You are currently viewing তামিম ইকবালের জীবনী ও ক্রিকেট ক্যারিয়ার
তামিম ইকবাল

তামিম ইকবালের জীবনী ও ক্রিকেট ক্যারিয়ার

তামিম ইকবাল-(Biography of Cricketer Tamim Iqbal), তামিম ইকবাল, বাংলাদেশের একজন তরুণ প্রতিভাবান বাংলাদেশী ক্রিকেটার। পূর্ণ নাম তামিম ইকবাল খান, তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তিনি ‘তামিম ইকবাল’ নামেই পরিচিত। তিনি ব্যাটিংয়ে বা’ হাতি এবং বোলিংয়ে ডান হাতি অফ ব্রেকার। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী যিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করেন। ওডিআই ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান করার জন্য তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে গণ্য করা হয়।

তামিম ইকবাল প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। শ্রীলংকার রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলংকান ক্রিকেটার ‘সনাথ জয়াসুরিয়ার’ করা ২৫১৪ রানের রেকর্ড ভেঙ্গে একই ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের অধিকারি হন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করনেই তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি রয়েছে।

তিনি ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ৮ মার্চ ২০২০ সালে মাশরাফি অবসর গ্রহণ করলে তামিম ইকবালকে বাংলাদেশের একদিনের আন্তর্জাতিক দলের (ওডিআই) অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়।

তামিক ইকবালের প্রাথমিক জীবন

বিশ্বসেরা এই ক্রিকেটারের জন্ম চট্টগ্রামের কাজীর দেওরির বিখ্যাত খান পরিবারে ১৯৮৯ সালের ২০ মার্চ। তামিমের উচ্চতা ৫ ফিট ৮ ইঞ্চি। তামিম ইকবালের বাবা ইকবাল খান ছিলেন একজন ফুটবলার ও ক্রিকেটের। তামিমের মা নুসরাত ইকবাল একজন গৃহিণী। পৈতৃকসূত্রে তামিমের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ভারতের বিহার প্রদেশের স্বনামধন্য পরিবারের এবং তার মাতৃকুলও উত্তর প্রদেশের সালেমপুর থেকে স্থানান্তরিত।

তামিম ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের আমেজে বড় হয়েছে,যেহেতু তার বাবা, চাচা আকরাম খান ও বড় ভাই নাফিস ছিলেন ক্রিকেটের। তার বাবা ছোট ছোট ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করতেন ছেলেদের প্রশিক্ষণ দিয়ার জন্য যাতে তারা ভাল ক্রিকেট খেলতে পারেন। তামিমের ইকবালের চাচা আকরাম খানও বাংলাদেশের জাতিয় দলের লিজেন্ডারি ক্রিকেটার। তামিরে ছোট একটি বোন রয়েছে।

খান সাহেবের প্রাথমিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার

তামিম ইকবাল শ্রীলঙ্কায় ২০০৬ সালের অনুর্ধ্ব-19 ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলেছিলেন। ২০০৭ সালে তামিম ইকবালের অভিষেক ঘটে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এবং ২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি প্রথম টেস্ট খেলেন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের বিপক্ষে খেলে ৫৩ বলে ৫১ রান করেন,যা ভারতের পরাজয়কে তড়ান্বিত করে।

তিনি ২০১১ সালে গ্রেম সোয়ান ও বীরেন্দ্র শেবাগ কে পিছনে ফেলে উইজেন ক্রিকেটার্স অ্যালামন্যাক এ বর্ষ সেরা ৪ ক্রিকেটারের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন এবং ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে বর্ষ সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন (প্রথম ছিলেন সাকিব আল হাসান)। তামিম ইকবাল চট্টগ্রাম বিভাগ ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেন এবং তিনি একমাত্র খেলোয়াড় যিনি সীমিত ওভারে সর্বোচ্চ রানের অধিকারী।

অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ডেভিড হাসি, যাকে জাতীয় দলে ডাকা হয়েছিল, তার স্বল্পমেয়াদী বদলি হিসেবে তামিম ইকবালকে নিয়োগ করা হয়েছিল। সেখানে থাকাকালীন সময় তামিম পাঁচটি ম্যাচ খেলেন এবং ১০৪ রান করেন (সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৪৭)। তামিমের ব্যাটিংকে ইংরেজী পত্রিকা ‘নটিংহাম পোস্ট’এ “solid if unspectacular” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। তামিম ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে এসেক্সের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন, কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে টুর্নামেন্ট ত্যাগ করেন।

আরো পড়ুনঃ মাশরাফি মুর্তজার জীবনী

তামিম ইকবালের ক্যারিয়ার

২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বিসিবি কর্তৃক বাংলাদেশ দলের ১৫- সদস্যের তালিকায় তামিম ইকবাল মনোনিত হন। ২০১৫ সালের ৫ মার্চএ গ্রুপ পর্বের ৪র্থ খেলায় স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ৯৫ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন। প্রথমে মাহমুদুল্লাহ এবং পরে সাকিব ও মুশফিকের সাথে জুটি বেঁধে এগিয়ে নিয়ে যান বাংলাদেশ দলের কৃতিত্বপূর্ণ জয়ের অভিমূখে। যার ফলে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল সর্বোচ্চ রানে বিজয়ী হয়। দিত্বীয় বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪,০০০ রান করেন তামিম ইকবাল। প্রথম বার করেন বাংলাদেশ ক্রিড়া জগতের সবচেয় বড় না সাকিব আল হাসান।

২০০৯ সালের জুলাই ও আগস্ট-এ বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে, খেলোয়াড় ও প্রশাসকদের মধ্যে বিরোধের কারণে দুর্বল হয়ে পরে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে তামিম তার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। অসাধারন ব্যাটিং করে তিনি বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক জয়ে সাহায্য করেছিলেন। এটি ছিলো বিদেশী টেস্টে তাদের প্রথম জয় এবং তার পারফরম্যান্সের জন্য তিনি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।

তার ইনিংস সম্পর্কে বলতে গিয়ে তামিম নিজেই বলেন, “এটি একটি ফ্ল্যাট উইকেট ছিল, এবং আপনি যদি কঠোর মনোনিবেশ করেন এবং সোজা ব্যাটে খেলেন, তাহলে স্কোর করার জন্য এটি নিশ্চই একটি ভাল ট্র্যাক। আমার বয়স মাত্র ২০ এবং আমি মাত্র ১১টি টেস্ট খেলেছি, আমি আশা করছি, এমন আরো অনেক ইনিংস দলকে দিতে পারব।” তামিম ইকবাল বাংলাদেশের হয়ে সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করেন ১৯৭ রান।

বাংলাদেশের কোচ, জেমি সিডন্স, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে তামিম সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন,”the makings of a world-class opener’’।

২০১০ সালের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে তামিম ১২০ বলে ৮৬ রান করেছিলেন। এই ইনিংসের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বাংলাদেশের দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ টেস্ট রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন, ল্যান্ডমার্ক ছুঁতে আর মাত্র ১৯ রানের দরকার ছিলো। এছাড়াও তিনি টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় যিনি ১০০০ টেস্ট রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। শচীন টেন্ডুলকার এবং আমাদের দেশের মোহাম্মদ আশরাফুল যথাক্রমে ১ম ও ২য় খেলোয়াড় যারা ১০০০ টেস্ট রানের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন।

২০১২ সালে এশিয়া কাপে ৪টি ম্যাচেই তামিম ইকবাল হাফ- সেঞ্চুরি করেন এবং ২য় বারের মতো বাংলাদেশ কোনো ত্রিদেশীয় ক্রিকেট সিরিজের ফাইনালে উঠে।

আরো পড়ুনঃ মোহাম্মদ রফিকের জীবনী

তামিম ইকবালের রেকর্ড ও অর্জনসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধরছি-

– তামিম প্রথম বাংলাদেশি যিনি ১০,০০০, ১১,০০০, ১২,০০০ এবং ১৩,০০০ আন্তর্জাতিক রান করেছেন।
– ২০১৮ সালের জানুয়ারী, ঢাকার শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তামিম বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি ওয়ানডেতে ৬,০০০ এবং ৭,০০০ রান ছুঁয়েছেন এবং রানাসিংহ প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সনাথ জয়সুরিয়ার ২,৫১৪ রানকে অতিক্রম করে ভেন্যুতে সর্বোচ্চ একক রান-স্কোরার।
– ২০১১ সালে, উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমান্যাকের বর্ষসেরা চার ক্রিকেটার এবং উইজডেনের বর্ষসেরা টেস্ট প্লেয়ারের একজন হিসাবে তার নামকরণ করা হয়, এবং শুধুমাত্র দ্বিতীয় বাংলাদেশী খেলোয়াড় হিসেবে তিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হন।

– তামিম একমাত্র বাংলাদেশী ক্রিকেটার যিনি খেলার তিনটি ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করেছেন।
– তামিম আন্তর্জাতিক ম্যাচে 24টি সেঞ্চুরি সহ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির অধিকারী।
– তামিম বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, টেস্ট, ওডিআই এবং সাকিব আল হাসানের পরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি সহ।

– ২০২০ সালের জানুয়ারিতে, তামিম ২০১৯-২০ বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী রাউন্ডে পূর্বাঞ্চলের হয়ে ৩৩৪ রানে অপরাজিত এবং একজন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের দ্বারা প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বোচ্চ স্কোর করেন।
– ২০২০-২১ বঙ্গবন্ধু T20 কাপে, তামিম প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান যিনি T20 তে ৬,০০০ রান করেন।
– ২০২১ সালের মার্চ মাসে, তামিম প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডে অর্ধশতক ছুঁয়েছিলেন।
– ২০২১ সালের মে মাসে, তামিম প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৪,০০০ আন্তর্জাতিক রান করার মাইলফলক অর্জন করেন।

আরো পড়ুনঃ মোহাম্মদ আশরাফুলের জীবনী

তামিম ইকবালের বিয়ে

২০১৩ সালের জুন মাসে চট্টগ্রামে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আয়েশা সিদ্দিকাকে বিয়ে করেন তামিম ইকবাল। স্ত্রী আয়েশা তার স্কুলের বান্ধবী এবং পরবর্তিতে আয়েশা মালয়েশিয়া চলে যান এমবিএ করার জন্য। তামিমের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক বিএনপি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া

তামিম ইকবাল দুই সন্তানের জনক। ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী তার প্রথম ছেলে সন্তান আরহাম জন্মগ্রহণ করে এবং ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর তার প্রথম মেয়ে আলিশবা জন্মগ্রহণ করে।