গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা

গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা ও গাইডলাইন

গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা: সন্তানের জন্য মা হলো বট বৃক্ষের মত, আর মায়ের কাছে সন্তান জন্ম দেওয়া হলো মহা মূল্যবান কিছু পাওয়ার মত। নারীরা এত ত্যাগ স্বীকার করে শুধুমাত্র সন্তানের মায়াময় মুখটি দেখার জন্য। সন্তান জন্ম দেওয়ার আগের সময়টি অনেক সুন্দর একটা সময়, এ সময় নারীরা অনুভূতি প্রবণ হয়, আবেগি হয়ে উঠে। তাছাড়া এ সময় অনেক নারীর জন্য খুব কষ্টকর ও হয়। কারণ শরীরের এ পরিবর্তন, খাওয়ার সমস্যা ঘুমানোর সমস্যা সহ আরো কত যে সমস্যা থাকে। এরপর ও একজন নারী তার নারীত্বের স্বাদ পায় একজন শিশু জন্ম দেওয়ার মাধ্যমে। 

সুস্থ শিশু জন্মের শর্তগুলোর একটি হলো প্রসূতি মায়ের যত্ন এবং সঠিক পরিচর্যা। আর তাই গর্ভবতী নারীর পুষ্টি তথা খাদ্য তালিকার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ এ সময়টি যেমন আনন্দের তেমনি কষ্টের ও। তাছাড়া একজন নারীর গর্ভ ধারণের প্রথম তিন মাস অনেক ঝুঁকি পূর্ণ, তখন অরুচি ভাব, ক্ষুধা মন্দা, বমিভাবসহ আরো অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দিয়ে রক্তশূন্যতা ও দেখা দিতে পারে। আর তাই  এ সময়ে অনেক বেশি সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত। পঞ্চম মাস থেকে সুষম খবার নিশ্চিত করতে হবে,  কারণ এ সময় থেকে ভ্রূণের বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়। খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন, আমিষ, খনিজ পদার্থ নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়ে। ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ও অনেক বেশি দেখা দেয়।  পুষ্টিবিদগণ গর্ভবতী নারীর সাধারণ আমিষ, ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের চাহিদার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভিটামিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন গ্রহণের পরামর্শ দেন। তাছাড়া প্রাণীজ গ্রহণেও অধিক গুরুত্ব রয়েছে। দুধ এবং বাদামে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা গর্ভবতী মা এবং অনাগত সন্তানের জন্য অনেক প্রয়োজন। আয়োডিন যুক্ত খাবার তথা সামুদ্রিক খাবার খাওয়াও প্রয়োজন কারণ আয়োডিন শিশুর মস্তিষ্ক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

খাদ্য সম্বন্ধে অনেক ভুল তথ্য প্রচলিত রয়েছে। আর সে ভুল তথ্য কে কেন্দ্র করে বহু বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষরা অন্তঃসত্ত্বা নারীকে খাবার কম খেতে দিয়ে গর্ভধারণকারী মা এবং অনাগত সন্তানকে পুষ্টি হীনতায় ফেলে দেয়। তাদের এ ভুল আদেশ নিষেধের কারণে হবু মা হাজারও সমস্যায় পড়ে এবং গর্ভস্থ সন্তান অল্প ওজন নিয়ে জন্ম হয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়। তারা এ তথ্য মেনে চলে মূলত সি-সেকশন তথা অপারেশন (সিজার) থেকে বাঁচার জন্য। তারা মনে করে কম খেলে গর্ভস্থ শিশুর ওজন কম হবে। আর গর্ভ ধারিণী মা বেশি খেলে বাচ্চার ওজন বেশি হয়ে নরমাল ডেলিভারি না করে অপারেশন করা লাগবে। তাদের এসব ভ্রান্ত ধারণা এবং কার্যকলাপের কারণে মায়েরা নানা রকম সমস্যায় পড়েন। তাদের আরো কিছু ধারণা হলো- শসা বা ঝালি কুমড়া জাতীয় খাবার খেলে অনাগত শিশুর চামড়া ফাটা হবে, শিং এবং শোল মাছ খেলে অনাগত শিশুর দেহ সাপের মত হবে। তাছাড়াও সূর্য এবং চন্দ্র গ্রহণের দিন মাকে উপোষ রাখার নিয়মসহ অগণিত ভ্রান্ত ধারণার কারণে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা নানারকম বিপদের মধ্যে পতিত হয়। 

