রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক যাওয়ার উপায়

রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক যাওয়ার উপায়

আপনারা যারা রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক যাওয়ার উপায় খুজছেন তাদের জন্য আমার আজকের এই লেখা। আজকে আমি কীভাবে রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক গিয়েছি তা আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। প্রকৃতির আসল সুন্দর্য দেখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই রাঙ্গামাটি হয়ে সাজেক যাওয়ার উচিত। আজকে আমার ভ্রমণ সঙ্গী আছে মোট ৫ জন, আমরা পাচ বন্ধু মিলে রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক প্লেন করি অনেক আগে থেকেই। প্লেন অনুযায়ী আমরা প্রস্তুত হয় এবং যাত্রা করি। আমরা যেহেতু ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি হয়ে সাজেক যাব, তাই আমরা সব বন্ধুরা সন্ধ্যা ৭ টায় ঢাকার ফকিরাফুল মিলিত হয়। ফকিরাফুল থেকে আমরা আগে থেকে কনর্ফাম করা টিকেট সংগ্রহ করি। 

আমাদের বাসের টাইম ছিল রাত ৯ টায়। রাত যখন ১০ টা তখন আমাদের বাস রওনা হয় রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে। যাত্রাপথে গাড়িতে আমরা অনেক মজা ও হইউল্লোড় করে সময় কাটাতে থাকলাম। রাত ১২ টা ৩০ মিনিটে আমাদের বাস কুমিল্লায় যাত্রাবিরতি দেয়। যাত্রা বিরতীতে আমরা কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী রসমালায় খেয়ে নিলাম। রাত ১ টায় আমাদের বাসা আবারো যাত্রা শুরু করল। যাত্রা শুরু করা পর আমরা সবাই ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিলাম যেহেতু আমাদেরকে অনেক দূর ভ্রমণ করতে হবে। আমাদের সবার ঘুম ভাংগল গাড়ির সুপারভাইজারে ঢাকা কারণ ততক্ষণে আমাদের বাস রাঙ্গামাটি পৌছে গেছে। ভোর ৫ টায় আমরা বাস থেকে নেমে ফ্রেস হয়ে সকালের নাস্তা করে নিলাম।

রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক যাওয়ার উপায়

রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক যাওয়ার উপায় বলতে আপনারা একটি মাত্র পদ্ধতিতে সাজেক যেতে পারবেন। যেটি হল লঞ্চ দিয়ে। আমরা সবাই সকাল ৭ টার মধ্য রাঙ্গামাটি লঞ্চঘাটে চলে এসেছি কারণ আমরা প্রথম টিপি যাব। আপনাদেরকে জানিয়ে রাখা ভাল যে রাঙ্গামাটি থেকে দুই ঘন্টা পরপর লঞ্চ গুল ছাড়ে, তাই চেস্টা করবেন প্রথম টিপে যাওয়ার জন্য। রাঙ্গামাটি থেকে লঞ্চে করে আমাদের প্রথম গন্তব্য হচ্ছে লংগদু  কারণ রাঙ্গামাটি থেকে লঞ্চগুল লংগদু পর্যন্ত যেয়ে থাকে। লঞ্চঘাটা প্রথমে আমরা লংগদু এর টিকেট কেটে নিলাম, টিকেটের মূল্য ২০০ টাকা করে। আপনি যদি লঞ্চের নিচ তলায় বসে যান তাহলে টিকেটে দাম ১৫০ টাকা আর যদি দুতলায় প্রকৃতির আসল সুন্দর্য দেখতে দেখতে যেতে চান তাহলে আপনাকে গুণতে হবে ২০০ টাকা। 

