You are currently viewing নায়ক ফারুকের জীবনী ও ফিল্ম ক্যারিয়ার
নায়ক ফারুক

নায়ক ফারুকের জীবনী ও ফিল্ম ক্যারিয়ার

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডষ্টি যাদের হাত ধরে ঘুরে দাড়িয়েছিল তাদের মধ্য অন্যতম হলেন আকবর হোসেন পাঠান দুলু যাকে সিনেমা প্রেমিরা রুপালী পর্দার হিরো নায়ক ফারুক হিসেবে চিনি। আমরা আজকে বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়া ভাই হিসেবে খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা নায়ক ফারুক সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। তার নানা জানা অজানা কথা আপনাদের সামনে তুলে আনার চেষ্টা করব এই লেখায়।

নামঃ ফারুক
আসল নামঃ আকবর হোসেন পাঠান দুলু
ডাকনামঃ দুলু, মিয়া ভাই
স্ত্রীঃ ফারজানা পাঠান
ছেলেঃ রওশন হোসেন
মেয়েঃ ফারিহা তাবাসসুম পাঠান
বাবাঃ আজগার হোসেন পাঠান
জন্মঃ ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট
জন্মস্থানঃ মানিকগঞ্জ
প্রথম সিনেমাঃ জলছবি
অভিনীত চলচ্চিত্রঃ ১০০+
পেশাঃ চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ
রাজনীতির দলঃ আওয়ামীলীগ
জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী
বড় অর্জনঃ একজন মুক্তিযুদ্ধা
সম্মাননাঃ বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

নায়ক ফারুকের প্রাথমিক জীবন

আকবর হোসেন পাঠান দুলু ওরফে নায়ক ফারুক জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট। ফারুকের জন্ম হয় ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওরে। তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওরে জন্ম গ্রহণ করলে ও বেড়ে ওঠেছেন পুরান ঢাকাতে। তিনি পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন শৈশবে। বাবা আজগার হোসেন পাঠানের ছিল পাচ মেয়ে ও দুই ছেলে। ফারুক ছিলেন ভাইদের মধ্যে সবার ছোট ও ডানপিটে। ফারুক ছোট বেলাতে ছিল খুবই চঞ্চল সভাবের। তিনি সুযোগ পেলেই ছটে যেতেন মাঠে খেলার জন্য।

নায়ক ফারুকের পারিবারিক জীবন

নায়ক ফারুক পারিবারিক জীবনেও ছিল সুখি মানুষ। তার প্রিয়তমা স্ত্রী নাম হল ফারজানা পাঠান। ফারুক ও ফারজানা একে অপরের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা দীর্ঘদিন প্রেমের পর একে অপরকে ভালবেসে বিয়ে করেন। তাদের এই সুখী পরিবারে দুইজন সন্তান জন্ম নেয়। একজন ছেলে সন্তান যার নাম রওশন হোসেন এবং আরেকজন মেয়ে সন্তান যার না ফারিহা তাবাসুম পাঠান। হিরো ফারুক ও ফারজানা পাঠান তাদের পরিবার নিয়ে খুবই সুখী। তাদের ছেলে ও মেয়েদের সাথে ও তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাদের ছেলে মেয়ে দুজনেই প্রতিষ্টিত নিজ নিজ জায়গায়।

নায়ক ফারুকের সিনেমার ক্যারিয়ার

নায়াক ফারুকের জলছবি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সিনেমা জগতে প্রবেশ করেন। তার প্রথম ছবিটি পরিচালনা করেন এইচ আকবর ১৯৭১ সালে। তার প্রথম ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে বলে খ্যাত কবরী। পরবর্তীতে কবরী ও ফারুক জুটি একসময় খুবই জনপ্রিয় ছিল। তার প্রথম ছবির পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। উপহার দিয়েছে একের পর এক জনপ্রিয় সিনেমা।

নায়ক ফারুক কাজ করেছেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি পরিচালক খান আতাউর রহমান, নারায়ণ ঘোষ মিতা, স্বপন ঘোষ, আজিজুর রহমান, আমজাদ হোসেন সহ আরো গুনী পরিচালকদের সাথে। এইসব গুনী পরিচাকদের হাত ধরেই তিনি উপহার দিয়েছেন অনেক কালজয়ী সিনেমা। যা বাংলার সিনেমা প্রেমিদের মাঝে হিরো ফারুককে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। তিনি প্রায় ১০০+ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে বেশিরভাগ সিনেমাই দর্শকদের মন জয় করতে পেরেছিল।