গর্ভধারণ একজন নারীর শ্রেষ্ঠ আনন্দ গুলোর এক আনন্দ। এ সময় বা এ খুশি শুধুমাত্র সে নারীরই নয় বরং সে দম্পতির ও তার চারপাশের সবার। উত্তেজনাকর এই আনন্দ ময় সময়ে একজন মায়ের যথেষ্ঠ কেয়ার না হলে সন্তান ও ভালো থাকবেনা। অন্তঃসত্ত্বা মায়ের খাবার, ব্যায়াম এবং বিশ্রাম আবশ্যক নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকার গুরুত্ব অনেক।

আরো জানুনঃ গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ ও প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার নিয়ম

গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা

সকাল

মর্নিং সিকনেস থাকলে হালকা খাবার তথা বাদাম, বিস্কিট মুড়ি খেয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে ১/২ টি রুটি সাথে সবজি বা ডাল ১কাপ বা ১ডিম। ১১টার দিকে দুধ এবং ফলমূল অথবা ছাতু।  

আর মর্নিং সিকনেস না থাকলে- 

সকাল ৭-৯টার মধ্যে ৪টা রুটি বা পরোটা ২টি। একটি ডিম এবং  দুই কাপ সবজি।  

১১- টায় – মৌসুমি ফল, বাদাম, বিস্কিট, মুড়ি এবং  দুধ।  

দুপুর

২ কাপ অথবা ৩কাপ ভাত।  বা রুটি  

মাছ অথবা মাংস দুই টুকরাও।  

সামুদ্রিক মাছ। 

শাকসবজি, সালাদ, লেবু এবং ডাল। 

দুপুরের খাবারের পর কাঁচামরিচ এবং দই খেতে ভুলা যাবেনা।  

বিকাল : স্যুপ,ফালুদা, কাস্টার্ড অথবা যেকোন নাশতা সন্ধ্যা 

নোটঃ চা এবং কফি একদম নিষেধ। ৫-৬ টায় দুধ /  নুডলস/ বাদাম/ বিস্কিট / মুড়ি। 

রাত: 

ভাত ৪কাপ।  

মাছ অথবা মাংশ ২টুকরো।  

সবজি, ডাল। নোটঃ হজমে সমস্যা হয় এমন ধরণের কোন খাবারই খাওয়া যাবেনা। 

 

প্রতিদিনের খাবার তৈরি জনিত কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়:- 

  • বাইরের খাবার খাওয়া যাবেনা। একদম ঠাণ্ডা খাবার তথা আইসক্রিম, ঠাণ্ডা দই, রসমালাইসহ যাবতীয় ঠাণ্ডা কিছু প্রেগনেন্সির সময়ে নিষিদ্ধ খাবার হিসেবে বিবেচিত। 
  • এ সময়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ খাবারে কোন ধরণের জীবাণুর উপস্থিতি থাকলে সেটা অনাগত বাচ্চা এবং গর্ভবতী মায়ের সমস্যা করতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে পানি দ্বারা ভালো ভাবে পরিষ্কার নিশ্চিত করতে হবে। খাবারের পাত্র তথা থালা বাসন ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তাছাড়াও নিজের হাত ধোয়ার দিকেও নজর দিতে হবে। 
  • মাছ, মাংশ, ডিম, শেলফিশ, সবজি সহ যাবতীয় সব কিছু খাওয়ার আগে ভালো ভাবে পরিষ্কার এবং সিদ্ধ করে নিতে হবে। 
  • সবজি অথবা মাছ ও মাংশ কাটার সময় ছুরি ও কাটার বোর্ড ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। 
  • কাঁচা খাবার এবং রান্না করা খাবার ফ্রিজে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করতে হবে। 

আরো জানুনঃ মাছের তেলের উপকারিতা

১ম ৩মাসের খাবারের তালিকা : 

গর্ভধারণের প্রথম দিকের খাবার গর্ভবতী মায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সময়ের খাবার অনাগত সন্তানকে বেড়ে উঠতে প্রভাবিত করে। তাছাড়া এ সময়ের খাবার হতে হবে আয়োডিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন জাতীয় খাবার।  নিম্নে প্রথম তিন মাসের খাদ্য তালিকা:- 

