সায়মন সাদিক – তার সাথে নিশ্চয় আপনি আমি সকলেই বেশ ভালো মত পরিচিত কারণ তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের একজন গুনী ও প্রথম সারির অভিনয় শিল্পী । তিনি তার অভিনয় দিয়ে সারা বাংলাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে খুব ক ম সময়ে যা অভাক করার মত। নায়ক সায়মন সাদিক এর বায়োগ্রাফি নিয়ে আমাদের আজকে আর্টিকেলটা। এই আর্টিকেলটা পড়ে আপনি নায়ক সায়মন সাদিক এর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
Table of Contents
সায়মন সাদিক কে?
সায়মন সাদিক হচ্ছেন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা। সিনেমা করার জন্য তিনি নায়ক হিসেবে সবার মাঝে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ঢালিউড সিনেমায় তার কাজের জন্য পরিচিত। তিনি একজন ঢালিউড অভিনেতা। নায়ক সায়মন সাদিক জ্বী হুজুর নামক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন ২০১২ সালে। তিনি তার প্রথম ছবি দিয়ে তেমন সারা ফেলতা পারেন নি। কিন্তু তার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
এক নজরে সায়মন সাদিক
মূল নামঃ সায়মন সাদিক
ডাকনামঃ সায়মন
জন্মঃ ১৯৮৫ সালের ৩০ আগস্ট
জন্মস্থানঃ কিশোরগঞ্জ
স্ত্রীঃ দিপা সাদিক
বড় ছেলেঃ সাদিক মো. সাইয়্যান
ছোট ছেলেঃ সাদিক মোহাম্মদ সাইয়্যার
বাবাঃ মো ছাদেকুর রহমান
পেশাঃ অভিনেতা ও ব্যবসায়ী
প্রথম সিনেমাঃ জ্বী হুজুর
ধর্মঃ ইসলাম
জাতীয়তাঃ বাংলাদেশ
সায়মন সাদিকের পুরস্কার বা সম্মাননা
নায়ক সায়মন সাদিকের ক্যারিয়ার টানিং পয়েন্ট ছিল জাজ মাল্টিমিডিয়ার ছবি পোড়ামন। এই সিনেমাটি ছিল সুপারহিট সিনেমা। পোড়ামন সিনেমার জন্য সায়মন বর্ষসেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করান। যেটি প্রধান করে বেসরকারী সংস্থা বায়োস্কোপ। সায়মনের ক্যারিয়ার আরেকটি সফল সিনেমা হল জান্নাত। যেটিতে তার অভিনয় সবার নজর কাড়ে। জান্নাত সিনেমায় অভিনয় করে তিনি লাভ করেন চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের সবোর্চ্চ পুরস্কার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৮। তাছাড়া তিনি বেসরকারী আর অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন।
সায়মন সাদিক এর জন্ম ও পরিবার
সায়মন সাদিক ১৯৮৫ সালের ৩০ আগস্ট কিশোরগঞ্জ সদরে অবস্থিত কলাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সে অনুসারে তার বর্তমান বয়স হচ্ছে ৩৬ বছর। তার পিতা মো. সাদেকুর রহমান হচ্ছেন কিশোরগঞ্জ সদরের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তার মাতা উম্মে কুলসুম হচ্ছেন একজন গৃহিণী। সায়মন সাদিকরা ছিলেন দুই ভাই এবং তিন বোন, তাদের মধ্যে সায়মন ছিলেন চতুর্থ। কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। তিনি বেশ শান্ত স্বভাবের ছিলেন।
সায়মন সাদিক এর অভিনেতা হয়ে উঠার গল্প
পরিচালক জাকির হোসেন রাজুর হাত ধরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র জগতে আসা তার। জাকির হোসেন রাজুর একান্ত আগ্রহ এবং প্রচেষ্টায় অভিনয় জগতে পা রাখেন সায়মন। বাংলা চলচ্চিত্রের এক জুনিয়র শিল্পী সাগর শিকদারের মাধ্যমেই পরিচালক জাকির হোসেন রাজুর সাথে পরিচয় হয় সায়মন সাদিকের। জাকির হোসেন এর মাধ্যমেই নায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন সায়মন। তিনিই সায়মনকে নায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখান।
সেই স্বপ্নের ভিত্তিতে তখনকার চাকরি পর্যন্ত ছেড়েছিলেন সায়মন। কিন্তু নায়ক হয়ে উঠা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলনা। কিন্তু প্রায় দুই বছর পর আনন্দমেলা চলচ্চিত্রের প্রযোজনায় “জ্বী হুজুর” চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। এরই কষ্টদায়ক স্মৃতিগুলোকে স্মরণ করে সায়মন এক সাক্ষাৎকারে তার সিনেমা জগতে আসার গল্প বলেছিলেন।
সায়মন চলচ্চিত্র জগতে আসতে প্রায় ৪ বছর সময় পর্যন্ত জাকির হোসেন রাজুর সাথে ঘুরেছেন। রাজুর সাথে যাওয়া বিভিন্ন জায়গাতে তাকে শুনতে হয়েছিল নানান নীতিবাচক মন্তব্য। অনেক লোকেরা এমন বলেছিল যে এটা আবার কেমন নায়ক হলো। কোথা থেকে ধরে নিয়ে এসেছিলেন রাজু।
একটা সময় এসব কথা সহ্য করতে না পারে আমি ওয়াশরুমে গিয়ে অগোচরে কেঁদেছিলাম। পরে সব ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে চাইলে জাকির হোসেন স্যার আমাকে বাঁধা দেন, তিনি আমাকে বলেন লোকের কথা গুলো পুঁজি করে সামনে এগিয়ে যেতে। তার উৎসাহ পেয়ে আমি সামনে এগোনোর অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম।
সায়মন তার প্রথম চলচ্চিত্র জ্বী হুজুর এর মুক্তি উপলক্ষে দেওয়া একটি সাক্ষৎকারে তার পুরনো এসব স্মৃতি স্মরণ করে কথাগুলো শেয়ার করেছিলেন। তার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে আবারও জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত পোড়ামন ছবি তাকে এনে দিয়েছিল অসংখ্য প্রশংসা এবং জনপ্রিয়তা। পোড়মন চলচ্চিত্রে সায়মনের বিপরিতে অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহি। এরপর থেকে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সায়মন।
অন্যের কটু কোথায় কান না দিয়ে রাজুর উৎসাহ তাকে সামনে এগোনোর অনুপ্রেরণা জানিয়েছিল। এভাবে তিনি হয়ে উঠেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতাদের মধ্যে একজন।
নায়ক সায়মন সাদিকের উল্লেখযোগ্য কিছু কাজঃ
১। মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত জান্নাত
২। জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত পোড়ানম, জি হুজুর
৩। শাহীন সুমন পরিচালিত মাতাল
৪। সজল আহমদ পরিচালিত তুই আমার
৫। সারোয়ার হাসাইন পরিচালিত খাস জমিন
৬। সায়মম তারিখে পরিচালিত মাটির পরী
৭। পি এ কাজল পরিচালিত চোখের দেখা
৮। সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত ব্ল্যাক মানি
৯। নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত রানা প্লাজা
১০। মিজানুর রহমান শামিম পরিচালিত ধবংস মানব
১১। রাজু চৌধুরী পরিচালিত তুই শুধু আমার
১২। শফিক হাসান পরিচালিত স্বপ্নছোয়া
১৩। এ জে রানা পরিচালিত তোমার জন্য মন কাদে
১৪। আকাশ চারজি পরিচালিত মায়াবিনী
১৫। জেসমিন আক্তার নদী পরিচালিত জল শওলা সহ আরো অনেক সিনেমা।
সায়মন সাদিক কত টাকার মালিক?
সায়মন সাদিক এর ফ্যান দের বহু জিজ্ঞেস করা প্রশ্নগুলোর মাঝে একটি হচ্ছে তিনি কত টাকার মালিক, বা কত টাকা সে আয় করে থাকে অথবা অনেকে জিজ্ঞেস করেন তিনি প্রতি সিনেমা প্রতি কত টাকা আয় করে থাকেন। সায়মন সাদিক কত টাকা আয় করেন তার সঠিক জানা সম্ভব হয় না। তবে তিনি আনুমানিক কত টাকা আয় করেছেন তা উল্লেখ্য করা যেতে পারে। ধারণা করা হয় তিনি তার প্রথম সিনেমা জি হুজুররের জন্য পারিশ্রমিক পান ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মত ২০১২ সালে।
কিন্তু তার দ্বীতিয় সিনেমাতে তিনি তার পারিশ্রমিক দ্বিগুন করেন। জান্নাত ও পোড়ামন সিনেমায় অভিনয় করে সাফল্য পাওয়ার পর আস্তে আস্তে তিনি তার পারিশ্রমিক বাড়াতে থাকেন। তিনি বছরে অনেক ছবি করে থাকেন । এছাড়াও সায়মন সাদিক সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শো তে অংশগ্রহণ করেন। সেই শোতে পারফর্ম করে তিনি প্রায় ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা আয় করেন প্রতি শোতে।
তার বিজ্ঞাপন বাজারেও দারুন চাহিদা রয়েছে। তিনি ভিবিন্ন বিজ্ঞাপনে মডেলিং করে টাকা উপার্জন করে থাকেন। এছাড়াও তার রয়েছে নিজস্ব বিজনেস। সিনেমা জগতে আসার পূর্বে তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার বিজনেস থেকে প্রতি বছর আনুমানিক প্রায় ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা কিংবা তার অধিক পর্যন্ত উপার্জন করে থাকেন। সায়মন সাদিক বিভিন্ন কোম্পানির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সম্মানী স্বরূপ পেয়ে থাকেন অনেক টাকা ।
শেষ কথা
বন্ধুরা আজকে আমরা নায়ক সায়মন সাদিকের জীবন কাহিনী সম্পর্কে জানতে পারবেন। পাশাপাশি জানলাম কিভাবে তিনি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন সিনেমা জগতে। আপনারা যারা সায়মন সাদিকের ভক্তগণ রয়েছে তাদের কাছে সায়মন কে কেমন লাগে, তার কোন সিনেমা আপনার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছিলো অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন আমাদের।
এছাড়াও যদি আপনি সায়মন সাদিকের পাগল ভক্ত হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই তার সম্পর্কে কয়েক লাইন বলে যাবেন। বন্ধুরা আর্টিকেলটা আশা করছি আপনাদের ভালো লেগে থাকবে। যদি ভালো লেগে থাকে তবে মীনতি রইলো অবশ্যই শেয়ার করবেন, আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের মন্তব্য করে জানাবেন।