You are currently viewing ঢাকা টু ময়মনসিংহ ট্রেনের সময়সূচী, টিকেট ও ভ্রমণ গাইড
ঢাকা টু ময়মনসিংহ ট্রেন

ঢাকা টু ময়মনসিংহ ট্রেনের সময়সূচী, টিকেট ও ভ্রমণ গাইড

ঢাকা টু ময়মনসিংহ ট্রেনঃ এক সময়ে বৃটিশ – ভারতে স্থলপথে চলাচলকারী যানবাহনের মধ্যে সময় সাশ্রয়ী সেরা যান ছিলো ট্রেন। পরবর্তীতে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান এরপর এখন বাংলাদেশেও স্থলপথের অনেক অনেক যান সৃষ্টি হলেও ট্রেনের চাহিদা চলমান থেকে গেছে। বিশ্বের অনেক দেশে এখনো স্থল পথের যান হিসেবে ট্রেন কে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব খুব কম হওয়া সত্ত্বেও মানুষ ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে ট্রেনে করে যাতায়াত করে। ১১৮ কি.মি. এর এই রাস্তায় মানুষ যেন বাস বা অন্যান্য যানবাহনে চড়ার চেয়ে ট্রেন কে বেশি গুরত্ব দিয়ে থাকে। আর সেজন্য ৩ ঘণ্টার এই জার্নি যাত্রীদের কাছে খুব প্রিয় এবং আরামদায়ক।

রাজধানী ঢাকা টু ময়মনসিংহে ট্রেনে যাতায়াতের এক প্রশান্তির বিষয় হলো যানজট ব্যতীত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অতিক্রম করা যাচ্ছে। কারণ ট্রেন ছাড়া অন্য যানবাহনে করে যানজট মুক্ত ভাবে শান্তি নিয়ে ময়মনসিংহে পৌঁছানো অসম্ভব ব্যাপার গুলোর একটি। দ্বিতীয় মজার বিষয় হলো- খোলা জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে যাওয়ার মজাই অন্যরকম। প্রকৃত অর্থে ট্রেন জার্নি সহজ এবং আনন্দময়। বর্তমানে ট্রেনের টিকিটের ঝামেলা পোহানোর ভয়ে মানুষ অনলাইনেই ট্রেনের টিকিটের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করে পেলে।

রেলপথে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব ১২৩ কিলোমিটার। এই দূরত্বে মানুষ ভ্রমণ করতে খুব পছন্দ করে। এই পথে ৬টি আন্তঃনগর এবং ৫টি মেইল ট্রেন চলে। আন্তঃনগর ট্রেনের যাতায়াতের সময় লাগে ৩ঘণ্টা এবং মেইল ট্রেনের লাগে ৬ ঘণ্টা। টিকিটের মূল্য শোভন, শোভন চেয়ার, সিট, বার্থ, এসি বার্থ এসির আসনসহ বিভিন্ন সুব্যবস্থা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়।

★ তিস্তা এক্সপ্রেস ৭০৭ : এই ট্রেন টি ঢাকা থেকে ছাড়ে সকাল ৫:০৭ এবং ময়মনসিংহে পৌঁছায় ১০.৩৫ এ।
★ অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ৭০৫ : অগ্নিবীণা রাজধানী ঢাকা থেকে ছাড়ে ৯:৪০ টায় এবং পৌঁছায় ১২:৩৭।
★ যমুনা এক্সপ্রেস : এই ট্রেনটি ৪:৪০ এ রওনা দেয় এবং ময়মনসিংহে ৮:০০ টায় পৌঁছায়।
★ ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস : এই ট্রেনটি ছাড়ে ঠিক ৬টায় এবং পৌঁছায় ৯:২০ এ।
★ মহুয়া এক্সপ্রেস ৪৪ : এ ট্রেনের কোন ছুটির দিন নেই এবং এটি ঢাকা থেকে রওনা দেয় ৫টায় এবং ময়মনসিংহে পৌঁছায় ৯ টায়।
★ দেওয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেস ৪৪ : এই ট্রেন ঢাকা ছাড়ে সাড়ে ৩টায় এবং ময়মনসিংহে পৌঁছায় ৭টা ১৫।
★ মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস : এই ট্রেনের ছুটির দিন মঙ্গলবার। ট্রেনটি ঢাকা ছেড়ে যায় ১১টায় এবং ময়মনসিংহে পৌঁছায় ৫টায়।
★ হাওর এক্সপ্রেস : এই ট্রেনের ছুটির দিন হলো বুধবার। এটি ঢাকা থেকে পথ দেয় ১১:৫০ এ এবং পৌঁছায় ৩:৫০ এ।

