মোশাররফ করিমের জীবনী ও লাইফস্টাইল

ইতিহাসের খুব কম অভিনেতাই পারেন অভিনয়ের মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় স্বরণীয় হয়ে থাকতে। অভিনয় যে কেও চাইলেই পারেন না। তার জন্য প্রয়োজন সৃষ্টিকর্তার দয়া, কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও অধ্যবসায়। আমরা আজকে জানব অভিনয়ের সকল গুণে গুণানীত মেধাবী অভিনেতা কে এম মোশাররফ করিম সম্পর্কে। তিনি তার জাদুকরী অভিনয়ের জন্য ইতিহাসের পাতায় চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের মিডিয়া ইন্ডাষ্টিতে। বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত এই জাদরেল অভিনেতা তার অভিনয়ে মুগ্ধ করেছেন বাংলাদেশসহ বাংলা ভাষাভাষী সকল দেশের নাগরিককে। 

মোশারফ করিমের অভিনীত প্রথম নাটক অতিথী ও প্রথম চলচ্চিত্র জয়যাত্রা। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ওঠে আসা এই গুণী অভিনেতা জীবন যাপন করেন খুবই সাধারণ। আজকের এই লেখাই আমরা জানব মোশারফ করিমের জানা অজানা অনেক কথা, তার লাইফস্টাইল, তার ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, নাটকের জীবন, সিনেমার জীবন সম্পর্কে। অতএব আপনি যদি এই প্রিয় অভিনেতার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে বিস্তারিত পড়ুন।

এক নজরে মোশারফ করিম

মূল নামঃ কে এম মোশাররফ করিম

মিডিয়া নামঃ মোশাররফ করিম

ডাক নামঃ শামীম

জন্মঃ ১৯৭১ সালের ২২ আগস্ট

জন্মস্থানঃ ঢাকা, বাংলাদেশ

গ্রামের বাড়িঃ বরিশাল

পেশাঃ অভিনয়শিল্পী

প্রথম চলচ্চিত্রঃ জয়যাত্রা

প্রথম নাটকঃ অতিথী

শিক্ষাঃ স্নাতক

বৈবাহিক অবস্থাঃ বিবাহিত

বিয়ে করেনঃ ৭ই অক্টোবর ২০০৪ সালে

স্ত্রীঃ রোবেনা রেজা জুই

সন্তানঃ একটি ছেলে

ছেলের নামঃ রোবেন রায়ান করিম

বাবাঃ আব্দুল করিম

উচ্চতাঃ ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি

চোখের কালারঃ কাল

চুলের কালারঃ কাল

শরীরের কালারঃ শ্যামলা

ধর্মঃ ইসলাম

জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী

কে এই মোশাররফ করিমের ?

১৯৭১ সালের ২২ আগস্ট ঢাকায় জন্ম নেয়া মোশারফ করিমের বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। পিতা আব্দুল করিমের অনেক সখ ছিল একজন অভিনেতা হবেন কিন্তু তিনি তা পারেন নি। কিন্তু তিনি তার ছেলেকে ঠিকই একজন দেশ সেরা অভিনেতা বানিয়েছেন। মোশাররফ করিম হিসাবে তিনি পরিচিত হলে ও তাকে নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের নাম হিসেবে ও তাকে চিনে। তিনি তার চরিত্র গুলোকে এতটাই নিখুত ভাবে নেয় যে তাকে মানুষ চরিত্রের নামেই বেশি চিনে। তার কয়েকটি নাটকের জনপ্রিয় চরিত্রের নাম যেমন গুল্লা, ঘাওরা মজিদ, সিকাদার বক্স, একাব্বর, নিক্কা, মাহিন, জর্দা জামাল ইত্যাদি।

মোশারফ করিমের প্রাথমিক জীবন

মোশারফ করিমের অভিনয়ের হাতেখড়ি হয় স্কুল থিয়েটারে মাধ্যমে। তার অভিনয়ের প্রতি এতটাই ভালবাসা ছিল যে তিনি বিভিন্ন মঞ্চদল ও নাট্যকেন্দ্রে কাজ করার জন্য ছুটে যেতেন। বাংলাদেশের লিজেন্ডারি অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাট্যকেন্দ্র মঞ্চদলে যোগ দেন মোশারফ করিম। তখন মোশারফ কেবল মাধ্যমিক পাশ করেছেন ১৯৮৬ সালে। সেই নাট্যকেন্দ্র থেকেই মোশারফের উত্থান অভিনয় জগৎতে। তারপর তিনি ইতিহাস সৃষ্ঠি করে গেছেন বাংলা নাটকে।

