You are currently viewing চঞ্চল চৌধুরীর জীবনী ও লাইফস্টাইল
চঞ্চল চৌধুরী

চঞ্চল চৌধুরীর জীবনী ও লাইফস্টাইল

চঞ্চল চৌধুরী একজন জনপ্রিয় বাংলাদেশী অভিনেতা। বাংলাদেশে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে যে তাকে চিনবে না। তিনি টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র উভয় ক্ষেত্রেই অভিনয় করেন। ছোট পর্দায় অভিনয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু করলেও এখন ছোট-বড় পর্দায় সমান জনপ্রিয় তিনি। তার অভিনীত প্রথম ছবি রূপকথার গল্প। মনপুরা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এবং সিনেমাটি দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং বক্স অফিসে সুপার হিট হয়। তিনি বেশ কয়েকটি মেগা সিরিজও অভিনয় করেছেন। চঞ্চল গান গাইতে ভালোবাসেন এবং ভূপেন হাজারিকা ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান শোনেন। এই প্রবন্ধে আমরা চঞ্চল চৌধুরীর জীবনী তুলে ধরছি।

বাংলাদেশী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ১৯৭৪ সালের ১লা জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের কামারহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রাধাগোবিন্দ চৌধুরী এবং মাতার নাম নমিতা চৌধুরী। তিনি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো, অভিনয়, গান এবং চিত্রকলায় সমানভাবে পারদর্শী। তার শৈশব কেটেছে আনন্দে ও নিশ্চিন্তে। তাদের বাড়ির পাশে পদ্মা নদী তাই স্কুল থেকে ফিরে নদীতে গোসল করতে ছুটে যায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত চঞ্চল ও সাহসী। শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি চৌধুরীর জন্মগত আগ্রহ তাকে একজন অভিনেতা হতে অনুপ্রাণিত করেছিল কিন্তু তার বাবা-মা তাকে একজন প্রকৌশলী হতে চেয়েছিলেন।

চঞ্চল চৌধুরীর শিক্ষা

চঞ্চল ১৯৯০ সালে উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। তারপর রাজবাড়ী সরকারি কলেজে ভর্তি হন এবং এই কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। চঞ্চল চৌধুরী ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে ভর্তি হন। এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় যোগ দেন। ছোটবেলা থেকেই গান, আবৃত্তি, নাটকে আসক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে অরণ্যক নাট্যদলের মাধ্যমে তার অভিনয় শুরু হয়। অরণ্যক সাথে তার প্রথম কাজ ছিল “কালো দুইত্তো”। গ্রাস চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে টিভি পর্দায় আসেন তিনি। মঞ্চ অভিনেতা তাল পাতার সেপাই-এর মাধ্যমে প্রধান চরিত্রে দর্শকদের কাছে পরিচিত হন। এটি পরিচালনা করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

চঞ্চল চৌধুরীর কর্মজীবন

চঞ্চল চৌধুরী মিডিয়া জগতে তার ক্যারিয়ারের শুরুতেই স্টেজ শো দিয়ে এগিয়ে যায়। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর তালপাতার শেপাই নাটকে অভিনয় করার সময় মঞ্চশিল্পী চঞ্চল চৌধুরী টাইমলাইনে আসেন। চঞ্চল ২০০৬ সালে তৌকির আহমেদের “রূপকথার গল্প” দিয়ে তার সিনেমায় অভিষেক ঘটে। তিনি ২০০৯ সালে গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত বিখ্যাত চলচ্চিত্র মনপুরা চলচ্চিত্রে সোনাই চরিত্রে অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা পান। মনপুরা সিনেমাটি বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যবসা করা চলচ্চিত্রের একটি। সিনেমাটি পরিচালনা করেন গুণী নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। তারপর তিনি অভিনয় করেন দেশের ইতিহাসের আরেকটি ব্যবসা সফল সিনেমা আয়নাবাজিতে। যেটি অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালনা করেন।