ঢাকা টু ময়মনসিংহ ট্রেন

ঢাকা টু ময়মনসিংহের সচল ট্রেনের ভাড়ার তালিকা :

যেহেতু ট্রেনের টিকেট ভাড়া সুবিধা বা আসন ভিত্তিক সেহেতু ঢাকা টু ময়মনসিংহ ট্রেনের ট্রেনের আসন ব্যবস্থা জানা জরুরী। ঢাকা টু ময়মনসিংহ ট্রেনের আসন রয়েছে ৭ ধরণের। আর ৭ আসনের ভিত্তিতেই ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন-
১. শোভন = প্রতি সিট ১২০ টাকা
২. শোভন চেয়ার = ১৪০ টাকা।
৩. আসন = ১৮৫ টাকা।
৪. বার্থ = ২৮০ টাকা।
৫. স্নিগ্ধা = ২৭১ টাকা।
৬. এসি = ৩২২ টাকা।
৭. এসি বার্থ = ৪৮৩ টাকা।

★ ট্রেন কথন :

ভ্রমণকারী মানুষদের নিকটে সহজ এবং আনন্দের যাত্রা হিসেবে ট্রেনকে ধরা হয়। এটি স্থলপথের যান গুলোর মধ্যে সেরা যান। কারণ এখানে যানজটসহ সব ধরণের ঝামেলা থেকে দূরে থাকা যায়। ট্রেনে ভ্রমণ করে সঠিক সময় সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানোর পাশাপাশি সুন্দর সময় পার করা যায়। ট্রেন ভ্রমণ অত্যাধিক ভালো থাকার সময় গুলোর একটি। যে ব্যক্তি কখনো ট্রেন ভ্রমণ করেনি সে জীবনে অনেক অভিজ্ঞতা থেকে দূরে থেকে গেছে।

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার লোকাল যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোর বিবরণ :

১. মহুয়া কমিউটর :
মহুয়া ট্রেন একটি সচল ট্রেন, এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত একটি ট্রেন। এই ট্রেনের নম্বর হলো ৪০ থেকে ৪৪। যেটি রাজধানী ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত পাড়ি দেয়। আর এই ট্রেনের দূরত্ব অর্থাৎ ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জ যাতায়াতের গড় সময় হলো ৬ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। কিন্তু এটি যাত্রাপথে গাজিপুরে এবং ময়মনসিংহে যাত্রা বিরতি দেয়।

২. দেওয়ানগঞ্জ কমিউটর :
দেওয়ানঞ্জ ট্রেনটি মূলত কমিউটর ট্রেন। এটি একটি সচল ট্রেন যার নম্বর হলো ৪৭/ ৪৮. দেওয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেস বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত একটি যাত্রীবাহী ট্রেন। এটি দেওয়ানগঞ্জ বাজার থেকে পথ দিয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনে থামে। এই ট্রেনের যাত্রার গড় সময় ৬ঘণ্টা। এটি জামালপুর, গাজীপুর, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা রেলপথে যাতায়াত করে এবং যাত্রা পথের প্রতিটা স্টশনে বিরতি দেয়।
৩. জামালপুর এক্সপ্রেস :
দৈনিক চলাচলকারী রেল গুলোর মধ্যে জামালপুর এক্সপ্রেস অন্যতম। সচল এই ট্রেনটি বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত একটি কমিউটর ট্রেন। দেওয়ানগঞ্জ বাজার রেল স্টেশন থেকে এর যাত্রা শুরু হলেও এটি ময়মনসিংহ এবং গাজীপুরের যাত্রীদের আসন দিয়ে থাকে এবং এ স্টেশন গুলোতে যাত্রা বিরতি দেয়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে দেওয়ানগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত এর যাত্রার গড় সময় হলো ৬ঘণ্টা। জামালপুর কমিউটর এর নম্বর হলো ৫১ অথবা ৫২.