  1. যব, চাল, বাজরা এবং ওটমিল জাতীয় খাবার হলো গোটা শস্য বা হোল গ্রেইন ধরণের খাবার। এ খাবার গুলোতে থাকা কার্বোহাইড্রেট, ডায়েটারি ফাইভার, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন ও খনিজ পদার্থ শরীরের জন্য ভীষণ উপকারি। গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে হোল গ্রেইট খাবার অপরিহার্য।  
  2. প্রোটিনের উৎস গুলোর মধ্যে হাঁস এবং মুরগি অন্যতম। এছাড়া এর মধ্যে ভিটামিন বি, জিংক ও আয়রন ও থাকে। আর তাই গর্ভধারণের প্রথমদিকে একজন গর্ভবতী মা’কে অবশ্যই এ ধরণের খাবার গ্রহণ করতে হবে 
  3. বাদাম অথবা বীজ জাতীয় খাবার প্রচুর ভিটামিন, প্রোটিন, ডায়েটারি ফাইভার, খনিজ পদার্থ এবং ফ্লাভোনয়েড সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে বাদাম বা বীজ। এ খাবার গুলো একজন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই থাকা জরুরি। কেননা এ খাবার গুলোতে অবস্থিত পুষ্টিগুণ গর্ভধারণকারী মা এবং শিশুর জন্য খুব প্রয়োজন। 
  4. একজন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় থাকা খাদ্যের একটি অংশ হিসেবে শাক এবং সবজিকে রাখা আবশ্যক। গাজর, টমেটো, ব্রোকলি, পালংশাক, ভুট্টা, বেগুন এবং বাঁধাকপিসহ অন্যান্য সবজিগুলো শরীরের জন্য ভয়ানক উপকারী আর গর্ভবতী নারীর জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা পূরণ করবে। 
  5. মাছ একটি অসাধারণ খাবার হিসেবে বিবেচিত। এটি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়ের জন্য ও অনেক ভালো। এটিতে থাকা প্রোটিন, ওমেগা, ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন, জিংক, আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস গর্ভবতী নারীর জন্য বিশেষ উপকারি। 
  6. গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বিকাশের ক্ষেত্রে ফলিক অ্যাসিড গুরুত্বপূর্ণ।  এটি বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভাবে কাজে দেয়। 
  7. ক্যালসিয়াম, আয়রন, প্রোটিন, আয়োডিন যুক্ত খাবার, ফাইবার, ওমেগা প্রতিটি গর্ভবতী মা’কে গর্ভাবস্থার প্রথম ৩মাস থেকে অবশ্যই ক্যালসিয়াম, আয়রন, প্রোটিনসহ সব রকমের পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। গর্ভবতী নারী ক্যালসিয়াম গ্রহণে বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকলে অস্টিওপোরোসিস নামক সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আয়রন গর্ভবতী মায়ের প্রধান চাহিদাগুলোর একটি। কেননা এ সময়ে রক্তের অত্যাধিক প্রয়োজন দেখা দেয়। আর তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতেই হবে। গর্ভবতী মায়ের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার তথা মাছ- মাংশ, ডিম এবং দুধ ছাড়াও জিংক, ফাইবার গ্রহণ বাধ্যতামূলক।  

আরো জানুনঃ গরুর চর্বি খাওয়ার উপকারিতা

দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক ফুড চার্ট – চতুর্থ মাসের খাদ্য তালিকা 

নানাধরণের পাশ্বপ্রতিক্রিয়ার মাস হিসেবে চতুর্থ মাস কে ধরা হয়, যদিও অনেকের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় মাসকে ধরা হয়। আবার তিন ত্রৈমাসিকের মধ্যে সবচেয়ে শান্তির ত্রৈমাসিক হিসেবে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিককে ধরা হয়। এই সময়ের খুশির খবর এই যে, সকালের সিকনেস, মাথাব্যথা, মুডসুইং সমস্যা দেখা দেওয়া ছাড়াও খাবারের প্রতি প্রচুর বিরক্তি ভাব দূর হয়ে খাবারে রুচি ফিরে পাওয়ার মত ঘটনা ঘটে থাকে। একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভস্থ সন্তানের সঠিক বিকাশের শুরু হয় চতুর্থ মাস থেকে। আর তাই চতুর্থ মাসে গর্ভধারণকারী নারীর শরীরের রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা শিশুর গ্রহণের ক্ষেত্রে কাজে লাগে। আর এ সময় থেকে গর্ভধারণকারী নারীকে তার শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। 

