সিজারের পর মায়ের যত্ন এবং করণীয়: একজন গর্ভবতী নারীর যেমন যত্নের প্রয়োজন তেমনি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ও সে নারীর আরো বেশি যত্ন প্রয়োজন। প্রসব পরবর্তী দেড়মাস থেকে দুইমাস সময়টা প্রতিটি নারীর জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন সিজারিয়ান মায়ের শুধু শারীরিক ভাবেই সিজার তথা অস্ত্রোপচারের প্রভাব পড়েনা বরং সে মানসিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে মা’কে মানসিক সাপোর্ট করা পরিবারের সদস্যদের জন্য কর্তব্য। বিশেষ করে আগত বাচ্চার বাবার দায়িত্ব। গর্ভবস্থায় থাকার কারণে মায়েদেরকে শারীরিক পরিবর্তন গুলো থেকে নতুন করে পূর্বের অবস্থায় ফেরার সকল চেষ্টা করতে হয়। এক্ষেত্রে শুধু বাচ্চার যত্নই যথেষ্ট নয়। বাচ্চার সাথে বাচ্চার মায়ের ও ভালো থাকা নিশ্চিত করতে হবে। আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে সিজারের পর মায়ের যত্ন এবং করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো জানুনঃ গর্ভবতী মায়ের খ্যদ্য তালিকা ও গাইডলাইন
Table of Contents
সিজার কি ও সিজারের পর মায়ের যত্ন এবং করণীয়
সিজার তথা সার্জারি
গর্ভধারণকারী নারীকে পিঠের মেরুদণ্ডে অ্যানেস্থাশিয়া দেওয়া হয় কাউকে সেন্সলেস করার দরকার হয় আবার কাউকে সেন্সলেস করার দরকার হয় না। এরপর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নারীর তলপেটে ছেদন করে নবজাতক কে বের করা হয়।
সার্জারির পরবর্তী ধাপ সমূহ:
সার্জারির মত এই মেজর অপারেশনের পর একজন নারীকে সীমাবদ্ধ কিছু নিয়ম নীতিতে থাকতে হয়। শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে এসব নিয়ম মেনে চলাই যুক্তিযুক্ত। নিম্নে সেসব ধাপ গুলো তুলে ধরা হলো –
- সার্জারির পর শরীরের কাঁপুনি
শরীরে দেওয়া অ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাবের কারণে অনেকের শরীরের কাঁপুনি দেখা দেয়। এতে ভয় পাবার কিছু নাই। কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সমস্যা গুলা চলে যাবে।
- জরায়ুর রক্তপাত
সার্জারির পর মায়েদের যৌনাঙ্গ থেকে রক্তপাত হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। এই রক্তপাত কে পোস্টপারটাম ব্লিডিং বলা হয়। বেশি রক্তপাত, দুর্গন্ধ, গাঢ় রঙের রক্তপাত দেখা স্বাভাবিক লক্ষণ নয়। তখন এটি সংক্রমণের লক্ষণ হিসেবে পরিণত হয়।
- সিজারের পর একজন মায়ের অবস্থা এবং তার মনের অনুভূতি
দীর্ঘ মাতৃত্ব কাল শেষ হওয়ার পর একজন নারী যখন মা হয় তখন তার অনুভূতি হয় অন্যরকম। সি-সেকশন অথবা স্বাভাবিক প্রসব প্রক্রিয়া যাইহোক না কেন নতুন মায়েদের মনের আনন্দ উচ্ছাস একই থাকে। সিজারের পর থেকেই প্রতিটা মায়ের ছোট্ট শরীরের ছোট্ট পাখিকে দেখার অনেক ইচ্ছে জাগে। আর এই সুখের ধারা বইতে থাকে মায়েদের মন- মস্তিষ্কে। সিজারিয়ান মায়ের ক্ষেত্রে এ সময়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়টা নতুন অতিথি আগমনে খুশি হওয়ার সাথে সাথে সময়টা শারীরিক নানা পরিবর্তনের মাধ্যমে পার করতে হয়। সার্জারির পর ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বিভিন্নরকম শারীরিক পরিবর্তন বা উত্থানপতনের সাথে পরিচিত হতে হয়। চেতনা নাশক ওষুধের কারণে চুলকানি ও দেখা দিতে পারে। অপারেশনের পর থেকে অস্থিরতা এবং বমিভাব দেখা দিতে পারে। তাছাড়া কাটা স্থান থেকে নিচের দিকে পুরো অসাড় অনুভূতি হতে পারে। সার্জারির পর স্যালাইন চলতে থাকে দীর্ঘসময়ের জন্য।
