আন্দালিব রহমান পার্থ

আন্দালিব রহমান পার্থ এর জীবনী ও রাজনীতির ইতিহাস

স্বাগতম জানাচ্ছি সকল পাঠককে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা একজন সৎ ও নির্ভিক রাজনীতিবিদকে নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। আর তিনি হলেন আন্দালিব রহমান পার্থ। যিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, সভাপতি এবং ভোলা-১ আসনের মাননীয় এমপি। সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে জানবো, তার শৈশব, শিক্ষাজীবন এবং তিনি কিভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হলেন। এছাড়াও তার সম্পর্কে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো।

আন্দালিব রহমান পার্থ বাংলাদেশের সেরা রাজনীতিবিদদের মধ্যে একজন অন্যতম। তার নানারকম মানবিক গুণাবলি দিয়ে বাস্তবিক জীবন সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়। তিনি বিভিন্ন টিভি টকশো, ইন্টারভিউ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকার দলের নানারকম কার্যক্রমের কঠোর ও যৌক্তিক সমালোচনার মাধ্যমে টেলিভিশন চ্যানেল, গণমাধ্যম  সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন। তিনি শুধু আলোচিতই নন, নানারকম সংগ্রামী কাজের জন্য অনেকের কাছে সমালোচিতও বটে। তিনি কাউকে কখনো ছাড় দেননি, সবসময় সত্যের পথে অটল থেকেছেন। তিনি হলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ এবং আইনজীবি।

আন্দালিব রহমান পার্থ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

আন্দালিব রহমান পার্থ ১৯৭৪ সালের ২০ এপ্রিল ঢাকায় ধানমন্ডির একটি ক্লিনিকে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতা-মাতার প্রথম সন্তান এবং তার দুজন ভাই আছে। তারা হলেন ড. আশিকুর রহমান শান্ত যিনি একজন অর্থনীতিবিদ এবং সবার ছোট ওয়াছিকুর রহমান অঞ্জন যিনি একজন ব্যারিস্টার। তার বাবার নাম নাজিউর রহমান মঞ্জুর, যিনি একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন ভোলা-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। আন্দালিব রহমান পার্থ এর মা, শেখ রেবা রহমান হলেন শেখ পরিবারের একজন সদস্য এবং ফজলুল করিম সেলিমের বোন।

আন্দালিব রহমান পার্থ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন ঢাকার সেন্ট জোসেফ ও গভঃমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে। এরপর আইন বিষয়ে পড়ার জন্য ১৯৯১ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান তিনি এবং সেখান থেকে এ লেভেল শেষ করে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি করে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি দীর্ঘ চার বছর কাজ করেন প্রখ্যাত আইনজীবী, ব্যারিস্টার রফিকুল হকের সাথে। এরপর ২০০০ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালের মেয়ে শেখ সায়রা রহমানকে বিবাহ করেন। বর্তমানে তাদের ২টি সন্তান রয়েছে এবং তাদের নাম দিনা বিনতে আন্দালিব ও মাহাম সানজিদা রহমান।

তার পরিবার রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলো। একদিকের তার বাবা এবং অন্যদিকে তাঁর মামাও ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ। দুই পরিবারে প্রায় সময় আসা-যাওয়া করতেন বিখ্যাত ও জনপ্রিয় অনেক রাজনীতি নেতারা। মূলত তার বাবার হাত ধরেই তিনি রাজনীতি অঙ্গনে প্রবেশ করেন। পার্থ সবসময় তার বাবার সাথে থাকতেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতেন এবং দেখতেন সাধারন মানুষেরা তার বাবা, নাজিউর রহমান মঞ্জুকে কতটা ভালোবাসতেন ও ভরসা করতেন।

আন্দালিব রহমান পার্থ কিভাবে রাজনীতিতে আসলেন?

২০০০ সাল থেকে তিনি তার বাবা, নাজিউর রহমান মঞ্জুর হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখরি হলেও তিনি এর অনেক আগে থেকেই বাবার কাছ থেকে রাজনীতি বিষয়ে অনেক কিছু শিখে আসছেন। এরপর ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে তার বাবার আকষ্মিক মৃত্যু হলে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন এবং প্রত্যক্ষ ও সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী, ইউসুফ হুমায়ুনকে পরাজিত করে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জয়ী হন।

তিনি বলেন, “আমি বন্ধুদের সাথে খেলতে গেলে অনেক সময় বাবা আমাকে মানা করতেন এবং আমাকে তার সাথে রাখতেন। তিনি যখন যাকাত দিতেন তখন আমাকে বলতেন যে, তুমি দাও, এখন থেকে অভ্যাস করে তোলো। আমি ছোটবেলা থেকেই অনেক রাজনীতি নেতাদের সাথে ঘোরাফেরা করতাম, তাদের আশেপাশে থাকতাম। আমার কাছে পলিটিশিয়ান বা রাজনীতিবিদরাই প্রকৃত হিরো। যেহেতু ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে রাজনীতি শিখেছি সেহেতু হঠাৎ করে বাবা মারা যাওয়ায় আমাকে জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে মিশে যেতে কষ্ট হয়নি। যদি সেই ছোটবেলায় রাজনৈতিক শিক্ষা অর্জন না করতাম তাহলে আজ হয়তো নেতা, এমপি হতে পারতাম কিন্তু রাজনৈতিক কর্মী হতে পারতাম না।”