বাদাম তথা বীজ জাতীয় খাবার : 

 স্যামন, সয়াবিন, আখরোট, চিয়া, ফ্লাক্স এবং বাদামের মত খাদ্যে রয়েছে ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড যা ত্বক, চুল এবং হাড় বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে উপযোগী।  

ফল ও শাকসবজি

গর্ভধারণকারী মায়ের খাবার চার্টে প্রতিদিন পাঁচ ধরণের ফলের উপস্থিতি নিশ্চয়তা করতে হবে। আর সালাদ হিসেবে কাঁচা সবজির ব্যবহার ও চমৎকার। 

প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট

শাক, মসুর, বাদাম, সয়াবিন, বীজ, মাখন, মাংস, মুরগি তথা প্রোটিন জাতীয় খাবারে শিশুর স্বাস্থ্য,  টিস্যু এবং ডিএন এর বিল্ডিং ব্লক তৈরি করে। 

ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, জিংক এবং ভিটামিন সি

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার তথা দুধ, দই, পনির, বাদাম এবং ব্রকলি গর্ভস্থ শিশুর হাড় বিকাশের ক্ষেত্রে উপযোগী। তাই এ সময়ে ক্যালসিয়াম এর চাহিদা পূরণে খাবার গুলো খাওয়া আবশ্যক। 

প্রোটিন জাতীয় খাবার তথা  সয়াবিন, বীজ, শাক, বাদাম, মসুর ডাল, মাংশ এবং মুরগি গর্ভধারণের তৃতীয় মাসের পর অর্থাৎ দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে খুবই প্রয়োজনীয় খাবার। কার্বোহাইড্রেট এর জন্য ভাত, রুটি, আলু, পাস্তা গ্রহণ করা যেতে পারে। 

জিংক গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্র এবং ইমিউনের বিকাশে উপযোগী। মুরগি-মাংশ, পালংশাক, গম, স্কোয়াশ বীজ, বাদাম এবং মটরশুঁটি শরীরের জিংকের চাহিদা পূরণ করবে। এতে গর্ভবতী মা এবং গর্ভস্থ শিশু দুজনেই ভালো থাকবে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার আয়রন শোষণে কার্যকর। 

আরো জানুনঃ ব্রয়লার মুরগি খাওয়ার অপকারিতা

৫ম মাসের খাদ্য তালিকা। 

গর্ভস্থ শিশুর পঞ্চম মাস চলাকালীন সময়ে তার কিডনি, মস্তিষ্ক এবং লিভার গঠন শুরু হয়। আর এই মাস থেকেই গর্ভবতী মা’কে বেশি সচেতন থাকতে হয়। তাছাড়া অতিরিক্ত খাবার এবং প্রোটিন- ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে ৩৪৭ ক্যালোরি পূরণ করতে হবে। বারবার ক্ষুধার্ত হলে বারবার বিভিন্ন ধরণের খাবার খেতে হবে। একঘেয়ে এক রকমের খাবার  প্রতিদিন খাওয়া যাবেনা। 

  • প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ফ্যাট বিহীন খাবার খেতে হবে দুধ, পনির, দই ছাড়াও ডুমুর, খেজুর,তুঁত ফলেও প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে। 
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা সমাধানে কাজে দেয়।  
  • গর্ভাবস্থার ৫ম মাসে প্রচুর পানি ছাড়াও তরল খাবার খেতে হবে বেশি। ৬-৮ গ্লাস পানি খাওয়ার মাধ্যমে ইউটিআই দূর করা যেতে পারে। তাজা ফলের রস ভীষণ উপকারি এ সময়ে।এটি শরীরে ডিটক্সিফাই করে এবং কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার পূরণ করে। 
  • এই সময়ে অতিরিক্ত রক্তের জন্য ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা আবশ্যক। 
  • ভিটামিন ডি হাড়কে মজবুত করে। আর গর্ভস্থ শিশুর হাড়কে শক্তিশালী, দাঁতের সঠিক বিকাশ, সুন্দর ত্বক এবং ভালো দৃষ্টিশক্তির জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন। 

