You are currently viewing মমতা ব্যানার্জির জীবনী ও রাজনিতিক ক্যারিয়ার
মমতা ব্যানার্জি

মমতা ব্যানার্জির জীবনী ও রাজনিতিক ক্যারিয়ার

সাধারণ ঐতিহ্যবাহী বাঙালী পোশাক পরিহিতা অসাধারণ ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিটি হলেন মমতা ব্যানার্জি। বিলাসিতা তার মধ্যে দেখা যায়না বরং প্রকাশ্যভাবে কঠোর জীবনধারায় জীবন পরিচালনা করেন। তার নাম মমতা হলেও অগ্নিকন্যা হিসেবেই তিনি পরিচিত, অগ্নিকন্যা উপাধির সাথে তার আচরণ অভ্যাস এবং স্বভাব যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভারতীয় রাজনীতিবিদ দের মধ্যে তিনি সেরা এক রাজনীতিবিদ এবং একজন সেরা শিক্ষাবিদ। তিনিই অল ইন্ডিয়া তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাকারী এবং চেয়ারপার্সন। রেলমন্ত্রী হিসেবেও দুইবার করে দায়িত্ব পালন করেছিলেন উত্তম মনুষ্যত্বের অধিকারি এই মমতা ব্যানার্জি। আর তাছাড়াও তিনি রাজনীতিবিদ হওয়ার পাশাপাশি একজন চিত্রশিল্পী এবং একজন সম্মানিত কবি। টাইম ম্যাগাজিনের প্রকাশনা অনুযায়ী মমতা ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে একজন।

বংশ পরিচয় এবং জীবনের প্রারম্ভিকতা :

বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মমতা ব্যানার্জি কলকাতার পশ্চিমবঙ্গের হাজরা অঞ্চলের এক হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৫ সালের ৫জানুয়ারি তার পিতা হলেন প্রমিলেশ্বর ব্যানার্জি এবং মাতা হলেন গায়েত্রী দেবী। তার পিতা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ছোটবেলার সময়টা তিনি পিতামাতার সাথেই কাটান। মমতা ব্যানার্জির মাত্র ১৭ বছর বয়সেই তার পিতা প্রমিলেশ্বর ব্যানার্জি মারা যান।

মমতা ব্যানার্জি পনেরো বছর বয়সেই রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। কংগ্রেস পার্টির ছাত্র সংগঠন এবং ছাত্র পরিষদ ইউনিউনের তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসের এই পার্টির সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন অনেক দিন, রাজনৈতিক জীবনে এই সংগঠনের বিভিন্ন পদে বহাল ছিলেন তিনি। আর তাছাড়াও স্থানীয় অনেক রাজনৈতিক দলের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন।

★মমতার শিক্ষাজীবন

মমতা ব্যানার্জি দেশবন্ধু শিশু শিক্ষালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক পাশ করেন ১৯৭০ সালে। তিনি যোগমায়া দেবী কলেজর ইতিহাসের একজন সম্মানিত ছাত্রী ছিলেন এবং সেখান থেকেই স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ইসলামিক ইতিহাসে দীক্ষিত হন কলকাতা বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে অর্থাৎ ইসলামিক ইতিহাসে এমএ পাস করেন। আর তাছাড়াও তিনি কলকাতার যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী প্রাপ্ত হন।

★মমতা ব্যানার্জির পেশা

মমতা ব্যানার্জি তার অল্প বয়সেই রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে গেলেও তিনি তার জীবনের একটা অংশে শিক্ষকতা করেন। সংসার পরিচালনা করার জন্য তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুকাল শিক্ষকতা করেছেন। এছাড়াও তিনি একজন চিত্রশিল্পী এবং একজন কবি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর পেইন্টিং এর এতই চাহিদা ছিলো যে, ৩০০ টি পেইন্টিং ৯কোটিতে বিক্রি হয়েছিলো। মমতা ব্যানার্জি তার লেখনীর মাধ্যমেও সুপরিচিত। তিনি গণতন্ত্রের বিষয়ে লেখা, শিশুদের জন্য লেখা এবং সর্বজনীনদের জন্য লিখে বিখ্যাত হয়েছেন। তার লেখনি বাংলার মানুষের কাছে অনেক প্রিয়।