- অস্ত্রোপচার করার পর প্রস্রাবের সমস্যা এবং শারীরিক যন্ত্রণা সমূহ
সার্জারির একদিন পর পস্রাবের নল খুলে ফেলা হয়। এরপর শুরু হয় পস্রাবের কষ্ট। সাধারণত সার্জারির পর ব্যথা করা স্বাভাবিক হলেও এটি অস্বাভাবিক ব্যথা হিসেবে বিবেচিত হয়। এজন্য অ্যানেস্থাশিয়া বিশেষজ্ঞরা মরফিন নামক ওষুধ দিতে বলেন। এই মরফিন পুরো একদিন ব্যথা মুক্ত রাখতে পারে সার্জারির রোগীকে। আর এরপর থেকেই ব্যথার ওষুধ দেওয়া শুরু হয়। সার্জারির পর পস্রাবের সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় পানি পান করতে হবে এবং পস্রাব ও করতে হবে। কোন সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিতে হবে।
- হাঁটা হাঁটি করা
সিজারের পর ২৪ ঘণ্টা বেড রেস্ট হলেও এরপর কষ্ট করে হাঁটাচলা শুরু করতে হবে। বেড থেকে উঠাও অসম্ভব মনে হতে পারে কিন্তু যেভাবেই সম্ভব এবং যতদ্রুত সম্ভব আপনাকে হাঁটাচলা শুরু করতে হবে। যত অল্প সময়ে আপনি হাঁটা চলা শুরু করবেন তত তাড়াতাড়ি আপনি সাধারণ ভাবে চলতে পারবেন। রক্ত জমাটের ভয়, ব্যথার ভয় দূর করে ডাক্তারের পরামর্শ মত হাঁটা চলা শুরু করুন। দেখবেন খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবেন।
- হাঁচি- কাশি
সার্জারির পর হাঁচি-কাশি যতটা সম্ভব চেপে রাখা উচিত। আর দিলেও একদম ধীরেসুস্থে দিতে হবে। আর নয়তো পেটের ওপর বালিশ ধরে আস্তে হাঁচি-কাশি দিবেন। আর এ সময়ে বেল্ট পরে থাকা শরীরের জন্য অনেক ভালো। নিজের মানসিক জোর এবং শারীরিক জোর ও পাবেন বেল্ট পরার মাধ্যমে। আর এতে উঠতে বসতেও সুবিধা হয়। নয়তো অনেক ঝামেলা এবং কষ্ট পোহাতে হয়।
- গ্যাসের সমস্যা
সার্জারির পর মায়েদের খুব বেশি গ্যাস জনিত সমস্যা সংঘটিত হয়। কারণ এ সময়ে পরিপাকতন্ত্র মন্থর থাকে। এ সুযোগে গ্যাস তৈরি হয়। শারীরিক ব্যায়াম এবং ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ ঠিকমত খেলে তা সেরে যাবে।
- সার্জারির পর প্রয়োজনীয় খাবার
একজন মায়ের খাদ্য তালিকা সব সময়ে ঠিক রাখা উচিত। প্রসবের পর খাদ্য তালিকা আরো বেশি ঠিক রাখা উচিত। কারণ এ সময়ে বুকের দুধ তৈরির জন্য এবং শরীরের ঘাটতি পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার খেতে হবে। দুধ, ডিম সহ সুষম খাবারের তালিকা ঠিক রাখতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এ সময় একজন মায়ের প্রচুর পিপাসা পাবে। পিপাসার সাথে সাথে পানিও পান করতে হবে। এ পানি বাচ্চার খাবার এর যোগান দেয়, বাচ্চার পানির চাহিদা পূরণ করে। আর তাছাড়া মায়ের শরীরের পদার্থ গুলো দূর করে পস্রাবের মাধ্যমে। কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্ত জমাট সহ নানা রকম সমস্যা দূরীকরণে পানি খুব উপকারি।
- স্তন্যপান