নোটঃ কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্বল ও বদহজমের সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। সেজন্য ময়দার তৈরিকৃত খাদ্য সামুদ্রিক মাছ এবং ডিম রান্না বিহীন বা আধ -সিদ্ধ খাওয়া যাবেনা। চা-কফি, মশলাযুক্ত খাবার, লবণ- চিনি খাওয়া উচিত হবেনা। 

৬ষ্ঠ মাসের খাদ্য তালিকা 

গর্ভস্থ ক্রম বর্ধমান শিশু এই সময়ে এসে রুটিনে অভ্যস্ত হবে। আর তাই সঠিক নিয়মে সঠিক সময়ে খাওয়াদাওয়া বিশ্রামে নেওয়া শুরু করতে হবে। 

শারীরিক উপসর্গ:  

১. হাত এবং পা ফুলে যাওয়া 

২. পিঠের নিচের দিকে ব্যথা হওয়া। 

৩. গ্যাস এবং বদহজমের মারাত্মক সমস্যা। 

৪. যোনিস্রাব বেড়ে যাওয়া। 

৫. ঘনঘন ক্ষুধা লাগা। 

প্রচুর পরিমানে পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ খাবার গ্রহন করতে হবে। আর ভিটামিন সি আবশ্যক। এ সময়ে দাঁতের মাড়ির সমস্যা ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সংক্রান্ত সমাধান হলো ভিটামিন- সি গ্রহণ। 

৭ম মাসের খাদ্য তালিকা। 

তৃতীয় ত্রৈমাসিক সময়টা হলো অনেক চিন্তা এবং সচেতন থাকার সময়। এটি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক থেকে ভয়ানক সময়। এ মাসে গর্ভস্থ শিশুর অনেক পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তন সঠিক ভাবে সঠিক নিয়মে চলার উত্তম উপায় হলো সঠিক ডায়েট চার্ট। এ সময়ে একজন গর্ভধারণকারী মা’কে এমন খাবার খেতে হবে যা ওজন নিয়ন্ত্রণ করবে কিন্তু পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে। এই মাসে গর্ভবতী নারীকে অতিরিক্ত ৪৫০ ক্যালোরি পূরণ করতে হবে। আয়রন এবং প্রোটিনের বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে এ মাসে।  গাজর, টমেটো, লেটুসসহ মিশ্র সবুজ শাকের সালাদ গ্রহন করতে হবে। আচারে সোডিয়াম থাকার কারণে এ সময়ে আচার বাদ দিতে হবে। তাছাড়া ফল হলো বিশেষ স্বাস্থ্যকর।  ভিটামিন এবং খনিজে পরিপূর্ণ ফল গ্রহণ করা আবশ্যক। 

৮ম মাসের খাদ্য তালিকা  

৮ম মাসের দিকে গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসবের প্রস্তুতি পুরোপুরি ভাবে নিতে হবে। কারণ এ সময়ে জরায়ু বড় হয়ে পেটে ভীষণ চাপ প্রদান করে। আর সেজন্য শরীর ক্লান্তি ভাব দেখা দেয়। গর্ভবতী মায়ের দেহের চাহিদা ছাড়াও অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ বাধ্যতামূলক।   

  • প্রোটিন : গর্ভবস্থার এ সময়ে একজন মা’কে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ৭৫ থেকে ১০০ গ্রাম প্রোটিন জাতীয় খাদ্য রাখতে হবে। 
  • এ সময়ে গর্ভবতী মায়ের পানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।  কেননা এ সময় মা শুধু ২জনের খাবার গ্রহণ করবেন না, ২জনের পানির চাহিদাও পূরণ করতে হবে। 
  • সবজি: একজন মা তার গর্ভধারণের পথ যত অতিক্রম করবে, তার কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজমের পরিমাণ তত বাড়বে। এ সময়ে প্রচুর শাকসবজি খাওয়া আবশ্যক।  