নায়ক ফারুকের উল্লেখযোগ্য কিছু সুপারহিট সিনেমাঃ

১। খান আতাউর রহমান পরিচালিত আবার তোরা মানুষ হ

২। আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত সারেং বৌ

৩। প্রমোদ কর পরিচালিত সুজন সখী ও দিন যায় কথা থাকে

৪। আমজাদ হোসেন পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে ও নয়নমনি

৫। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত পালকি

৬। চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত পদ্মা মেঘনা যমুনা

৭। জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত জীবন সংসার

৮। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত আলোর মিছিল, সাহেব ও লাঠিয়াল

৯। আব্দুস সামাদ পরিচালিত সূর্যগ্রহণ

১০। তাহের চৌধুরী পরিচালিত মাটির মায়া

১১। বেলাল আহমেদ পরিচালিত নাগর দোলা

১২। শেখ নিয়ামত আলী পরিচালিত এতিম সহ আরো অনেক।

নায়ক ফারুকের পুরস্কার ও সম্মাননা

বাংলাদেশ সরকার রাস্ট্রীয় ভাবে চলচ্চিত্র অঙনের মানুষের চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য সম্মাননা দিয়ে থাকে। সেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার জন্য নায়ক নায়িকাদের স্বপ্ন থাকে। বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়া ভাই খ্যাত নায়ক ফারুক প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় ১৯৭৫ সালে। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত বিখ্যাত লাঠিয়াল সিনেমায় অভিনয় করার কারণে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্র ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

লাঠিয়াল সিনেমাটি ছিল মিয়া ভায়ের সবচেয়ে ব্যবসা সফল সিনেমার একটি। চলচ্চিত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আজীবন স্মমাননা প্রধান করে থাকে। নায়ক ফারুক চলচ্চিত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা পান ২০১৬ সালে। তাছাড়া আকবব হোসেন পাঠান দুলু ওরফে ফারুক বেসরকারী আরো অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছে।

রাজনীতিতে নায়ক ফারুক

আকবর পাঠান ফারুক আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। তিনি চলচ্চিত্র আসার আগেই রাজনীতিতে জড়ান। রাজনীতির মাধ্যমে তিনি ভিবিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। রাজনীতির শুরুতেই নায়ক ফারুক বাংলাদেশর প্রাচীনতম রাজনীতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি ঢাকা ১৭ আসন থেক বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা ঘোষণা করেন ১৯৬৬ সালে।

তখন ফারুক ছাত্র অবস্থায় আন্দোলনে যোগ দেন। সেই সময় আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে অনেক মামলা শিকার হতে হয়েছিল তাকে। অনেকেই হয়ত জানেন না নায়ক ফারুক একজন বীর মুক্তিযুদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের টকবকে যুবক ফারুক নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে যাপিয়ে পড়েছিলেন এবং দেশকে মুক্ত করেছিলে পাক হানাদার বাহিনী হাত থেকে।

নায়ক ফারুকের ব্যাবসায় অবদান

নায়ক ফারুক যেখানেই হাত রেখেছেন সেখানেই সফল হয়েছেন। তিনি দেশ স্বাধীন করতে যেমন অবদান রেখেছেন তেমনি স্বাধীনতার পরবতি ফিল্ম ইন্ডাষ্টি ঘুরে দাড়াতে ও তিনি দারুন অবদান রাখেন। তিনি সিনিমা লগ্নি করে ও সফলতা পান। তিনি ব্যবসা ক্ষেত্রে ও তিনি সফল। ফারুকের নিজের প্রতিষ্ঠান ফারুক নিটিং ডাইং এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি রয়েছে। তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার অদূরে গাজীপুরে অবস্থিত। নায়ক ফারুক বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অবশেষে বলতে চায় দেশের বীরদের জাতি সবসময় স্মরণ রাখবে শ্রদ্ধাভরে। নায়ক ফারুকের কাজ তাকে জাতির কাছে চিরসরণীয় করে রাখবে। তিনি জাতির শ্রেষ্ট সন্তান। মুক্তিযুদ্ধা ফারুক সবার প্রিয়।