সিজারের পর বাচ্চাকে স্তন্য পান না করালে মায়েদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। স্তন্য ভারী হয়ে ব্যথা শুরু হতে পারে, আর সে ব্যথা থেকে জ্বর ও আসতে পারে। সুতরাং স্তন্য পান করালে যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হওয়া যায় এবং পান না করালে স্তন্য থেকে দুগ্ধ বের করে ফেলে দিতে হবে। নয়তো এসব কষ্ট সহ্য করতে হবে। আবার অনেকেই জানেন না মায়ের দুগ্ধ ফিডারে রেখে সংরক্ষণের উপায়। পরবর্তী সময়ে বাচ্চাকে সংরক্ষিত দুগ্ধ খাওয়ানো, অপচয় না করার একটি অসাধারণ উপায়। মায়ের স্তন্যের এক ফোঁটা দুগ্ধ ও অপচয় না করা উচিত। ফিডারে নরমাল তাপমাত্রায় ৪ঘণ্টা পর্যন্ত রাখা যাবে এবং ফ্রিজে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। ফ্রিজ থেকে বের করেই খাওয়ানো যাবেনা এজন্য ফ্রিজ থেকে বের করার পর নরমাল তাপমাত্রায় আসলে তখন খাওয়ানো যাবে।
- সেলাই কাঁটা বা খোলা
সার্জারির ৪র্থ দিন অথবা ৫ম দিনে নতুন মায়ের সেলাই কাঁটা হয়। এটি করতে তেমন সময়ের প্রয়োজন পড়ে না। এই কাজ মূলত হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ এর আগেই করা হয়। আর নতুন মায়ের সমস্যা থাকলে ৫দিন পর ও সেলাই কাঁটা যায়। সেলাই কাঁটার পর থেকে এ জায়গার যথেষ্ট যত্নের প্রয়োজন হয়। চার থেকে ছয় ইন্সি লম্বা এই কাঁটা স্থানের যত্ন করা জরুরী। কেননা সেলাই কাঁটার পর এই জায়গা গাঢ় বর্ণ এবং ফোলা থাকে। দিনের পর দিন অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে এই জায়গা ঠিক হতে থাকে। এই স্থানে অনেক চুলকায় তাই যথেষ্ট সচেতন থাকা উচিত।
- সেলাই এর দাগ
গর্ভবতী মায়ের শরীরের সেলাইয়ের দাগ বছরের পর বছর পর্যন্ত থাকে। গ্যাসে সমস্যা চুলকানোর সমস্যার কারণে বছর খানেক পর ও এ জায়গা মোটা হয়ে যায়, চুলকায় আরো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ভয় পাওয়ার কারণ নাই। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম ব্যবহারে এ সকল সমস্যা চলে যাবে। দাগ রিমুভ কারী তেল, ক্রিম বা যেকোন প্রসাধনী ব্যবহারের মাধ্যমে এ দাগ দূর করা সম্ভব।
আরো জানুনঃ গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
সিজারের পর মায়ের শারীরিক যত্ন
সিজার একজন মায়ের জন্য অনেক ভয়ানক সময়। এই মেজর সার্জারি প্রতিটা মা’কেই নানারকম সমস্যার মুখোমুখি করে। এ সকল সমস্যা থেকে সেরে উঠার জন্য বিশ্রামের অনেক প্রয়োজন রয়েছে। নতুন মায়ের নানারকম কাজে অন্যদের সাহায্য বাধ্যতামূলক। কেননা নতুন মা কে অন্তত দেড় মাস বিশ্রামে কাটাতে হবে। এতে করে সে মা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে নতুন মা’কে বলা প্রবাদটি হলো- ” যখন বাচ্চা ঘুমাবে তখন তুমিও ঘুমাও”। বাচ্চার জন্য মায়ের ঘুম ঠিকমত না হওয়ার কারণে এই প্রবাদ প্রায় সবাই বলতে থাকে।
অনেক মা আছেন যারা অন্যদের উপর নির্ভরশীল থাকতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এ সময়ে এসব ভাবলে চলবে না। নিজের শরীরকে ভালো রাখতে হলে নতুন বাচ্চার ভালো চাইলে অবশ্যই নিজেকে বিশ্রামে রাখা আবশ্যক। আর সেজন্য নতুন বাবার সাহায্য দরকার। যদিও হাত পা ছেড়ে ও বসে থাকা যাবেনা। কারণ একজন সিজারিয়ান মা’কে হাঁটা চলা করতে হবে। নয়তো নিজেরই সমস্যা হবে। ভারী কিছু তোলা – ভারী কাজ বা যা কিছু শরীরের জন্য খারাপ সেসব থেকেই দূরে থাকতে হবে।