৯ম মাসের খাদ্য তালিকা 

৯ম মাস মানেই গর্ভধারণকারী মায়ের জন্য ভয়ের মাস। কিন্তু আমাদের উচিত সেসব মা কে সাপোর্ট করা, আর তারা যাতে ভয় না পেয়ে সময়টাকে উপভোগ করে সেজন্য সাহায্য করা এবং সন্তান প্রসবের জন্য যাতে প্রস্তুতি নিতে থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখা। এই মাস হলো বিশ্রামের মাস। পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন শেষ মাসে। 

১. গর্ভবস্থার নবম মাসে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার তথা পালংশাক, গাজর, মিষ্টি আলু, ক্যান্টালুপ সহ সকল ধরণের ভিটামিন এ যুক্ত খাবার ডায়েট চার্টে রাখা আবশ্যক।  

২. প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি সমৃদ্দ খাবার খেতে হবে গর্ভবস্থার এ সময়কালে। সাইট্রাস ফল গুলো- ফুলকপি, পাতাকপি, টমেটো, স্ট্রবেরি, ব্রকলি খাওয়া আবশ্যক। 

৩. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার তথা দুগ্ধ জাত খাবার, শাক, বাদাম সহ ক্যালসিয়ামের সকল খাবার খাওয়া আবশ্যক। 

৪. আয়রন সমৃদ্ধ তথা মাছ, ডিম, মুরগি মাংস, মসুর, মটর, পালংশাক, সয়াবিন সহ সকল আয়রন যুক্ত খাবার প্রতিদিন ৩টি করে খেতে হবে।  

৫. ফাইভার তথা ক্ষেতের শাক- সবজি, ফল-মূল বা  সমুদ্রের ফলমূল, শাক-সবজি খেতে হবে। 

স্পিনা বিফিডার থেকে বেঁচে থাকার জব্য ফলিক অ্যাসিড খুব উপকারি। প্রতিদিনের ফুড চার্টে ফলিক অ্যাসিড তথা সবুজ শাক বা সবজি, ছোলা মটরশুঁটি খুব প্রয়োজন। 

নোটঃ শস্য অথবা শস্যের রুটি ভীষণ প্রয়োজন। গর্ভবতী মা কে প্রতিদিন ৬-১০ টি করে শস্যের রুটি খেতে হবে। দুগ্ধজাত খাবার, ফল ২টি থেকে ৪টি, প্রচুর শাক-সবজি, প্রোটিন খাবার ৩টি করে এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ৪লিটার পানি পান করতে হবে। গর্ভবস্থার এবং সাধারণ সময়ের খাবার হিসেবে কালোজিরা, মধু,  বাদাম এবং খেজুর ভীষণ উপকারী খাবার। প্রতিমাসের প্রদর্শিত ফুড চার্ট অনুযায়ী প্রচুর স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খেতে হবে। তবে বেশি পরিমাণে ভাত খাওয়া যাবেনা। যেসব বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ মনে করেন গর্ভবতী মা বেশি খেলে বাচ্চা বড় হয়ে যায় তাদের তথ্য ভুল বলে প্রমাণিত। খাবার না খেয়ে পেটে পর্যাপ্ত জায়গা থাকার কারণে বাচ্চা বড় হয় এবং সঠিক ফুড চার্ট না মানার কারণে বাচ্চার সঠিক বিকাশ হয়না। অর্থাৎ ঠিক সময়ে বাচ্চার ঠিক ওজনের পাশাপাশি বাচ্চার দেহের অংশের বিকাশ হবেনা। সুতরাং সঠিক গাইডলাইন মেনে চলা আবশ্যক। প্রতিমাসে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। 

উপরিউক্ত ফুড চার্ট গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা।  বিশেষ ফুড চার্ট পেতে গর্ভবতী মা কে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করতে হবে। খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি একজন মা’কে ডেলিভারির জন্য শক্তি প্রদান করে। সেজন্য প্রতিটি গর্ভবতী মা কে অবশ্যই গর্ভবস্থার ফুড চার্ট মেনে চলতে হবে। এতে করে আশা করা যায় প্রেগনেন্সি সময় অনেক ভালো কাটবে এবং আশা করা যায় সুস্থ ও সুন্দর সন্তানের। আশা করি গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে অনেক নতুন কিছু জানতে পেয়েছেন যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। ধন্যবাদ রিডার আমাদের গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা সম্পঈকে সম্পন্ন লেখাটি পড়ার জন্য।

Tags: No tags

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *