নিকটেই ছিলেন। ইসলামিক একাডেমীকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং অ্যালকোহল উৎপাদন – বিক্রয় নিষিদ্ধ করে দেয়। 

সাথে সকল ধরণের জুয়াকেও নিষিদ্ধ করা হয়। মুজিবের জনসভাগুলোতে ইসলামিক অভিবাদনগুলোকে বৃদ্ধি করা হয়। মুজিব ক্ষমার প্রতি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের লক্ষ্যে করে তিনি যা বলেন তার সার-সংক্ষেপ হলো এইযে, তারা তাদের দোষ বুঝতে পেরেছে, আশা করি সকল অপকর্ম ভুলে দেশের উন্নয়নে নিজেদের যুক্ত করবে। তিনি দেশের সকল উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা, স্যানিটেশন, খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, পানি এবং প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর রূপরেখা দেন।

১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বন্ধ না হওয়াতে খাদ্য, পুনর্বাসন, স্বাস্থ্য পরিষেবাসহ সবকিছুতে মুজিব অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মুজিবের শাসনকালে শিল্পের অবনতি, জাল টাকা নিয়ে কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রত্যক্ষ হয়েছে।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের প্রধান দেশগুলোর থেকে স্বীকৃতি পাওয়া তথা স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা হওয়ার পর জাতিসংঘ এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে প্রবেশ করে। আর শেখ মুজিব যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন উন্নয়নমূলক সাহায্য সহায়তার জন্য। ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পর শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হয় দুই দেশ। যেটি বাংলাদেশকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকভাবে সহায়তা করে।

শেখ মুজিবুর রহমান ওআইসি, কমনওয়েলথে বাংলাদেশের সদস্যপদ চেয়েছিলেন এবং ওআইসির সেই পদের জন্য পাকিস্তানেও যান। ওয়াশিংটন ডিসি এবং মস্কোতে আমন্ত্রিত হন সোভিয়েত নেতাদের সাথে সাক্ষাত করার জন্য। তাছাড়াও আমেরিকা এবং ইউরোপ কান্ট্রির বিভিন্ন দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন সমস্যায় তিনি সাহায্য সহায়তা পান। ইসরায়েল বাংলাদেশ কে স্বীকৃতি দিলেও আরব এবং ইসরায়েলের যুদ্ধে শেখ মুজিব মিসরকে সমর্থন করে থাকে এতে করে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ৪৪টি ট্যাংক প্রাপ্ত হয়।

মুজিব সরকার অসন্তোষের কারণে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে থাকে, জাতীয় ইস্যুগুলোতে মন দেওয়ার ফলে স্থানীয় সরকারকে অবহেলা করে। পরিবারের সদস্যদেরকে দেশের উচ্চপদগুলোতে আসীন করাতে সাধারণ সর্বস্তরের মানুষের কাছে তিনি ভালোভাবে সমালোচিত হন। মুজিবের উচ্চাভিলাষী জীবন, লোকবলের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে জনগণের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করতে থাকে। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষে অর্থনৈতিক ভিত্তি কৃষি ধ্বংস হয়ে যায়। যেটি মুজিবকে নির্বাক এবং হতভম্ব করে দেয় তার শাসনামলে। দুর্ভিক্ষে হাজার থেকে লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

আরো পড়ুনঃ বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী

★ গুপ্তহত্যা

জুনিয়র সেনা অফিসারের কিছু সদস্য রাষ্ট্রপতি কে মারার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছের তথা আপন মানুষদের কাজে লাগায়। সেনা অফিসার এবং তাদের সহযোগীরা রাষ্ট্রপতির বাসভবনে ঢুকে রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবার এবং ব্যক্তিগত কর্মীদের কে হত্যা করে। সে সময়ে শেখ মুজিবের দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বেঁচে যায়, দেশের বাহিরে অবস্থানের কারণে। 

শেখ মুজিবুর রহমানের এই মৃত্যু দেশকে অস্থিরতায় ঠেলে দেয়। হত্যাকাণ্ড এবং রাজনৈতিক ঝামেলায় দেশে মাৎস্যন্যায় এর মত সৃষ্টি হয়। শেখ মুজিবের দুই মেয়েকে দেশে ফিরতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর আসন পান। আর তার বাবার মৃত্যুর সাথে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড দেন এবং পলায়নকারীদেরকে ও মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

★ শেখ মুজিবের রচনাবলী

শেখ মুজিবের রচনাবলীর মধ্যে আত্মজীবনী কথিত আছে, আত্মজীবনীর দুই খণ্ডের একটিতে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনাসহ রাজনীতির সব কিছু আর অন্যটিতে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে লেখা। উভয় গ্রন্থই তার মেয়ে শেখ হাসিনা প্রকাশ করেন।

★ অসমাপ্ত স্মৃতিকথা।
★ কারাগারের ডায়েরি।
★ যে নতুন চীন আমি সাক্ষী বা আমার দেখা নয়া চিন।

শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীগ্রন্থের মধ্যকার অসমাপ্ত আত্মজীবনী একটি উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় আত্মজীবনী। এটির প্রকাশ নিয়ে কথিত আছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তার পিতা শেখ মুজিবের লেখাগুলো হস্তগত হয় এতে করে শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় এই আত্মজীবনী মূলক লেখাকে গ্রন্থে রূপান্তর করে। বইটিতে লেখকের বংশপরিচয়, জন্ম, ছোটবেলা, বড়বেলা সহ রাজনৈতিক যত কর্মকাণ্ডের বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়। এই বইটি ইংরেজী, উর্দু, জাপানি, চীনা, আরবী, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কি, নেপালি, স্পেনসহ অনেক ভাষায় অনুবাদিত হয়।

কারাগারের রোজনামচা :
শেখ মুজিবুরের গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরেকটি হলো কারাগারের রোজনামচা। এটি শেখ মুজিবুরের দ্বিতীয় আত্মজীবনী হিসেবে প্রকাশিত হয় আর বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ রেহানা এটির নামকরণ করেন। বলা হয়ে থাকে যে, শেখ মুজিবুরের চীন সফর এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র নিয়ে আরো দুটি বই প্রকাশ হবে।

★ শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাপ্ত পুরস্কারাদি

★ জোলিয়েট কিউরি শান্তি পদক।
★ স্বাধীনতা পুরস্কার।
★ গান্ধী শান্তি পুরস্কার।

★ সমাপিকা

আমৃত্যু বাঙ্গালী জাতীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান উজ্জ্বল দৃষ্ঠান্ত রেখে গেছেন বিশ্বদরবারে। তার কার্যাদি তাকে শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী হিসেবে খ্যাতি লাভ করতে সহায়তা করেছে। বঙ্গবন্ধুর কার্যাদি বা তিনি নিজে অনেক কারণে সমালোচিত হলেও বাঙ্গালীর জন্য যা করেছেন তারজন্য আমাদের কাছে তিনি সেরাদের সেরা হয়েই আছেন। সেসময়ের কিউবার রাষ্ট্রপ্রধান ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেন – ” আমি হিমালয় দেখিনি, তবে আমি মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় যিনি হিমালয়ের মতন।