★কংগ্রেসের সাথে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার

১৯৭০ এর দশকের তরুণী মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক জীবনের প্রারম্ভিকতা হয় কংগ্রেস পার্টির মাধ্যমে। যখন তিনি সমাজতান্ত্রিক কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন তখনই তিনি প্রেস মিডিয়ার চোখে পড়েন। আর প্রেস মিডিয়ার মনযোগ আকর্ষণ করার কারণ হল প্রতিবাদ করে তিনি তার গাড়িতে নাচছিলেন। মমতা ব্যানার্জি ভারতের সবচেয়ে ছোট সংসদ সদস্যের একজন নির্বাচিত হন। তিনি সোমনাথ চ্যাটার্জি নামক এক প্রবীণ রাজনৈতিক নেতাকে পরাজিত করে সবার নিকট আলোচিত হন। ১৯৮৯ সালে কংগ্রেসের বিরোধিতা শুরু করলে তিনি হেরে যান, অর্থাৎ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মালিনী ভট্টাচার্যের নিকট তার আসন হারান। মমতা ব্যানার্জি ইউনিউন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।

১৯৯২ সালে ফেলানি বসাক এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যখন তিনি হয়রানির স্বীকার হন এবং তাকে আটকে রাখা হয় তখন তিনি শপথ গ্রহণ করেন, মুখ্যমন্ত্রী হয়েই তারপর তিনি এই ভবনে প্রবেশ করবেন। আবার এর পরের বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর নেতৃত্বে রাজ্যের যুব কংগ্রেস রাজ্যের কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাইটারস বিল্ডিং এ প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে, বৈজ্ঞানিক কারচুপি বন্ধ করে ভোটারদের আইডি কার্ডকে ভোট দেওয়ার জন্য উপযুক্ত বা নথি করা হোক। সে বিক্ষোভের সময় অনেক অনেক আহত হয় এবং ১৩ জন নিহত হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু পুলিশের কাজ কে সাধুবাদ জানায়।

কিন্তু উড়িষ্যার হাইকোটের অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি সুশান্ত চ্যাটার্জি পুলিশের কাজ কে অপ্ররোচনামূলক এবং অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেন , আর শেষে কমিশন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে ব্যাপারটি জালিয়ানওয়ালাবাগ এর ঘটনার চেয়েও খারাপ। মমতা ব্যানার্জি কে তার পোর্টফলিও থেকে অব্যাহত করা হয় ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে তিনি অভিযোগ করেন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সিপিএম এর কট্টর আচরণের, আর তখনই তিনি জানান তিনি একাকী যুক্তির কণ্ঠস্বর এবং পরিচ্ছন্ন কংগ্রেস চান।

আরো পড়ুনঃ শেখ হাসিনার জীবনী

কংগ্রেসের সাথে সম্পর্কের ইস্তফা এবং সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন

কংগ্রেসের সাথে সম্পর্কের ইস্তফা দিয়ে তিনি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস স্থাপন করেন ১৯৯৭ সালে। তারপরেই দল বামফ্রন্ট শাসিত পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলীয় শক্তিতে পরিণত হয়। এরপরের বছর সমাজবাদী পার্টির দারোগা প্রসাদ সরোজ মহিলা সংরক্ষণ বিলের বিরোধিতার লোকসভায় নামলে মমতা সরোজের কলার ধরে টেনে তাকে ওয়েলের বাইরে দিয়ে আসেন। ঘটনাটি বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলো। এরপরে বিজেপির নেতৃত্বের এনডিএ জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামিল হয়ে পরবর্তীতে তিনি রেলমন্ত্রী পদে পদোন্নতি হন।

১৯৯৯ সালে তিনি পর্যটন উন্নয়নের দিকেও মন দেন এবং দার্জিলিং রেলওয়েতে দুইটি ইঞ্জিন চালু করেন আর তারপর ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নির্মাণের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ও নেপালের সাথে বন্ধ হওয়া লাইনগুলো চালুর ব্যাপারে মতামত দেন। ২০০০- ২০০১ এর আর্থিক বছরে তিনি এক বড় অসাধ্য সাধন করেন আর তা হলো ১৯ টি নতুন ট্রেন চালু করে ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার বিরাট উন্নতি সাধন করেন।

