You are currently viewing ঐতিহাসিক শহীদ নূর হোসেন দিবস এর ইতিহাস
শহীদ নূর হোসেন দিবস

ঐতিহাসিক শহীদ নূর হোসেন দিবস এর ইতিহাস

১০ নভেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় সারা বাংলাদেশে পালিত হয় দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লাল অক্ষরের দিন শহীদ নূর হোসেন দিবস।

১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা শহর উত্তাল ছিল। রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের রাজধানীকে দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন, কার্যত সমস্ত যোগাযোগের মাধ্যম বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ছাত্রদের হল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিবাদ ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, এবং সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ শত শত গণতন্ত্রপন্থী কর্মীকে আটক করার জন্য জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করছিলেন।

কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো হাজার হাজার সমর্থককে একত্রিত করে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের জন্য চাপ দিতে থাকে। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর, আওয়ামী যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, যিনি তার খালি বুকে এবং পিঠে “মুক্ত গণতন্ত্র” এবং “স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে” স্লোগান দিয়েছিলেন, গুলিস্তানের কাছে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে স্বৈরাচার বিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন। শহরটি এখন শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার নামে পরিচিত।

নুরুল হুদা বাবুল ও কৃষক নেতা আমিনুল হুদা টিটোও নিহত হন

স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের গণআন্দোলনে যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা বাবুল ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুরের কৃষক নেতা আমিনুল হুদা টিটোও পুলিশের গুলিতে নিহত হন। নব্বই দশকের শেষের দিকে গণঅভ্যুত্থানের সময় নূর হোসেন ও অন্যান্যদের শাহাদাত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে। আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসককে পদত্যাগ করতে হয়।

বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন সহ সারা দেশের মানুষ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। যেমনঃ দিবসটি উপলক্ষে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং নিহত আওয়ামী যুবলীগ নেতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়ে থাকেন।

বিশিষ্ট মানুষদের বাণী

বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন,” রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন।

১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে নগরের রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে ২৬ বছর বয়সী নূর হোসেন আত্মাহুতি দেন, তিনি বলেন, আজ আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি নূর হোসেনসহ সকল শহীদদের, যারা দেশের গণতন্ত্রের জন্য শাহাদাত বরণ করেন। .

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে শহীদ নূর হোসেন দিবসে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন সকল শহীদদের, যারা ১৯৮৭ সালে দেশের গণতন্ত্রের জন্য শহীদ হয়েছিলেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বাবুল ও ফাত্তাহসহ অনেকে প্রাণ উৎসর্গ করেছেন।

তাছড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য নূর হোসেনের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

শহীদ নূর হোসেন এর ফলে স্বৈরাচারী শাসকের পতন

অবশেষে, অব্যাহত আন্দোলন ও সংগ্রামের ফলে স্বৈরাচারী শাসকের পতনের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরবর্তীকালে জনগণ তাদের ভোট ও খাবারের অধিকার ফিরে পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নূর হোসেনসহ সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এই দিনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গ্ণ অধিকার পরিষধ, গ্ণ সংহতি আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ওয়ার্কার্স পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বম গণতান্ত্রিক জোটসহ আরও অনেক রাজনৈতিক দলও নূর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

তার মৃত্যু একটি গণ-অভ্যুত্থানের জন্ম দেয় যা অবশেষে এরশাদ সরকারকে উৎখাত করে।

নূর হোসেনরা বার বার জন্মাই না, তারা ক্ষণজন্মা

নূর হোসেনরা সবসময় দেশের ইতিহাসের সেরা সম্পদ। নূর হোসেন্দের জন্য নূর হোসেন দিবস প্রয়োজন হয় না। নূর হোসেন শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। নূর হোসেনরা সবসময় জন্মই না, যুগে যুগে নূর হোসেনরা তৈরি হয়। নূর হোসেন দেশের গ্ণতন্ত্রের জন্য নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, সবার আগে দেশ ও দেশের গ্ণতন্ত্র। দেশে যদি আবারো গ্ণতন্ত্র হুমকির মধ্যে পরে, আবারো হাজার ও নূর হোসেন জীবন দিতে তৈরি থাকবে। তারা ভেবেছিল এক নূর হোসেনকে হত্যা করলে, দেশে স্বইর স্বাশন চালু করবে, কিন্তু তারা জানে না তা কোন দিন সম্ভব না। এদেশের মানুষ তারা তাদের দেশকে নিকের থেকে ও বেশি ভালবাসে।

নূর হোসেন আপনী কী জানেন?

বাংলাদেশের ইতিহাসের সূর্য সন্তান নূর হোসেন। তার বিষয়ে আপনি কতটুকু জানেন। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম হয়ত নূর হোসেন দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জানে না। যারা ইতিহাসের এই সূর্য সন্তান সম্পর্কে বিস্তারিত জানে, তাদের উচিত তাদের নলেজটা নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেয়া। আর যদি তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন তাহলে আমাদের জানান।