৪. তিস্তা এক্সপ্রেস :
বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন গুলোর অন্যতম একটি হলো তিস্তা ট্রেন। এটি সচল একটি ট্রেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে দ্বারা পরিচালিত এই ট্রেন ৮ স্থানে যাত্রা বিরতি দেয় এবং এই ট্রেনের নম্বর হলো ৭০৭ অথবা ৭০৮। এটি কমলাপুর ট্রেন স্টেশন থেকে দেওয়ানগঞ্জ বাজার রুটে চলাচল করে। আর ৮ স্থানে যাত্রা বিরতির স্টেশন গুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন অন্যতম একটি।

আরো আছে

৫. অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস :
ঢাকা থেকে তারাকান্দি রুটে চলাচলকারী ট্রেন হলো অগ্নিবীণা, এটি বাংলাদেশ রেলওয়ের দ্বারা পরিচালিত ট্রেন গুলোর একটি। দ্রুতগামী, বিলাসবহুল এবং সৌখিন মানুষদের প্রিয় একটি ট্রেন। এটির বর্তমান পরিচালক হলো পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ৭ স্থানে যাত্রা বিরতি করা এই ট্রেন রাজধানী ঢাকা থেকে তারাকান্দি রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করে।
৬. ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস :
বাংলাদেশ আন্তঃনগর ট্রেন গুলোর একটি হলো ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস। এই ট্রেন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ বাজার রেল স্টেশন পর্যন্ত চলাচলকারী ট্রেন এটি।

৭. যমুনা এক্সপ্রেস :
আন্তঃনগর রেল গুলোর অন্যতম হলো যমুনা এক্সপ্রেস। এটি বাংলাদেশ পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের অধীনে পরিচালিত। সচল এই ট্রেন ১৯৮৮ সাল থেকে চলাচল শুরু করে এবং এখনো পর্যন্ত ভালো সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এটি রাজধানী ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে তারাকান্দি রেলওয়ে পর্যন্ত চলাচল করে। এই ট্রেনের ভ্রমণ দূরত্ব ২১০ কিলোমিটার।

৮. মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস :
আন্তঃনগর রেল গুলোর অন্যতম একটি হলো মোহনগঞ্জ। এটি সচল রেলওয়ে সার্ভিস প্রদান করে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক পরিচালিত টেন গুলোর একটি হলো মোহনগঞ্জ। এই ট্রেনের নম্বর হলো ৭৮৯- ৭৯০. এই ট্রেনের সুব্যবস্থা গুলোর কয়েকটি হলো- পর্যাপ্ত ঘুমানোর জায়গা, সঠিক আসন বিন্যাস, খাদ্য সুবিধা এবং মালপত্র রাখার জন্য রেক রয়েছে।

উপসংহার :

রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের যাত্রীরা ট্রেনে চড়ার চমৎকার এই সুযোগকে কাজে লাগায়। খুবই শান্তিতে যানজট মুক্তভাবে তারা ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে এবং ময়মনসিংহ থেকে রাজধানী ঢাকায় চলে যেতে পারে। ঢাকা  টু ময়মনসিংহের ট্রেনের এই অল্প সময়ের জার্নি ও চমৎকার কাটে যাত্রীদের।