মমতা ব্যানার্জির রাজনীতি

পশ্চিমবঙ্গে অবৈধভাবে বাংলাদেশি প্রবেশ করলে, তার বিরুদ্ধে মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, কিন্তু সঠিক নিয়ম মেনে মুলতুবি না করায় অধ্যক্ষ এটি ক্যান্সেল ঘোষণা করে। ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো প্রকল্পের বিরুদ্ধে জনগণের সাথে যোগ দিতে চাইলে তাকে বাঁধা দেওয়া হয় সেজন্য মমতা পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে ১২ ঘণ্টার জন্য বাংলা বন্ধের ঘোষণা দেন। একটি বড় ধর্মঘট পালন করা হয়।

সরকার কর্তৃক কৃষিজমির অধিগ্রহণের প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি ডিসেম্বরে ঐতিহাসিক ২৬ দিনের অনশন শুরু করেন। আর তার অবস্থার কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি এ. পি জে আবদুল কালাম সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর নিকট ব্যাপারটি জানান।

পশ্চিমবঙ্গের সরকার মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব স্থাপনের ইচ্ছা পোষণ করলে হলদিয়া উন্নয়ন পরিষদ জমি নেওয়ার নোটিশ জারি করে এতে তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধিতা করে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী এই নোটিশ বাতিল করেন। নন্দীগ্রামে গণহত্যার বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবীগণ প্রতিবাদ করেন, তাদের সিংহভাগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঘোষণা করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিলকে এবং প্রধানমন্ত্রী কে চিঠি লিখে ৩০০ জন মেয়ে এবং মহিলাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ও তুলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সে চিঠিতে তিনি সিপি-আই এর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ তুলে ধরেন এতে করে সরকার নন্দীগ্রামের কেমিক্যাল হাব প্রকল্পটি বাতিল করতে বাধ্য হন। কৃষক আন্দোলনের সাথে জড়িত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভূত জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

২০০৯ সালে রেলমন্ত্রী হলে রেল বাজেটের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেন এবং ৫০ টি স্টেশন কে আন্তর্জাতিক সুযোগসুবিধায় বিশ্বমানের রেল এ উন্নিত করার ইচ্ছা পোষণ করেন। আর তাছাড়াও ৩৭৫ টি স্টেশন কে আদর্শ বলে ঘোষণা করেন। যাত্রীদের জন্য দারুণ সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যাত্রীদের জন্য বাজার, ফুড স্টল, রেস্তোরাঁ, বুক স্টল, ফ্ল্যাক্স বুথ এবং ওষুধের দোকানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। রেলের জমিতে ৭টি নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। আর তাছাড়া ও ২টি নতুন ট্রেন চালু করেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে মমতার নেতৃত্বে তৃণমূলের কংগ্রেস এককভাবে পশ্চিমবঙ্গের ৩৪ টি লোকসভা বিজয়ী হয়। এরপর ২০১৬ তেও একক ভাবে ২১১ টি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করেন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সপ্তদশ বিধানসভার নির্বাচন ২মে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হলে মমতা ব্যানার্জি নন্দীগ্রামের বিধানসভা কেন্দ্রে পরাজিত হলে তিনি তা কারচুপি বলে অভিযোগ করেন যেটি পরবর্তীতে বিচারাধীন থাকে। মমতার দল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস ২১৫ আসনে বিজয়ী হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, ভারতীয় জনতা পার্টি ৭৭ আসনে জয়ী হয়ে বিধানসভার বিরোধী দলের স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়। ২০২১ সালের ৫মে মমতা ব্যানার্জি তৃতীয় বারের মত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত হন।

আরো পড়ুনঃ বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী

★এক নজরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃত্তান্ত

নাম : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মমতা ব্যানার্জি।
উপাধি : অগ্নিকন্যা।
ডাকনাম : দিদি ( বড় বোন)
জন্ম : ০৫ জানুয়ারি ১৯৫৫ সালে।
বর্তমান বয়স : ৬৬ বছর।
পিতার নাম : প্রমিলেশ্বর ব্যানার্জি
মাতার নাম : গায়েত্রী দেবী।

বাসস্থান : ভারত, কলকাতার পশ্চিমবঙ্গে ৩০- বি, হরিশ চ্যাটার্জি রোড।
জন্ম স্থান : ভারত, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ।
স্কুল : দেশবন্ধু শিশু শিক্ষালয়, কলকাতা।
কলেজ : যোগমায়া দেবী কলেজ কলকাতা।
ইউনিভার্সিটি : শ্রীশিক্ষায়তন কলেজ, ইউনিভার্সিটি অব কলকাতা।
শিক্ষা : স্নাতক ( বি.এ) ইতিহাস। ইসলামিক ইতিহাস (স্নাতকোত্তর) এম.এ।
বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত।

সন্তান সংখ্যা : নেই।
পেশা/কর্ম : রাজনীতি, শিক্ষিকা, কবি, লিখিকা এবং একজন চিত্রশিল্পী।
ধর্ম : হিন্দু ধর্ম।
বর্ণ : ব্রাহ্মণ।
শখ : হাঁটা, পেইন্টিং, কবিতা লেখা, বই লেখা।
জাতীয়তা : ভারতীয়।

উচ্চতা : আনুমানিক ১.৬৩ মিটার, ফুট- ৫.৪ ইঞ্চি।
ওজন : আনুমানিক ৫৯ কেজি, ১৩৪ পাউন্ড।
তার ভাতিজা : অভিষেক ব্যানার্জি।
জনপ্রিয় সংস্কৃতি : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবন কাহিনীর উপর ভিত্তি নির্মিত হয়েছে একটি চলচ্চিত্র, যেটির নাম “কামিনি”। ২০১৯ সালের মে মাসের ৩ তারিখে এটি মুক্তি পায়।

★বিতর্ক

মহিলা সংরক্ষণ বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদ সদস্য সমাজবাদী পার্টির ডোগরা প্রসাদ সরোজ এর কলার ধরে টেনে লোকসভার বাইরে বের করে দেন।

★ ভারতে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে বিষয়ে মন্তব্য করলে তীব্র সমালোচনা করা হয় তার বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের এক বক্তৃতায় তিনি যা বলেন তার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো- এক সময়ে পুরুষ এবং মহিলা একে অপরের হাত ধরে ঘুরলে পরিবার কর্তৃক ধমক খেত কিন্তু এখন এতে কারো কিছু যায় আসেনা।

★ রাজ্যে মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিশু উন্নয়ন, যুব বিষয়ক এবং ক্রীড়া ইত্যাদির প্রতিমন্ত্রী করা হয় ১৯৯১ সালে।

★ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির নেতৃত্বের অধীনে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটে মিত্র হিসেবে যোগ দেয় এবং তারপর তাকে রেল মন্ত্রণালয় এর দায়ীত্ব প্রদান করা হয়।

★ এনডি এর সাথে সম্পর্ক সমাপ্ত করে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পার্টির সাথে যুক্ত হন ২০০১ সালে।

★ এনডিতে পুনরায় ফিরে আসেন এবং ভারতের কয়লা ও খনিমন্ত্রী হিসবে দায়িত্ব পালন করেন ২০০৪ সালের মে মাসে লোকসভা ভেঙ্গে দেওয়া পর্যন্ত।

★ মমতা ব্যানার্জি CAA বিরোধী সমাবেশের অনুমতি বাতিল করে দেয়। ক্যাম্পাস গণতন্ত্রকে দমন করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভার জন্য বিশাল জনসমাগম হয়েছিলো অন্যদের ধারণা একই জায়গায় অন্য কোন সমাবেশ হলে বিশৃঙ্খলার দেখা পাওয়া যেত, কিন্তু এখানে পাওয়া যায়নি, আর সেটা দুর্গাপুর থানার এক আধিকারিক ও বলেছিলেন।

★কোভিড-১৯ মহামারীর ব্যাপারেও বিতর্ক দেখা দেয়। মহামারী পরিচালনা কারী ব্যাপকভাবে সমালোনার শ্বীকার হয় বিরোধী দলীয় সমালোচকগণ। বিরোধী দলীয়রা মমতা কে তুষ্টির রাজনীতি খেলতে অভিযোগ করে। কারণ এ মহামারীর মধ্যে তাবলীগ জামায়াত বা ধর্মীয় সমাবেশে যোগ দেওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। সরকারের সন্ধান অনুসারে ৫৪ জনের সন্ধান পাওয়া যায় এবং এর পরবর্তীতে আরো জানা যায় যে অংশগ্রহণকারী মানুষদের মধ্যে কিছু দেশি এবং কিছু বিদেশি পর্যটক রয়েছে।

★মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে স্বীকৃতি প্রদান অথবা তার অর্জন

★ টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃক বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালীর একজন হিসেবে নির্বাচন করে ২০১২ সালে
★ ৫০ অর্থ বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ব্লুমবার্গ পত্রিকা ২০১২ সালে।
★ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বছরের শ্রেষ্ঠতম skoch মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত হন ২০১৮ সালে।
★ কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে লকডাউনের মধ্যে তিনি রাস্তায় হেঁটেছিলেন জনগণের মধ্যে জন সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।
★ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন বাংলায়” ধর্ম ব্যক্তিগত, কিন্তু উৎসবগুলি সর্বজনিন। তিনি চাই সব ধর্মের লোকদের সমান সমান অধিকার নিশ্চিত করতে যা বাংলার সাধারণ মানুষের ও চাওয়া।
★শিল্প প্রযুক্তি কলিঙ্গ ইন্সটিটিউট, ভুবনেশ্বর কর্তৃক ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।
★ ডক্টরেট অফ লিটারেচার ডিগ্রীতে ভূষিত হয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক।

নোটলিস্ট অনুসারে

একজন সংসদ সদস্য হয়ে সাংবিধানিক নিয়ম মানা জরুরি, আর সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে যদি মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভা কেন্দ্রে পরাজিত হয় কিন্তু তারপর ও তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা আসন নিয়ে বিজয়ী হয়, তখন সবার সম্মতিতে বিধানসভার বিধায়ক থেকে আবার নির্বাচিত হতে পারবে এবং পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবে। ভারতীয় ১৬৬ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অ-বিধায়ক মন্ত্রী কে একটানা ছয়মাস মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে অফিসে থাকার ব্যাপারে বিধিনিষেধের বাধ্যবাধকতা প্রদান করা হয়। সে নিয়ম অনুযায়ী মমিতা ব্যানার্জির জন্য ৪নভেম্বরে এই নির্দিষ্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে তাকে বিধায়ক হিসেবে উত্তীর্ণ হতে হবে নির্বাচনে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশিত বই সমূহ:-

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধারে রাজনীতিবিদ, লেখিকা, কবি এবং একজন চিত্রশিল্পী। তার আঁকা ছবির ক্যালেন্ডার প্রকাশিত হলে উচ্ছ্বাস যেন উপচে পড়ে। ভারতের ২২লক্ষ লোকের বই মেলায় জনসাধারণের সাথে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বই ও সমানভাবে প্রকাশিত হতে থাকে একের পর এক। সেই বই গুলা হাতের পাওয়ার জন্য মানুষ উপচে পড়ে বই মেলায়। কবিতা, গণতন্ত্র, ছোটদের ছড়া এবং তাছাড়াও বড়দের জন্য বই সহ একাধিক বিষয়ের উপর বই লিখতে তিনি পারদর্শী। বাংলা, ইংরেজি ছাড়াও ভিন্ন ভাষায় ও তার আধিপত্য রয়েছে সেসব ভাষাতেও তিনি বই লিখেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতিক সত্তাও যেমন চোখে লাগার মত তেমনি লেখালেখি আঁকা-আঁকিতেও সমান ভাবে দক্ষ। কোনটি যেন তার থেকে বাদ যায়না। অগ্নিকন্যার সবদিকেই সমানভাবে পারদর্শিতা রয়েছে। আর তাছাড়াও রাজনৈতিক বিরোধী দলীয়দের সাথেও ভালো ব্যবহার লক্ষণীয়। মোদী বলেন, মমতা বিজয়ী হলে তার বাড়িতেও মিষ্টি পাঠায়। পরে এ কথা মমতা কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন তিনি সাধারণ দের জন্য ও তাই করেন। অতএব লক্ষণীয় এই যে, মমতা মায়া মমতায় ও পূর্ণ তেমনি রাগে অগ্নিকন্যার উপাধিতেও পূর্ণ। গুণে গুণান্বিত রূপে পূর্ণাঙ্গ।