পার্থর সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাবার পরিবর্তে ভোলা-১ আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়ান তিনি। তার বাবাকে ভোলাবাসী প্রচন্ড ভালোবাসতেন, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস করতেন। হয়তো তার বাবার কারণেই তাকে পুরো ভোলাবাসী তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতার বিপক্ষে তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেন। বর্তমানে তিনি সুনাম ও সুখ্যাতিতে তার বাবা, নাজিউর রহমান মঞ্জুরকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন।

তিনি বলেব, “আমি কোনো সরকারী দলের সংসদ সদস্য ছিলাম না তাই কাজ করার জন্য বেশি সুযোগ পাইনি। যতটুকু সম্ভব হয়েছে আমি ভোলাবাসীর জন্য করে গেছি। কখনো দুর্নীতি করিনি এবং দুর্নীতিকে প্রস্রয় দেয়নি। এজন্য ভালোর মানুষ আমার পাশে আছে। সময় মতো এলাকার রাস্তা ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদির উন্নয়ন ও দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চাই। বাবার আদর্শ ধরে রেখেছি এবং সারাজীবন তার আদর্শেই এগিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করতে চাই।”

রাজনীতিবিদ, অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী হিসেবে পরিচিত হওয়ার পাশপাশি তিনি একজন ভালোও বক্তা হিসেবে জাতির কাছ থেকে প্রচুর সুনাম অর্জন করে নিয়েছেন ইতোমধ্যে। এই সুবক্তা, আন্দালিব রহমান পার্থ সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দেন ১৯৯৬ সালের ঢাকার তেজগাঁয়ে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে। যেটা ছিলো ভোলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠান এবং নাজিউর রহমান মঞ্জুর সঙ্গে নেতাকর্মীদের পুনর্মিলনী।

১৯৯৯ সাল থেকে বিএনপি এর সঙ্গে জোট করে কাজ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বা বিজেপি। কিন্তু ২০১৯ সাকে দলটির চেয়ারম্যান, আন্দালিব রহমান পার্থ ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন। বিএনপির নানা সংকটময় সময়ে পাশে থেকেছেন পার্থ। কিন্তু ২০১৯ সালে কেন তাহলে জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নে। তার কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন। ২০ দলীয় জোট ছাড়ার কয়েকটি কারণ হলো- বিএনপির রাজনীতি তখন ঐক্যফ্রন্টমুখী হয় যার ফলে বিএনপিতে ২০ দলের গুরত্ব কমে যায়। এছাড়াও ২০ দলকে অন্ধকারে রেখে জোটের প্রধান শরিক বিএনপির এমপিদের শপথগ্রহণ এবং বিএনপির সঙ্গে সৃষ্টি হওয়া ২০ দলের শীর্ষ নেতাদের টানাপোড়েনকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

তরুণদের উদ্দেশ্যে আলন্দালিব রহমান পার্থ

আলন্দালিব রহমান পার্থ রাজনীতি বিষয়ে তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, “বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে আগ্রহী করে তুলতে হবে, তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা উচিৎ। বর্তমানে অসৎ, চোর-বাটপার, স্বার্থপর মানুষে রাজনীতি অঙ্গন ভরে গেছে। এটা থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করা অতিব জরুরী। মেধাবী, সৎ ও মানবিক তরুণদের বসে থাকলে চলবে না। তাদের উচিৎ সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা। তা না হলে অসৎ ব্যক্তিরা সুযোগ পেয়ে যাবে। রাজনীতি শেখার বিষয় না। হঠাৎ করেই একজন রাজনীতিবিদ হওয়া যায় না। অনেকেই রাজনীতিতে আসতে চান, কিন্তু তারা শুধু এমপি, মন্ত্রী হতে চান। তাদের কেউ রাজনীতিবিদ হতে চান না।

পার্থের বিভিন্ন সামাজিক ও সঠিক রাজনৈতিক পদক্ষেপের কারণে দেশবাসী তাকে যথেষ্ট সম্মান ও বিশ্বাস করে। দেশের বর্তমান জনগন মনে করেন, তার মতো রাজনৈতিক নেতা দেশের প্রতিটি উপজেলায় থাকা উচিৎ। অনেকেই মনে করেন তিনিই হবে দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী। কিছু কিছুদিন যাবত তাকে আর আলোচনায় দেখা যাচ্ছে না। একসময় বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে সরকারী দলের নানারকম কুকীর্তির কথা মানুষের সামনে তুলে ধরে সরকারী দলের বিভিন্ন দূর্বলতার কথা বলেন। এতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরা তার উপর চঠেছেনও বটে।

এই ছিলো মূলত বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও নানান গুণে গুনান্বিত আন্দালিব রহমান পার্থের জীবনী ও তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সম্পর্কে।

 

আন্দালিব রহমান পার্থর সোসাল মিডিয়াঃ

ইনস্টাগ্রাম

ফেইসবুক

টুইটার

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *