You are currently viewing কুয়াকাটা ভ্রমণ গাইড ও দর্শনীয় স্থান
কুয়াকাটা

কুয়াকাটা ভ্রমণ গাইড ও দর্শনীয় স্থান

কোয়াকাটা বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার লতাচাপলী ইউনিয়নে অবস্থিত। সৌন্দর্যের দিক থেকে হিসেব করলে এই জায়গাটি অতি আকর্ষণীয়। তাছাড়া এটি এমন একটি স্থান যেখান থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দুটোই একসাথে দেখা যায়। আর কুয়াকাটার এই বৈশিষ্ট্যটা এটাকে সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে ।

যারা কোয়াকাটা ভ্রমণ করতে চান আজকের আর্টিকেলে কোয়াকাটা ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। কুয়াকাটা ভ্রমণ গাইড সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্য পাবেন এই পোস্টের মাধ্যমে।

যারা কুয়াকাটা যেতে চান তারা চাইলে নদী অথবা সড়কপথে খুব সহজেই ঢাকা থেকে কোয়াকাটা যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে যদি কেউ কোয়াকাটা যেতে চান তাহলে লঞ্চে করে ঢাকা সদরঘাট থেকে সরাসরি পটুয়াখালী যাওয়া যায়।

আর যদি কেউ ঢাকা থেকে বাস ভ্রমণ করে কোয়াকাটা যেতে চান তাহলে গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি ঢাকা টু পটুয়াখালী সরাসরি চলে যেতে পারেন এবং সেখান থেকে কিছু টাকা দিয়ে সিএনজি ভাড়া করে কুয়াকাটা যেতে পারেন।

আরো জানুনঃ রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক যাওয়ার উপায় 

কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানসমূহ

শুটকি পল্লী

কুয়াকাটা নদীর পশ্চিম প্রান্তে জেলেদের পল্লীগ্রাম অবস্থিত। এই গ্রামের জেলেরা নভেম্বর থেকে মার্চ মাস এই সময়টাতে তাদের শুঁটকি তৈরির কার্যক্রম চালিয়ে থাকে।

জেলেরা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে নিয়ে এসে সমুদ্রের পাশে সেগুলো শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে থাকেন। তাই এই সময়টাতে যদি কোয়াকাটা ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে একবার জেলেদের শুটকি পল্লী থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

গঙ্গামতির জঙ্গল

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পূর্বদিকে গঙ্গামতির জঙ্গল অবস্থিত এবং এখানেই কোয়াকাটার শেষ।এই জঙ্গলটি বৈচিত্রে ভরা একটি জঙ্গল।জঙ্গলে বিভিন্ন ধরনের গাছপালাসহ আরো অনেক ধরনের পশু পাখি যেমন, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বনমোরগ-মুরগী বানর আরো অসংখ্য পশুপাখি রয়েছে। অনেকেই এই জঙ্গলকে গজমোতির জঙ্গল হিসেবেও উপাধি দিয়েছে।

ফাতরার বন

ফাতরার বন কোয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। সুন্দরবন যেমন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত একটি বন সেই দিক থেকে হিসাব করলে ফাতরার বন টি ঠিক ঐ রকমই।

ফাতরার বনে বানর, বনমোরগ, বুনো শুকর এবং নানান প্রজাতির পাখি দেখা যায়। তাই যদি কখনো কোয়াকাটা ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে একবার হলেও ফাতরার বন টি দেখে আসতে পারেন। কোয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে খুব সহজেই ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে যেতে পারবেন।

কুয়াকাটার কুয়া

কুয়াকাটার নামকরণ কিন্তু এসেছে এই কুয়াটা থেকেই। কোয়াকাটার এই বিখ্যাত কুয়াটি রাখাইনদের গ্রাম কেরানিপারায় অবস্থিত। এই গ্রামটিতে যাওয়ার মাধ্যমে প্রাচীন এই কুয়াটি দেখতে পারবেন।

তাই যে কুয়াটির জন্য এই ঐতিহাসিক স্থান কোয়াকাটা নামকরণ হয়েছে কোয়াকাটা ভ্রমণ করলে অবশ্যই এই কুয়াটি একবার দেখে আসবেন।

সীমা বৌদ্ধ মন্দির

কোয়াকাটার ঐতিহাসিক কুয়ার কিছুটা সামনেই সীমা বৌদ্ধ মন্দির টি অবস্থিত।এই মন্দিরটি কিছুদিন আগে কাঠের কাঠামো দিয়ে তৈরি থাকলেও এখন বর্তমানে এটি ভেঙে দালান তৈরি করা হয়েছে। আপনারা এই স্থানে গেলে দেখতে পারবেন অষ্ট ধাতুর তৈরি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি।

মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির

মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির কোয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় অনেকটাই দূরে। আপনাদেরকে এই বুদ্ধ মন্দির টি দেখতে হলে কোয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে রাখাইনদের আরেকটি গ্রাম মিশ্রিপাড়া যেতে হবে। অনেকের ভাষ্যমতে এই মন্দিরটির ভিতরে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।

কুয়াকাটা কোথায় থাকবেন

যারা কুয়াকাটা ভ্রমণ করতে চান তাদের থাকার জায়গা নিয়ে কোন ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয় না। পর্যটকদের থাকার জন্য কোয়াকাটায় রয়েছে আকর্ষণীয় বিভিন্ন ধরনের হোটেল।

আপনাদের বাজেট অনুযায়ী আপনারা এই সকল হোটেল সিলেক্ট করে নিয়ে থাকতে পারবেন।আপনারা যদি টিম হিসেবে কয়েকজন যান তাহলে এখানে রুম ভাড়া অনেকটা কমে যাবে।

কুয়াকাটায় সরকারি ছুটির দিনগুলোতে গেলে হোটেল খালি পাওয়া যেমন যায় না। তবে আপনি যদি ছুটির দিন বাদে অন্যান্য সময়গুলোতে যান তাহলে কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই আপনারা যে কোন ধরনের হোটেল পেয়ে যাবেন। কোয়াকাটার বিখ্যাত এবং আকর্ষণীয় কিছু হোটেলের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:-

★ইয়ুথ ইন হোটেল

★হলিডে হোমস হোটেল

★হোটেল গ্রেভার ইন

★সী ভিউ হোটেল

★বিচ হ্যাভেন রিসোর্ট

আপনারা চাইলে এই হোটেলগুলোতে কুয়াকাটা ভ্রমণ এর সময় থাকতে পারেন।

কুয়াকাটায় খাবার সুবিধা

আপনি কুয়াকাটায় যে হোটেলগুলোতে উঠবেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ হোটেল থেকেই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। আপনি যদি সেই হোটেলে উঠেছেন সেই হোটেলের খাবার খান তাহলে অনেক রেস্টুরেন্ট রয়েছে যে রেস্টুরেন্টগুলোতে আপনি খাবার খেতে পারবেন। তাই বুঝতেই পারছেন কোয়াকাটায় খাবার কোন অসুবিধা হবে না।

কুয়াকাটা ভ্রমণ এর খরচ

কুয়াকাটা ভ্রমণ এর খরচ কেমন হবে এখানে অনেকটা নিজেদের ওপর নির্ভর করে থাকে। অর্থাৎ আপনি এখানে গিয়ে কোন হোটেলে উঠছেন, কেমন খাবার দাবার খাচ্ছেন, কোথায় কোথায় ঘুরবেন আরো অনেক বিষয়ের ওপর কোয়াকাটা ভ্রমণ এর খরচটা নির্ভর করে থাকে।

কোয়াকাটায় আপনার কেমন খরচ হতে পারে তার টুর প্লান নিচে দেওয়া হল।নিচে দুই দিনের খরচ উল্লেখ করা হলো-