ভারতীয় বই মেলা নিয়ে কথা বলার সময়ে বাংলার অনুষ্ঠান নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন “আমাদের দুর্গাপূজা অদ্বিতীয়। বড়দিনে সারা বিশ্ব আসে। ঘরে ঘরে কালি সরস্বতী পুজো। পিঠেপুলি, সুভাষ মেলা, বিগ্রেড মেলা আমাদের। “

তার আলোচিত বই গুলো হলো :-

কথাঞ্জলি :
লেখিকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বইয়ের পাবলিশার হলো দে’জ পাবলিশিং (ভারত) । যেটি বাংলা ভাষায় রচিত এবং ১৯৩ পেইজের বই এটি। এই বইটি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়েই রচিত। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যা বলে থাকেন আশা দিয়ে থাকেন তার সিংহভাগের ব্যাপারেই তারা উদাসিন। আর বিপরীতধর্মী লোকদের মধ্যে অথবা বিরল দের মুখ্যমন্ত্রী অন্যতম। আর তিনি জীবন দর্শনের অনুভাব কে চিন্তাভাবনা কে সাজিয়ে বই আকারে প্রকাশ করেছেন। কথায় কথায় ও কথা গ্রন্থ কে একত্র করে কথাঞ্জলি পূর্ণতা পেয়েছে। তিনি তার চিন্তাভাবনা , কথাগুলো কে মনের ভাবকে কথাঞ্জলি রূপে সাজিয়েছেন তার পাঠকদের জন্য।

★ তামান্না :-
তামান্না হলো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বই। যেটি বাংলায় রচিত দে’জ পাবলিশিং দ্বারা প্রকাশিত ১১০ পেইজের একটি বই।

★ মাই আনফরগেটবল মেমরিজ:
এটির লেখিকা হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনুবাদক হলেন কাজী তাহমিনা। ১৮৩ পৃষ্ঠার বইটি বাংলায় রচিত এবং এর প্রকাশক হলো অন্যধারা। বইটির সম্পর্কে লেখক যা বলেছেন তার সার-সংক্ষেপ হলো এই যে, তিনি তার শৈশবকালের বিরতি নিয়ে এখানে আলোচনা করেন। তিনি বলেন এমম কিছু অভিজ্ঞতা থাকে জীবনে যেগুলোর কোন ব্যাখ্যা থাকেনা। আর কিছু অতিপ্রাকৃত। কেউ এগুলো বিশ্বাস করে কেউ করেনা। আর এসব যারা বিশ্বাস করে থাকে তাদের জন্য প্রমাণের প্রয়োজন হয়না আর যারা বিশ্বাস করেনা তাদেরকে হাজার প্রমাণ দেখালেও বিশ্বাস করবেনা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এসব বিশ্বাস করেন কারণ তার জীবনে এমন কিছু অভিজ্ঞতার ঝুলি রয়েছে যেগুলার বৈজ্ঞানিক যৌক্তিকতা নাই।

★ শিশুকথা :
এটি বাংলা ভাষায় রচিত এবং শিশুদের জন্য বিশেষ এক বই। যেটির লেখিকা হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাবলিশার হলো দে’জ পাবলিশিং (ভারত)।

★ পরিবর্তন :
বাংলায় রচিত একটি অসাধারণ বই, যেটির ৮ম মুদ্রণ ২০১৮ সালেই, ১৮৯ পেইজের এই বইটিতে বাংলার মানুষের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর এই পরিবর্তনকারীদের মধ্যে মমতা ব্যানার্জি এবং তার সহযাত্রী অন্যতম। এরাই আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। আর এইসব আন্দোলনের বিবরণ এই বইতে সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