টেলিভিশন নাটকে মোশাররফ করিমের

মোশারফের ছোট পর্দায় আগমন ঘটে ফেরদৌস হাসান পরিচালিত অতিথি নামক একটি একক নাটকের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে। কিন্তু তার টেলিভিশন নাটকের সুদিন আসে ২০০৪ সালে ক্যারাম নাটকের মাধ্যমে। ক্যারাম নাটকে তার মনোমুগ্ধকর অভিনয় তাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। এই নাটকে মোশারফ এবং নুসরাত ইমরোজ তিশা জুটি খুব জনপ্রিয়তা পায়। তারপর তিনি একের পর এক নাটকে অভিনয় করতে শুরু করেন। মোশারফের ক্যারিয়ারে ৪২০ নামক মেগা সিরিয়াল তাকে নাটকে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সাহায্য করে। 

তারপর তিনি তার ক্যারিয়ারে অনেক জনপ্রিয় ধারাবাহিক ও একক নাটকে অভিনয় করেছেন। তিনি তার চরিত্রগুলো নাটকের পর্দায় খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন তার ক্যারিশম্যাটিক অভিনয় দিয়ে। তিনি তার নাটকের ক্যারিয়ারে অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছেন যেমন হাসির, কষ্টের, বিরহের, শিক্ষামূলক ইত্যাদি। বলা হয়ে থাকে মোশাররফ করিম অভিনয় করেননি এমন চরিত্র খুজে পাওয়া খুব মুশকিল। তিনি প্রায় সকল চরত্রেই অভিনয় করে তার অভিনয়ের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।

মোশাররফ করিম এর উল্লেখ্যযোগ্য কিছু নাটকের নামঃ

একক নাটক
ধারাবিক নাটক

১। অতিথি

২। মীরজাফর

৩। সেই রকম ঘুষখোর

৪। জামাই স্বশুর

৫। বাটপার

৬। হাবিলদার হাতেম

৭। ঝুলন্ত বাবুরা

৮। বউয়ের জ্বালা

৯। আমি মফিজ হতে চাই

১০। প্রায় রকস্টার

১১। হিটার

১২। টু লেট

১৩। অভিনেতা

১৪। জমজ

১৫। সাধারণ জ্ঞান

১৬। হরতাল

১৭। ঘুম বাবু

১৮। বিহাইন্ড দ্যা ট্র্যাপ

১৯। লাভ ইন বরিশাল

২০। বউ চোর

২১। সিকান্দর বক্স

২২। সত্য বালক

২৩। ফাউল

২৪। মানিব্যাগ

২৫। ছাইয়া ছাইয়া

২৬। জর্দা জামাল

২৭। সিটি লাইফ

২৮। তারা খান

২৯। প্যারা

৩০। বোকা খোকা

৩১। ঘাউরা মজিদ

৩২। মায়া কান্না

৩৩। জন্ম

৩৪। হাই প্রেসার

১। এফ এন এফ

২। বিবাহ হবে

৩। চাটাম ঘর

৪। ঝামেলা আনলিমিটেড

৫। চলিতেছে সার্কাস

৬। তিনি আসবেন

৭। হাড় কিপ্টে

৮। ভবের হাট

৯। হাউসফুল

১০। মাইক

১১। ৪২০

১২। সাকিন সারি সুরি

১৩। মফিজ কট

১৪। লড়াই

১৫। মামা ভাগ্নে

চলচ্চিত্র মোশাররফ করিমের

মোশাররফ করিম তার প্রথম সিনেমায় একজন ময়রার চরিত্রে অভিনয় করেন জয়যাত্রা সিনেমায়। তৌকির আহমেদ পরিচালিত সিনেমাটি আমজাদ হোসেনের একটি উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি করা হয়। তার সৌভাগ্য যে তিনি অনেক গুনী নির্মাতাদের সাথে কাজ করতে পেরেছেন। তিনি দারুচিনি দ্বীপ সিনেমায় অভিনয় করেন যেটি বিখ্যাত লেখক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ রচিত। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পর্ণ পরিচালক মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী পরিচালিত টিলিভিশন ও থার্ড পারসন সিগুলার নাম্বার সিনেমায় অভিনয় করে সুনাম কুড়ান মোশারফ। 

তাছাড়া তিন আরো কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ তিনি প্রশংসা কুড়ান কলকাতার ব্রাত্য বসুর সিনেমা ডিকশনারীতে অভিনয় করে। সেই সিনেমার জন্য তিনি কলকাতার অনেকের প্রশংসা পান। তিনি নিয়মিত সিনেমায় অভিনয় করেন না। কেবল ভাল গল্প ও ভাল প্রোডাকশন পেলেই কাজ করেন। তার চরিত্রের সাথে যায় না এমন চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন না। বর্তমানে তিনি বেচে বেচে কাজ করে থাকেন।

মোশারফ করিমের সিনেমার লিস্টঃ

১। সিনেমা জয়যাত্রা মুক্তিপায় ২০০৪ সালে পরিচালনা করেন তৌকির আহমেদ
২। সিনেমা রূপকথার গল্প মুক্তিপায় ২০০৬ সালে পরিচালনা করেন তৌকির আহমেদ
৩। সিনেমা দারুচিনি দ্বীপ মুক্তিপায় ২০০৭ সালে পরিচালনা করেন তৌকির আহমেদ
৪। সিনেমা থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার মুক্তিপায় ২০০৯ সালে পরিচালনা করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
৫। সিনেমা প্রজাপতি মুক্তিপায় ২০১১ সালে পরিচালনা করেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ

৬। সিনেমা টেলিভিশন মুক্তিপায় ২০১৩ সালে পরিচালনা করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
৭। সিনেমা জালালের গল্প মুক্তিপায় ২০১৫ সালে পরিচালনা করেন আবু সাহেদ ইমন
৮। সিনেমা অজ্ঞাতনামা মুক্তিপায় ২০১৫ সালে পরিচালনা করেন তৌকির আহমেদ
৯। সিনেমা হালদা মুক্তিপায় ২০১৭ সালে পরিচালনা করেন তৌকির আহমেদ
১০। সিনেমা দি ডিরেক্টর মুক্তিপায় ২০১৯ সালে পরিচালনা করেন কামরুজ্জামান কামু
১১। সিনেমা ডিকশনারি মুক্তিপায় ২০২১ সালে পরিচালনা করেন ব্রাত্য বসু

মোশাররফ করিমের পারিবারিক জীবন

মোশারফ করিমের পরিবারে তার বাবা মা ছাড়াও তার স্ত্রী ও এক সন্তান আছে। রোবেনা রেজা জুইকে ৭ই অক্টোবর ২০০৪ সালে ভালবেসে বিয়ে করেন মোশারফ করিম। মোশারফের স্ত্রী জুই ও একজন নিয়মিত নাটকের মুখ। তারা দুজনে এক সাথে অভিনয় করেছেন অনেক নাটকে। এই সুখী দম্পতির রোবেন রায়ান করিম নামে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এক ছেলেকে নিয়ে তারা তিন জনের সংসার। তাদের ফেম্যালি একটি আদর্শীক ফ্যামেলি।

মোশাররফ করিমের মোট সম্পদ

মোশাররফ করিম বাংলাদেশের শীর্ষ ধনী সেলিব্রিটিদের মধ্যে একজন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ কত তা সঠিক ভাবে না জানা গেলেও, তিনি অনেক সম্পসশালী ধারণা করা যায়। তিনি ৫০০+ টিরও বেশি নাটক , চলচ্চিত্র এবং সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। তিনি বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে ও প্রচুর টাকা আয় করে থাকেন। 

মোশাররফ করিমের পুরস্কার ও সম্মাননা

মোশাররফ করিম দেয়ালে আলমারি নাটকের জন্য প্রথম মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পান ২০০৮ সালে। তার পর আরো অনেক বার এই পুরস্কার পান তিনি।

সেই মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার গুলো হলঃ

১। দেয়াল আলমারি নাটকের জন্য পান ২০০৮ সালে
২। হাউসফুল নাটকের জন্য পান ২০০৯ সালে
৩। চাদের নিজস্ব কোনো আলো নেই নাটকের জন্য পান ২০১১ সালে
৪। জর্দ্দা জামাল নাটকের জন্য পান ২০১২ সালে
৫। সেই রকম চা খোর নাটকের জন্য পান ২০১৩ সালে
৬। সিকান্দার বক্স এখন বিরাট মডেল নাটকের জন্য পান ২০১৩ সালে
৭। সেই রকম পান খোর নাটকের জন্য পান ২০১৪ সালে
৮। সিকান্দার বক্স এখন নিজ গ্রামে নাটকের জন্য পান ২০১৫ সালে
৯। বউ গিরি নাটকের জন্য পান ২০১৬ সালে

তাছাড়া মোশাররফ করিম ১৯ তম পর্তুগালের আভাঙ্কা চলচ্চিত্র উৎসব এ পুরস্কার পান। আন্তর্জাতিক সেই আসরে পুরস্কার পান জালালের গল্প সিনেমায় অভিনয় করার জন্য। মোশারফ আরটিভি স্টার আওয়ার্ড পুরস্কার পান ৩ বার। প্রথম বার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ধারাবাহিক নাটকে কেন্দীয় চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পান ২০১৩ সালে। দ্বীতিয় বার স্টার অ্যাওয়ার্ড পান ২০১৯ সালে যমজ নাটকের জন্য।

 এবং সর্বশেষ এই পুরস্কার পান একই বছর তথা ২০১৯ সালে আশ্রয় নাটকের জন্য। তাছাড়া মোশারফ করিম বেসরকারী অনেক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান মোশারফ কমলা রকেট সিনেমার জন্য। কিন্তু তিনি এই পুরস্কার ফিরিয়ে দেন কারণ পুরস্কারটি ছিল কৌতুকাভিনয়শিল্পী বিভাগে। মোশারফ মনে করেন এই পুরস্কার কোনভাবেই কৌতুকাভিনয়শিল্পী বিভাগে যায় না।

মোশাররফ করিমের সোসালমিডিয়াঃ 

ফেসবুক প্রোফাইল

টুইটার প্রোফাইল

ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top