চঞ্চল ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধা ভিত্তিক সিনেমা বাবা তে অভিনয় করেন। দেশের বিখ্যাত পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর টেলিভিশন সিনেমা নির্মান করেন। তিনি সালাউদ্দিন লাভলু ও বৃন্দাবন দাস পরিচালিত “স্ত্রী মানে ইস্ত্রী” ছবিতে অভিনয় করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত চরিত্র মিসির আলীর চরিত্রে অভিনয় করেন দেবী সিনেমায় ২০১৮ সালে। সিনেমাটিতে তার বিপরিতে অভিনয় করেন দুই বাংলার প্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। বহু প্রতিভাবান অভিনেতা হিসেবে তিনি বিখ্যাত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। এমনকি তিনি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় কাজ করার সুযোগ পান। কিংবদন্তি অভিনেতা প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জির সঙ্গে কাজ করেন ‘মনের মানুষ’ ছবিতে। লালনের জীবন ও দর্শন অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করেছেন গৌতম ঘোষ।

আরো পড়ুনঃ মোশাররফ করিমের জীবনী, নাটক, সিনেমা ও গান সম্পর্কে

টেলিভিশন

তিনি তালপাতার শেপাই, শিয়াল পন্ডিত, হারকিপ্টে, মোহর শেখ, শান্তি অধিকারী, শান্ত কুটির এবং সাকিন সরিসুরির মতো কিছু জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালও করেছিলেন। তাছাড়া কিছু বিখ্যাত কাজ গোরুচোর, নুরুন্নাহার, বংশের বাটি, ভোবের হাট, ঘোর কুটুম, কলেজ-ছাত্র ইত্যাদি। হরকিপ্টে সালাউদ্দিন লাভলু পরিচালিত তার ক্যারিয়ারের অন্যতম বিখ্যাত ধারাবাহিক। তার অভিনয় জীবনে সাকিন সরিসুরি ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক। সে সময় চঞ্চল ‘জাপান ডাক্তার’ নামে পরিচিত ছিলেন এবং তার এই সংলাপ তার ভক্তদের মধ্যেও বিখ্যাত ছিল। সম্প্রতি তিনি তকদীর নামে একটি ওয়েব সিরিজ করেছেন। যেখানে গল্পের প্লট ছিল অনন্য এবং শক্তিশালী। তাকদীরে সে মৃতদেহের ফ্রিজার ভ্যানের চালক হিসেবে কাজ করে।

চঞ্চল মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সাথে প্রথম টিভি বিজ্ঞাপন করেছিলেন যার শিরোনাম ছিল “মা”। এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা পান। তারপর রবি, পিএইচপি অ্যারাবিয়ান হর্স সুপার এনএন, আকাশ ডিটিএইচ, পিউরিট ক্লাসিক, হাই-স্পিড হেয়ার কালার ইত্যাদি নিয়ে কাজ করেছেন। তাছাড়া আমরা তাকে অ্যাওয়ার্ড ফাংশনে অ্যাঙ্কর হিসেবে দেখেছি। কয়েক মাস আগে মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে কভার ফোক গান ‘যুবতী রাধে’ করেন।

পুরস্কার এবং সাফল্য

তিনি ৩৪ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ফেরদৌসের সাথে যৌথভাবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান। তিনি ১১ তম মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পান সেরা অভিনেতার জন্য, যেটি ছিল দর্শকদের ভোটে। তিনি বিখ্যাত আয়না বাজি” সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য দ্বিতীয় বার বাংলাদেশ সরকার কতৃক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এছাড়াও শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার জিতেছিলেন। ২০১৯ সালে, তিনি “দেবী” ছবির জন্য একই পুরস্কার পেয়েছিলেন।

চঞ্চল চৌধুরীর বিয়ে

চঞ্চল চৌধুরীর বিয়ে করেন ২০০৮ সালে একটি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ও শিক্ষক শান্তওয়ানা সাহাকে। চঞ্চল ও শান্তওয়ানা দম্পতির একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তাদের পুত্র সন্তানের নাম শৈশব রুদ্র শুদ্ধ।

শেষ কথা

চঞ্চল চৌধুরী খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একজন দক্ষ ও গুণী অভিনেতা হিসেবে সুনাম অর্জন করেন বাংলা দেশ এবং বিদেশে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ও ব্যস্ত অভিনেতা তিনি। চঞ্চল চৌধুরী একজন জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশী অভিনেতা।

চঞ্চল চৌধুরীর সোসাল মিডিয়াঃ

ফেইসবুক

ইনস্টাগ্রাম