কাঁটা স্থানের সঠিক যত্নের মাধ্যমে নিজেকে ভালো রাখতে হবে। বাচ্চাকে খাওয়ানো একটা বড় কাজ। যত বেশী বাচ্চাকে খাওয়াতে পারবে বা যত অল্প সময় পর পর বাচ্চাকে খাওয়াতে পারবে ততই বাচ্চা দ্রুত বেড়ে উঠবে এবং ভালো থাকবে। নিজের খাবারের দিকে মনযোগী না হলে বাচ্চার খাবার তৈরি হবেনা। তাই যথেষ্ট পরিমাণে খাবার এবং পানি পান করতে হবে। যাতে বাচ্চা এবং মায়ের চাহিদামত হয়। মা’কে এতটাই স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে যে, বাচ্চাকে খাওয়ানোর কারণে মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকবে, সে ঝুঁকি দূর করতে তাকে খেতেই হবে প্রচুর পরিমাণে। এরই মধ্যে নিজের স্বাস্থ্য পূর্বাবস্থায় আনার জন্য ব্যায়াম ও করতে হবে।
আরো জানুনঃ ব্রয়লার মুরগী খাওয়ার অপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক
সিজারের পর যে সকল কাজ করা যাবেনা
সিজারের পর একজন মায়ের কাজ বন্ধ। সাধারণ হাঁটা চলাতে অভ্যস্ত থাকতে হবে। ক্ষত স্থানের যত্ন নিতে গিয়ে সে জায়গা বারবার হাত দেওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা বারংবার স্পর্শে ইনফেকশন ও হতে পারে। হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরে কোন কাজ করা যাবেনা সে সকল কাজ পরিবারের সদস্যদের উপর ন্যস্ত করতে হবে। ভারী জিনিস তোলা, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা না করা ভালো। এমনকি প্রথম প্রথম নিজের বাচ্চাকেও কোলে তোলা যাবেনা। পরিবারের সদস্যদের কে বলতে হবে কোলে তুলে দেওয়ার জন্য। সবচেয়ে বড় কথা হলো সিজারের দেড় থেকে ২মাস পর শারীরিক মিলন করা যাবে এর আগে নয় এতে নতুন মায়ের সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া এ বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত।
আরো জানুনঃ মাছের তেলের উপকারিতা
সার্জারির পর নতুন মায়ের মানসিক যত্ন
সার্জারির পর প্রায় সবার ইমোশনাল ব্রেকডাউন হয়। অল্পতেই মন খারাপ হয়, কান্না পায়, দুর্বল লাগে, নরমাল ডেলিভারি না হওয়ার কারণে নিজেকে অযোগ্য ভাবা সহ নানারকম ভাবে মন খারাপ থাকে। কিন্তু এসবকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মন ভালো রাখা তখন অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সদস্যদের উচিত নতুন মা’কে হাসি খুশিতে রাখার চেষ্টা করা। আবার অতিমাত্রায় হাসাও যাবেনা যা কিনা পেটে চাপ পড়বে এতেও সমস্যা।
সার্জারির পর ঘুমের সমস্যা, হরমোনের পরিবর্তন, শারীরিক এবং মানসিক ধকল সহ নানা কারণে নতুন মা খিটখিটে আচরণ বা কান্নাকাটি করতে পারে সেটাকে ভয়ানক ভাবার কারণ নাই। কেননা এটিকে বেবি ব্লুস (Baby Blues) হিসেবে ধরা হয়। আর এসব সমস্যা যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকে। তখন একে পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন বা প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বলে। এ সময় বাচ্চার বাবা সহ পরিবারের সদস্যদের উচিত নতুন মা কে ভরসা দেওয়া, সময় দেওয়া এবং তাকে জাজ না করে বুঝানো। যথেষ্ট উপদেশ দেওয়া প্রশংসা করা একজন মা’কে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
