You are currently viewing ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিকের জীবনী ও ক্যারিয়ার
মোহাম্মদ রফিক

ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিকের জীবনী ও ক্যারিয়ার

বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক জীবন্ত কিংবদন্তীর নাম মোহাম্মদ রফিক।বাংলাদেশ ক্রিকেটে আজ পর্যন্ত যত জন স্পিনার এসেছে এদের মধ্যে মোঃ রফিকের নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন অসাধারণ এক স্পিনার। তিনি সাধারণত বামহাতে Slow লেফট আর্ম বল করতেন। রফিক যতদিন ক্রিকেট খেলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে তিনি অনেক কিছু দিয়েছেন।

তিনি মূলত সব ধরনের ক্রিকেট খেলতেন এবং টেস্ট ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের নেতৃত্বদানকারী উইকেট শিকারি একজন বোলার ছিলেন। মোহাম্মদ রফিক মূলত প্রথম বাংলাদেশি প্লেয়ার যে আন্তর্জাতিক ওডিআইতে প্রথম ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার যিনি সবার আগে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ম্যাচে ১০০ উইকেট লাভ করেছিলেন।

মোহাম্মদ রফিকের ব্যক্তিগত জীবন

মোহাম্মদ রফিক ১৯৭০ সালের ৫ ই সেপ্টেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী এবং মাতার নাম ছিলো মনোয়ারা বেগম।

সাধারণত তার পূর্ণ নাম হচ্ছে মোহাম্মদ রফিক। তার একটি সুন্দর ডাকনাম ছিল সেটি হচ্ছে রফিক। তাকে সবাই ডাকনামে রফিক বলে ডাকতো।

মোহাম্মদ রফিকের পরিবারে তিন ভাই এবং এক বোন।মোহাম্মদ তার স্ত্রীর নাম হচ্ছে রোমানা বেগম এবং  দুইটি ছেলে এবং দুইটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

মোঃ রফিক ছোটবেলায় আগানগর হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তার প্রিয় খেলা ছিল ক্রিকেট তাছাড়া তিনি ছোটবেলায় ফুটবল খেলাও খেলতেন। রফিকের প্রিয় ক্রিকেটার ছিলেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। রফিক এখন বর্তমানে সাবেক ক্রিকেটার কোচ।

আরো পড়ুনঃ সাকিব আল হাসানের জীবনী

মোহাম্মদ রফিকের খেলোয়াড়ী জীবন

তিনি ১৯৮৫ সালে দ্বিতীয় বিভাগের খেলায় বাহাতি সিমার হিসেবে তিনি তার খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেছিলেন। তারপর তিনি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ বিমান ক্রিকেট দলে যোগদান করেন।

পরবর্তীতে মোহাম্মদ পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ওয়াসিম হায়দারের দ্বারা প্রভাবিত হয়  Left arm স্পিনার হয়ে ওঠেন। তখন রফিক ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ ক্রিকেটের হয়ে দ্বিতীয় সার্ক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন এবং সেখানে তিনি ভারতীয় এ দলের বিপক্ষে ২৫ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের জয়ে বিরাট অবদান রাখেন।

তাছাড়া তিনি ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ী বাংলাদেশ দলের একজন সদস্য ছিলেন। সবমিলিয়ে তিনি নয় ম্যাচে ১০.৬৮ গড়ে ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন।

আর মোঃ রফিক টুর্নামেন্টের সেরা বোলিং করেছিলেন সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ড এর বিপক্ষে। সেই ম্যাচে তিনি ২৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। তিনি কেনিয়ার সাথে ফাইনালে ১৫ বলে করেছিলেন ২৬ রানের একটি অসাধারণ ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেছিলেন।

তারপরে ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ আইএসএল এর নাম লিখানোর জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক ১৩ জন পেশাদার ক্রিকেটারদের সাথে তাকে ১০ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

কিন্তু রফিক একবছর পরে আইএসএল এর সাথে সমস্ত ধরনের সম্পর্ক শেষ করে আবার নিষেধাজ্ঞা ভেঙে খেলায় ফেরেন। তারপর আবার দেশের ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। মোহাম্মদ রফিক ঘরোয়া লিগে ঢাকা বিভাগ,সিলেট বিভাগ এবং ঢাকা ও ওয়ারির্সের হয়ে বিভিন্ন সময় খেলেছেন।

আরো পড়ুনঃ মাশরাফির জীবনী

মোহাম্মদ রফিকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

মোহাম্মদ রফিকের ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের প্রথম অভিষেক হয়।তার আগে ১৯৯৫ সালে ওয়ানডে ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল রফিকের সেই ম্যাচেও কিন্তু প্রতিপক্ষ ছিল ভারত।