★ শিশুসাথী: বাংলায় রচিত বইটি দে’জ পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত।
★ আজব ছড়া : বাংলায় রচিত বইটির পেইজ সংখ্যা ৬৩টি। শিশুদের জন্য বইটি অসাধারণ এক বই হিসেবে বিবেচিত। ২০১৫ সালেই ১৩ তম মুদ্রণ শেষ হয়েছে।
★ নেতাই
★ মা মাটি মানুষ
★ লাঙল
★ সরণী
★ জন্মাইনি
★ মা
★ Motherland
★ রোশনি
★ বিশ্ববাংলা।

★ কন্যার চোখে কন্যাশ্রী
★ আমার পাহাড়।
★ আমার জঙ্গল
★ চোখের তারা।
★ গণতন্ত্রের লজ্জা।
★ জাগো বাংলা
★ আন্দোলনের কথা
★ অশুভ সংকেত
★ অনুভূতি
★ উপলদ্ধি
★ Slaughter of Democracy.
★ কুৎসাপক্ষ।

★ নামাঞ্জলি
★ সহিষ্ণুতা
★ ভাবনার সাথী
★ ঋতুরাজ।
★ পথের সাথী
★ পছন্দের কবিতা।
★ সে নাই
★ কবিতা
★ এক পলকে এক ঝলকে
★ সেরা মমতা ১ এবং ২।
★ সোজা সাপটা
★ কথায় কথায়

★ নন্দীমা
★ অনশন কেন
★ ক্রোকোডাইল আইল্যান্ড
★ জনতার দরবার
★ তৃণমূল
★ মানবিক
★ পল্লবি
★ চলো যাই
★ বিকেল টা হারিয়ে গেছে।
★ তুমি
★ অবিশ্বাস্য
★ একান্তে

★শেষকথা

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার এবং সাফল্যের ফলস্বরূপ। আর এটি মুখ্যমন্ত্রীর সহজাত প্রবৃতির অংশ হিসেবে বিবেচিত। অগ্নিকন্যার ভারতীয়দের প্রাণের দিদি, কৃষক শ্রমিকদের প্রিয় তথা বাংলার মানুষদের প্রিয় এই অগ্নিকন্যা রূপে গুণে অনন্য। তার গুণের শেষ নাই। তিনি বাংলার জন্য লড়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। বিরোধী দলীয়দের অন্যায়ে যেমন কঠোর তেমনি রয়েছে তাদের ব্যাপারে মমতার হাত যত্নের হাত। বিরোধী দলীয়দের কে মিষ্টি দেওয়ার ব্যাপারে ও রেকর্ড গড়েছেন তিনি। তখন এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তখন তার উত্তর ছিলো এমন যে, তিনি সবাইকেই এমন দেন। এমনকি প্রচলিত আছে যে মোদীর ওয়াইফের সাথেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কারো সাথে বিরোধ থাকলেও বাস্তব জীবনে সবার ক্ষেত্রেই তিনি সমান।

সবার জন্যই মমতা দিদি। বাংলার মমতা দিদি সবার প্রিয়। সর্বজনিন দের জন্য তিনি নিজেকে বিলিয়ে দেন ও। যারফল তার এত বেশি জনপ্রিয়তা। রাজনীতিবিদ হওয়া ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর আরো গুণ রয়েছে, সে সবের মধ্যে তার লেখনিও উল্লেখযোগ্য। কেননা সে তার লেখনীর মাধ্যমেও জনমানবের কাছে সুপরিচিত, ভারতের ২২লক্ষের বই মেলাতে তার বই এর প্রতি মানুষের আলাদা দৃষ্টি থাকে। মমতার বই এর সংখ্যার ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি তবে এটা শোনা গিয়েছে, যে বছর তার বই ৮৭ সংখ্যায় পৌঁছায় তখন সেটা শুনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন পরের বছরই তিনি আরো ১৩ টি প্রকাশ করবেন। আর তাছাড়াও তার সুখ্যাতি রয়েছে চিত্রশিল্পে। তার চিত্রশিল্প গুলো ও মহামূল্যে বিক্রয় হয়। শোনা গেছে যে, তার ৩০০টি চিত্রশিল্প ৯কোটি তে বিক্রয় হয়েছে।