You are currently viewing নগর বাউল জেমস এর গান ও জীবনী-ফারুক মাহফুজ আনাম
জেমস

নগর বাউল জেমস এর গান ও জীবনী-ফারুক মাহফুজ আনাম

সারা দেশ ও পৃথিবীর মানুষ যাকে নগর বাউল জেমস হিসাবে চিনে তার প্রকৃত নাম হল ফারুক মাহফুজ আনাম। চট্টগ্রাম শহরে বেড়ে উঠা দেশসেরা রকস্টার জেমস ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন নওগাঁয়। তিনি শুধু দেশসেরা গায়কই না তিনি একাধারে প্রথম সারির গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার ও জনপ্রিয় মডেল।

এক নজরে নগরবাউল জেমস

মূলনামঃ ফারুক মাহফুজ আনাম

ডাকনামঃ জেমস, গুরু, নগরবাউল

জন্মঃ ২ অক্টোবর ১৯৬৪

জন্মস্থানঃ নওগাঁ, রাজশাহী, বাংলাদেশ

বেড়ে ওঠেনঃ চট্টগ্রাম

বর্তমান বসবাসঃ ঢাকা

পেশাঃ গায়ক, সুরকার, গীতিকার ও মডেল

ভাষাঃ বাংলা

লিঙ্গঃ পুরুষ

ধর্মঃ ইসলাম

জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী

বাবাঃ ড. মোজাম্মেল হক

বাবার পেশাঃ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান

মাতাঃ জাহানারা খাতুন

মায়ের পেশাঃ গৃহিণী

বৈবাহিক অবস্থাঃ বিবাহিত

প্রথম বিয়েঃ ১৯৯১

প্রথম স্ত্রীঃ কানিজ রাবেয়া রথি

বিচ্ছেদঃ ২০০৩

দ্বিতীয় বিয়েঃ ২০০২

দ্বীতিয় স্ত্রীঃ বেনজির সাজ্জাদ

মেয়ের নামঃ জান্নাত ও জাহান

ফিলিংস ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেনঃ ১৯৭৭

ফিলিংস ব্যান্ডের বর্তমান নামঃ নগরবাউল

প্রথম অ্যালবামঃ স্টেশন রোড (১৯৮৭)

প্রথম একক অ্যালবামঃ অনন্যা (১৯৮৮)

প্রথম বলিউডে প্লেব্যাকঃ গ্যাংস্টার সিনেমাতে (২০০৫)

প্রথম বলিউড গানঃ ভিগি ভিগি

লিজেন্ডারি রক ব্যান্ড নগর বাউল ও ফিলিংস

বর্তমানে নগর বাউল হিসাবে পরিচিত রক ব্যান্ড ফিলিংস এর প্রধান তিনি। নব্বই দশক ব্যান্ড সংগীতের বিপল্ব হয়েছিল তখনকার বিগ থ্রি অফ রক” এর মধ্যে অন্যতম ব্যান্ড ছিল ফিলিংস যা বর্তমানে নগর বাউল হিসাবে পরিচিত। বিগ থ্রি অফ রক এর অন্য দুটি ব্যান্ড ছিল এলআরবি এবং আর্ক যারা হার্ড রক সংগীত বিকাশ ও জনপ্রিয় করে তুলেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে সাইকেডেলিক রক এর প্রবর্তক হিসাবে সবার প্রথমে যার নামটি আসে তা হল ফিলিংস বা নগর বাউল। জেমস মানে উন্মাতাল সুর, ‘সিনায় সিনায় লাগে টান তাই তার পাগলা ভক্তরা তাকে গুরু নামে ডাকে।

জেমস এর ব্যক্তিগত জীবন

জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা জেমসের প্রথম স্ত্রীর নাম রথি। তাদের সংসার বেশিদিন টিকেনি ২০০২ সালে তারা আলাদা হয়ে যান। তারপর সুর সম্রাট তিনি বিয়ে করেন বেনজির সাজ্জাদকে। বেনজির সাজ্জাদ এর সাথে জেমসের প্রথম দেখা হয় ১৯৯৯ সালের একটি যার সাথে ১৯৯৯ কনসার্টে । তার জান্নাত ও জাহান নামের দুটি মেয়ে সন্তান আছে ও দানেশ নামের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

জেমস এর কর্মজীবন

জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী জিম মরিসন, মার্ক নফলার এবং এরিক ক্লাপটনের মত গুনি সঙ্গীত শিল্পীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে কর্মজীবনে আসে। কর্মজীবনের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া ব্যান্ড দল ফিলিংস এর মাধ্যমে তিনি প্রথমে সফলতার দেখা পান এবং তিনিই প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরু করেন বাংলা ভাষায়। পরবর্তীতে তিনি এহসান এলাহী ফানটিকে নিয়ে ফিলিংস ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন নগর বাউল। তিনি নগরবাউল ব্যান্ডের মূল ভোকাল হলেও গিটার বাজানোতেও তিনি দারুণ দারুন ছিলেন।

জেমস এর ফিলিংস ব্যান্ড থেকে বের হওয়া এলবাম

• স্টেশন রোড (১৯৮৮)
• জেল থেকে বলছি (১৯৯৩)
• নগর বাউল (১৯৯৬)
• লেইস ফিতা লেইস (১৯৯৮)
• কালেকশন অফ ফিলিংস (১৯৯৯)

জেমস এর নগর বাউল ব্যান্ড থেকে বের হওয়া এলবাম

• দুষ্টু ছেলের দল (২০০১)

জেমস এর সলো ক্যারিয়ার

দেশসেরা এই রক স্টার শুধু ব্যান্ড সঙ্গীত ছাড়াও সলো ক্যারিয়ার ছিল সমৃদ্ধ। তাকে নিয়ে গান করেছেন দেশের অনেক জনপ্রিয় কবি ও গীতিকা। আধুনিক কবিতার জনক কবি শামসুর রাহমান থেকে শুরু করে লিজেন্ডারি গীতিকার প্রিন্স মাহমুদ তার জন্য গান রচনা করেছেন। জাতীয় সম্পদ জেমস এর গলায় অসখ্য গান জনপ্রিয় হয়েছে। দেশের কোটি কোটি মানুষ তার গানের ভক্ত।

রকস্টার জেমস এর একক

• অনন্যা (১৯৮৮)
• পালাবে কোথায় (১৯৯৫)
• দুঃখিনী দুঃখ করোনা (১৯৯৭)
• ঠিক আছে বন্ধু (১৯৯৯)
• আমি তোমাদেরই লোক (২০০৩
• জনতা এক্সপ্রেস (২০০৫)
• তুফান (২০০৬)
• কাল যমুনা (২০০৮

জেমস এর বলিউড ক্যারিয়ার

ভারতের পশ্চিম বঙ্গেও নগর বাউল খ্যাত এই রক স্টার খুব জনপ্রিয় । ভারতের জনপ্রিয় বাঙালি সঙ্গীত পরিচালক প্রিতমের মাধ্যমেই বলিউডে প্রবেশ করে। প্রথমে তিনি বলিউডের গ্যাংস্টার নামক একটি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন ২০০৫ সালে। বলিউডে তার গাওয়া প্রথম গানটিই খুব জনপ্রিয় হয় যা টপচার্টের শীর্ষে ছিল প্রায় এক মাসের ও বেশি। তার গাওয়া ভিগি ভিগি এই গানটি সারা ভারত জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তারপরের বছর ২০০৬ সালে তিনি কন্ঠ দেন ও লামহে নামক চলচ্চিত্রের চল “চলে” গানে। চল চলে গানটি ও ভারতের মানুষ খুব গ্রহণ করে। পরর্বতীতে লাইফ ইন এ মেট্রো চলচ্চিত্রে আবারও প্লেব্যাক করেন ২০০৭ সালে। এই মুভিতে তিনি দুইটি রিশতে ও আলবিদা গানে কন্ঠ দেন। সর্বশেষ তিনি বেবাসি গানে কন্ঠ দেন ওয়ার্নিং হিন্দি ছবিতে।

তার হিন্দি চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক গান

• ভিগি ভিগি (২০০৫, গ্যাংস্টার)
• চল চলে (২০০৬, ও লামহে)
• আলবিদা (রিপ্রাইস), রিশতে (২০০৭, লাইফ ইন এ… মেট্রো)
• বেবাসি (২০১৩, ওয়ার্নিং থ্রিডি)

বাংলা চলচ্চিত্রে জেমস এর প্লে-ব্যাক

নগর বাউল এর বাংলা চলচ্চিত্রে ও অসংখ্য কালজয়ী গান রয়েছে। যদি ও তিনি চলচ্চিত্রে খুব কম প্লে-ব্যাক করেছেন। কিন্তু যে গানগুলো তিনি চলচ্চিত্রের জন্য গেয়েছেন সবগুলো গানই সুপারহিট হয়েছে। ২০০০ সালে কষ্ট মুভির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক শুরু করেন। তারপর তিনি একে একে মনের সাথে যুদ্ধ, মাটির ঠিকানা, দেশা দ্য লিডার, ওয়ানিং, সুইটহার্ট, সত্তা, জিরোডিগ্রী সহ আর কিছু ছবিতে প্লে-ব্যাক করেন।

জেমস এর বাংলা চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক গান

• কষ্ট মুভি 2000
• আসবার কালে আসলাম একা (মনের সাথে যুদ্ধ, ২০০৭)
• মাটির ঠিকানা (মাটির ঠিকানা, ২০১৩)
• দেশা আসছে (দেশা: দ্য লিডার, ২০১৪)
• এতো কষ্ট কষ্ট লাগে (ওয়ার্নিং, ২০১৫)
• বিধাতা (সুইটহার্ট, ২০১৬)
• তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম (সত্তা, ২০১৭)
• প্রেম ও ঘৃণা (জিরো ডিগ্রী)

মডেল জেমস

তিনি পেপসির একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে অংশগ্রহণ এর মাধ্যমে মডেলিং এ যুক্ত হন ২০০০ সালে। জনপ্রিয় এই বিজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ ছাড়া ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গে সম্প্রচার করা হ্য়। পরর্বতীতে এনার্জি ড্রিংক ব্ল্যাক হর্সের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন ২০০১ সালে। লাইফ ইন এ মেট্রো বলিউড চলচ্চিত্রে রার গাওয়া গানের কিছু অংশে অংশগ্রহণ করেন। বলিউডে তার গাওয়া আরেক গান বেবাসির ভিডিও চিত্রেও কাজ করেন জেমস।

জেমসের জাতীয় ও অন্যান্য পুরস্কার

দেশা দ্য লিডার মুভির দেশা আসছে গানের জন্য প্রথমবারের মত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান জনপ্রিয় এই রকস্টার। একই গানের জন্য মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পান ২০১৪ সালে। ২০১৭ সালে সত্তা মুভির তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম গানের জন্য দ্বিতীয় বারের মত মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পান। জেমস সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস এ বিজয়ী হয় সুইটহার্ট চলচ্চিত্রের বিধাতা গানের জন্যে।