মোহাম্মদ রফিক তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মোট ৩৩ টেস্ট এবং ১২৫ ওয়ানডে খেলেছেন।মোহাম্মদ ৩৩ টেস্টে করেছেন ১০৫৯ রান এবং উইকেট নিয়েছেন ১০০ টি। রফিকের টেস্টে সর্বোচ্চ রান হচ্ছে ১১১।

মোহাম্মদ রফিক তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১২৫ ম্যাচ খেলেছেন এবং রান করেছেন ১,১৯১ রান। তিনি ওয়ানডেতে ১২৫ টি উইকেট নিয়েছেন মোট। ওয়ানডেতে রফিকের সেরা বোলিং হচ্ছে ৪৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেওয়া। তার ওয়ানডেতে বোলিং গড় হচ্ছে ৩৭.৯১।

মোহাম্মদ রফিকের যত অর্জন

মোহাম্মদ রফিক যেমন একদিকে ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার দলের জন্য মাঝেমধ্যে তিনি এনে দিয়েছেন উইকেট। তেমনি অন্যদিকে তিনি দলের বিপদে ব্যাট হাতেও দারুন ব্যাটিং দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশ দলের যখন দ্রুত রানের প্রয়োজন হতো তখন তা কে ওপেনার হিসেবে আগে পাঠানো হতো।

ক্রিকেট বিশ্বের অবদান রাখার জন্য মোহাম্মদ রফিক কে বারবার বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুপার সিরিজে তিনি বিশ্ব একাদশের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং ২০০৭ সালে আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে প্রদর্শনী সিরিজে তিনি এশিয়া একাদশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। রফিক ২০২১-২১ সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজে তিনি বাংলাদেশ লিজেন্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন।

তিনি টেস্ট খেলা থেকে অবসর নেয় ২৯ শে ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সালে। রফিকের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পুরস্কার দিয়ে আখ্যায়িত করা হয়েছে সম্মানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে।

মোঃ রফিক বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন বিশেষ করে ক্রিকেটের ক্ষেত্রে। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ অনেক ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছে ক্রিকেটে।

তিনি ছিলেন বাংলাদেশের বোলিং এবং ব্যাটিংয়ে সমান কার্যকারী একজন খেলোয়াড়। মোহাম্মদ রফিকের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কেনিয়ার সাথে এনে দেওয়া সেই ঐতিহাসিক জয় এখনো মানুষের চোখে স্মরণীয় হয়ে আছে। তাছাড়া ভারতের হায়দ্রাবাদে ত্রিদেশীয় সিরিজে কেনিয়ার বিপক্ষে সেই জয়টিও তার কারণেই সম্ভব হয়েছিল। আর যার কারণে কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

তাছাড়া যে সময়ে ক্রিকেট বিশ্বে বোলারদের শাসন চলেছে সারাবিশ্বে সে সময় মোঃ রফিক তার hard-hitting ব্যাটিং দিয়ে বাংলাদেশ দলকে সকল সময়ে উদ্ধার করেছে। এককথায় রফিক নিজের জন্য যা অর্জন করতে পেরেছেন তার চেয়ে বেশি দিয়ে গিয়েছেন নিজের দেশকে।

মোঃ রফিক ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে লড়াকু সৈনিক এর নাম। যে সারা জীবন বুক চিতিয়ে খেলার মাঠে যুদ্ধ করে গিয়েছেন প্রতিপক্ষ টিমের সাথে। তিনি শিখিয়েছেন হারার আগে হার নয়। আর তার কারণে এখনো বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা কয়েকজন স্পিনার এর মধ্যে মোহাম্মদ রফিকের নাম আগে উঠে আসে।

আরো পড়ুনঃ তামিম ইকবালের জীবনী

পরিশেষে

পরিশেষে, মোহাম্মদ রফিক ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সফলতম একজন সেরা বাঁহাতি স্পিনার।তিনি দেশের হয়ে যতদিন ক্রিকেট খেলেছেন নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছেন দেশকে জয় এনে দেওয়ার জন্য। যার কারণে আমাদের দেশের ক্রিকেটের জীবন্ত এক কিংবদন্তি নাম হল মোঃ রফিক। বাংলাদেশ ক্রিকেট যতদিন রয়েছে তার নামও ততদিন থাকবে। কেননা রফিক হচ্ছে সেই সময়ের বাংলার ক্রিকেটের লড়াকু এক সৈনিক। যিনি যতদিন খেলেছেন ততদিন দেশের হয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করে গিয়েছেন।