এই সময়ে একজন মায়ের ও উচিত কেউ তার কথায়, আচরণে বিরক্ত হলো কিনা, কষ্ট পেলো কিনা তা দেখার। ভেবে কথা বলা, নিজেকে পজিটিভ চিন্তায় রাখা, মাত্রাতিরিক্ত কথা এবং বাজে চিন্তা না করা। যেকোন সমস্যা নিজের মনে না চেপে রেখে কারো সাথে শেয়ার করা। আর এ সময়ে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কোথাও ঘুরতে যাওয়া। যা নতুন মায়ের অবসাদ থেকে মা’কে বের করবে এবং ভালো রাখবে। বাচ্চা নতুন আবহাওয়া পাবে এবং বাইরের আলোবাতাস পাবে। বাচ্চাকে স্ট্রলারে করে ঘুরে আসা নতুন বাচ্চার পরিবারের একটি ভালো দিন হতে পারে। আর যদি ঘুরতে যাওয়া কঠিন ব্যাপার হয় তবে বন্দী ময় জীবন থেকে তথা ঘর থেকে বাইরে গিয়ে দাঁড়ানো, বারান্দায় যাওয়া, ছাদে যাওয়া উৎকৃষ্ট। আলো বাতাস উপভোগ করে মনকে শান্ত এবং ভালো রাখুন।
একজন মা’কে নিজের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি বাচ্চার স্বাস্থ্যের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। নিজের আগত সময় অথবা বাচ্চার নতুন মাসে পা দেওয়া সহ নানা টপিক নিয়ে গুগলে পড়ে নিতে পারে অথবা কারো কাছ থেকে জেনে নিতে পারে। এতে করে আগত সমস্যা থেকে বাঁচা যাবে এবং সুস্থ থাকার চেষ্টা, সমস্যার সমাধান করা যাবে। আশেপাশের অপ্রয়োজনীয় উপদেশ ইগ্নোর করা উচিত। নানারকম উপদেশে কান ঝালাপালা হয়ে যেতে পারে। যার পুরোটাই ইগ্নোর করে যা ভালো এবং মন্দ তাই দেখতে হবে। কেননা একজন মা বলতে পারবে কোনটা ভালো কোনটা মন্দ, বুঝতে না পারলে সমস্যা নাই। ডাক্তার থেকে জেনে নেওয়া যাবে। একজন নতুন মা হিসেবে নিজের যত্ন, বাচ্চার যত্ন পরিবারের যত্নের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নিজের মন ভালো রাখতে হবে। সব কিছুর মূলে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কোন ভাবেই হতাশ না হোন। কারণ হতাশা সব ভালোকেই খারাপে রূপান্তর করতে পারে।
আর জানুনঃ গরুর চর্বি খাওয়ার উপকারিতা
ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া
সার্জারির পর হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পর কোন সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত। সমস্যাগুলোর কয়েকটি হলো-
★ ১০০.৪ ডিগ্রীর বেশি জ্বর হলে।
★ আকস্মিক পেটে ব্যথা দেখা দিলে অথবা পেট জ্বলা দেখা দিলে।
★ কাঁটা স্থান থেকে পুঁজ বের হওয়া বা অকারণেই ব্যথা করা।
★ পায়ের কোন অংশ লাল হয়ে ফুলে গেলে বা ব্যথা করলে।
★ পস্রাবের সাথে রক্ত অথবা ওই সময় জ্বালা পোড়া হলে।
★ স্তনে বা বুকে ব্যথা হলে।
সুস্থ শরীর পাওয়ার জন্য নিজের যত্ন নেওয়া আবশ্যক। আর দেড় থেকে ২মাস পরপর ডাক্তার দেখানো উচিত। সম্পূর্ণ চেক-আপ করে ডাক্তার নতুন মায়েদের কে প্রয়োজনীয় উপদেশ দেন এবং চিকিৎসা করেন। আর এই চেক-আপ এর উপকারিতা হলো- নতুন মায়ের গর্ভবস্থার সাধারণ পরিবর্তন আবার শরীরের সকল পরিবর্তন শেষে পূর্বাবস্থায় ফিরেছে কিনা এবং এসকল পরিবর্তনে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা তা নির্ণয় করা হয়। তাছাড়া বাচ্চার ব্যাপারে অর্থাৎ বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো, টিকা জনিত বিষয় নিয়ে এবং বাচ্চার যত্ন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় উপদেশ প্রদান করা হয়। নতুন মা এবং বাচ্চার সুস্থতার লক্ষ্যেই প্রসব পরবর্তী চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