প্রথম দিনের খরচ

সকালের খাওয়া দাওয়ার পর আপনি দুপুরে একটি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়ায় মোটরসাইকেল ঠিক করতে পারেন। কোয়াকাটা দেখার মত অনেক আকর্ষণীয় জায়গা রয়েছে তার মধ্যে সেরা ২০ টি জায়গায় আপনি চাইলে ভ্রমণ করতে পারেন।

আপনি যদি সব জায়গা গুলো দেখেন তাহলে আপনার মোট খরচ হতে পারে ৭০০-৮০০ টাকার মতো। তারপরে আপনারা চাইলে বিকালে লেবুর বোন অথবা তিন নদীর মোহনা থেকে সূর্যাস্ত দেখতে পারেন।প্রথমদিনের মোটামুটি খরচ আপনার এইটাই।

দ্বিতীয় দিনের খরচ

আপনি চাইলে খুব ভোরে মোটর সাইকেলআলা কে নিয়ে চলে যেতে পারেন গঙ্গামতির চরে।তারপরে সূর্যোদয়, লাল কাকড়ার চর, আরো অনেক কিছু দেখে ফেরার পথে রাখাইন পল্লী এবং মার্কেট গুলো ভালভাবে দেখে আসতে পারেন।

তারপরে হোটেলে ফিরে এসে দুপুরের খাবার শেষ করে আবার ফাতরার বন টি দেখে আসতে পারেন।অথবা আপনি চাইলে এই টাইম টাতে কোন রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিতে পারেন।সবকিছু দেখা অর্থাৎ কুয়াকাটা ভ্রমন শেষ হয়ে গেলে আপনাকে একটু তাড়াতাড়ি বিকাল পাঁচটার দিকে লঞ্চের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যেতে হবে। কেননা বিকাল পাঁচটার দিকে এখানে বেশিরভাগ লঞ্চ ছেড়ে থাকে।

কুয়াকাটা ভ্রমণ এর মোট খরচ

কুয়াকাটা ভ্রমণের খরচ টা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে থাকে তাও ধারণা পাওয়ার জন্য কোয়াকাটা ভ্রমণ এর মোট খরচ টা নিচে উল্লেখ করা হলো। খরচের হিসাবটা ঢাকা থেকে কোয়াকাটা এই হিসেবে করা হয়েছে।

★ঢাকা থেকে পটুয়াখালী লঞ্চের গেলে আপনি 300 থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে যেতে পারবেন।

★তারপরে পটুয়াখালী থেকে কোয়াকাটা যেতে ১৪০ টাকা ভাড়া লাগবে বাসে করে।

★কুয়াকাটার সিঙ্গেল হোটেল ভাড়ার জন্য এক হাজার টাকা এবং ডাবল হোটেল ভাড়ার জন্য লাগবে পনেরোশো টাকা।

★মোটরসাইকেল ভাড়া দুই দিনের জন্য এখানে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা লাগবে।

★সকালের খাবার সহ দুপুরের খাবার নিয়ে মোট দুই দিনের খরচ হতে পারে ১০০০ টাকা।

★রাতের খাবারের জন্য দুই দিনের খরচ হবে ৪০০ টাকা।

★অন্যান্য খরচ হতে পারে ৫০০থেকে ৬০০ টাকার কাছাকাছি।

এটা সাধারণত কোয়াকাটা ভ্রমণ এর দুইদিনের সাধারণ খরচ। খরচের বিষয়টা ব্যক্তিভেদে কমবেশি হতে পারে। কে কেমন খরচ করবে এটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

পরিশেষে, কুয়াকাটা হচ্ছে এমন একটি স্থান যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত একই সময়ে দেখা যায়। এমন ঘটনা বিশ্বে অনেক বিরল। তাই আপনি যদি ভ্রমণ প্রেমী একজন মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কুয়াকাটা ভ্রমণ করে আসুন এবং নিয়ে আসুন ভ্রমণের আনন্দ