সার্জারির পর নতুন মায়ের এক্টিভিটি
সিজার একটি মেজর অপারেশন। এই মেজর সার্জারির পর অবশ্যই নতুন মা কে সচেতন থাকতে হবে। ধীরে চলা, জটিলতা এড়িয়ে যাওয়া আবশ্যক। যথেষ্ট পরিমাণে ঘুম, নিয়মিত হাঁটা চলা, ভারী জিনিস না তোলা। এই সময়ের উত্তম ব্যায়াম হলো হাঁটা চলা। ধীরে ধীরে হাঁটা চলা বাড়াতে হবে, তবে খেয়াল করতে হবে যাতে শরীরের উপর ধকল না যায়। কাশি ও হাঁচি দিতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, সার্জারির পর স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা উচিত। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি এবং ফল খেতে হবে। আঁশ যুক্ত খাবার খাওয়া আবশ্যক।
দ্রুত সুস্থ হওয়ার কৌশল
সার্জারির পর সুস্থতার জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে। দেহের যত্ন নিশ্চিত করতে হবে।
কাহিল হওয়ার মত কাজ করা যাবেনা, অতিমাত্রায় সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করা যাবেনা। ডাক্তারের অনুমতি ব্যতিত ব্যায়াম করা যাবেনা। ব্যায়াম করে নিজের শরীরকে চাপে রাখা যাবেনা।
- বিশ্রাম নেওয়া
ভালো ভাবে সুস্থ হওয়ার জন্য বিশ্রাম অত্যাবশ্যক। সার্জারির পর অন্তত ৬সপ্তাহ বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।
- ব্যথা উপশমের ওষুধ
ব্যথা উপশমের জন্য ওষুধ গ্রহন করা যেতে পারে। তবে স্তন্য পান করার সময় এ ওষুধ গুলা খাওয়ানো যাবে কিনা তা ডাক্তার থেকে জেনে নেওয়া আবশ্যক।
- ফাইবার ও পুষ্টিকর খাদ্য
খাদ্যের তালিকায় পুষ্টিকর খাদ্য রাখা উচিত তাজা ফল সবজি প্রদান খাদ্য। স্তন্য দানের মাধ্যমে শরীর থেকে পুষ্টি নিঃসরণ হবে সেজন্য ও বাড়তি খাবার খেতে হবে। আঁশ যুক্ত খাবার এবং প্রচুর পানি করা উচিত।
- গণ শৌচাগার
সিজারিয়ান মায়ের উচিত গণ শৌচালয় পরিহার করা। সংক্রমণ সৃষ্টির ভয় থাকতে পারে, তাহলে ক্ষত নিরাময় কঠিন হবে।
- স্তন্য পান
সার্জারির পর শিশুকে স্তন্য দানে সচেতন থাকতে হবে। কারণ এ সময়ের সচেতনতা খুব জরুরি। এ সময়ে চেয়ারে বসে সোজা অবস্থায় বাবুকে খাওয়ানো এতে পেটের উপর চাপ পড়ে না।
সমাপিকা
নারী শুধুমাত্র একজন নারী নয়। নারী একজন মা, একজন বোন, একজন স্ত্রী। একজন নারী নানা ভাবে পরিবারকে আগলে রাখে। মা হয়ে, বোন হয়ে অথবা স্ত্রী হয়ে পরিবারের সবার সব দিকে খেয়াল রাখা মানুষটাই হলো নারী। আর সে নারী যখন নানারকম অবস্থায় পৌঁছায় তখন নানারকম যত্নের প্রয়োজন হয়। একজন নারী যখন নিজের ভালো দেখেনা অর্থাৎ নিজের দিকে খেয়াল করেনা, পুষ্টিকর খাবার না খেয়ে নিজেকে কষ্ট দেয়। তখন সমস্যা না হলেও একসময়ে ঠিকই পুষ্টিহীনতায় ভুগবে। কিন্তু একজন নারীর উচিত শেষ সময় পর্যন্ত দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথে ভালো থাকার ও চেষ্টায় থাকা। কেননা যখন মা ভালো থাকেনা তখন সে পরিবার ভালো থাকেনা।