সকাল ৭ টা পনের মিনিটে আমাদের লঞ্চ কাপ্তাই লেক দিয়ে যাত্রা শুরু করল। কিছুদূর যাওয়ার পরই আপনি রাঙ্গামাটি তথা কাপ্তাই লেকার আসল সুন্দর্য দেখতে পাবেন। দুই পাশে পাহাড় এর মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। দুই পাশের পাহাড আপনাকে হিমালয়ের ফিল দিবে। কাপ্তাই লেকের সুভলং ঝর্ণা দেখতে দূর থেকে। লঞ্চে সবাই যার যার মত করে আনন্দ করছে। কিছু কিছু জায়গায় দেখা যায় যে যার মত করে প্রকৃতিকে ফ্রেমবন্দী করছে মোবাইল ও ক্যামেরায়। দেখতে দেখতে সকাল সাড়ে ১০ টায় আমরা চলে আসলাম লংগদু লঞ্চঘাটে। লংগদু লঞ্চঘাটে নেমে সবাই যার যার মত করে স্থানীয় খাবার খেয়ে নিল। আমরা খেলাম ডাব ও কলা। এখানে ডাবের দাম তুলনামূলক একটু কম। ৭০ টাকা করে প্রতি পিস বড় ডাব পাওয়া যায়। লংগদু লঞ্চঘাটের পাশেই লংগদু পুলিশ ফাড়ি সেখানে মনোমুগ্ধকর জায়গায় সবাই তুলে নিল।

আরো জানুনঃ কুয়াকাটা ভ্রমণ গাইড ও দর্শনীয় স্থান

লংগদু থেকে দিঘিনালা, খাগড়াছড়ি যাত্রা

লংগদু থেকে সরাসরি সাজেকের গাড়ি পাবেন না। লংগদু থেকে দিঘিনালা, খাগড়াছড়ি যেতে হবে প্রথমে। লংগদু থেকে দিঘিনালা, খাগড়াছড়ি আপনি দুটি উপায়ে যেতে পারবেন। প্রথমে বাইকে করে আর দ্বীতিয়টি হল চান্দের গাড়ি করে। প্রতি বাইকে দুইজন করে যেতে পারবেন ভাড়া পরবে ৩০০ টাকা দুইজনের। আমরা যেহেতু অনেকজন ছিলাম তাই চান্দের গাড়ি দিয়ি গিয়েছি। সকাল ১১ টায় আমাদের চান্দের গাড়ি দিঘিনালার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। কিছুদূর যাওয়ার পর আমরা কয়েকজন মিলে চান্দের গাড়ির ছাদে চলে গেলাম যদি রিস্ক ছিল তবুও অনেক মজা হয়েছে। ছাদে বসে আমরা গানের তালে তালে প্রকৃতি উপভোগ করতে  করতে চলতে থাকলাম। 

যাতাপথে আমরা নকশীকাথা রেস্টুরেন্টে দুপুরের লাঞ্চ করে নিলাম। নকশীকাথা রেস্টুরেন্টটি খুবই সুন্দর একদম ছবির মত তাই সবাই যার যার মত করে ছবি তুলে নিল। দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা চলে গেলাম দিঘিনালায় দুপুর ২ টার দিকে। দিঘিনালায় আমরা সাজেকের উদ্দেশ্যে যাত্রার জন্য প্রস্তুত নিলাম। দিঘিনালা, খাগড়াছড়ি আপনি চাইলেই যেকোন সময় সাজেক যেতে পারবেন না কারণ সেখানে কিছু নিয়ম রয়েছে। প্রতিদিন দুটি স্কোয়াটের মাধ্যমে সাজেক যাওয়া যায় যেটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সকাল ৯ টা ও দুপুর ৩ টায় স্কোয়াট যাত্রা করে, সকালের স্কোয়াট যাত্রা করে সকাল ৯ টায় এবং দুপুরের স্কোয়াট যাত্রা করে দুপুর ৩ টায়। প্রতিটি স্কোয়াটের আগে ও পড়ে সেনাবাহিনীর গাড়ী থাকে তারা প্রটেকশন দিয়ে দর্শনাথীদের সাজেক নিয়ে যায়।

দিঘিনালা, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্রমণ

আমরা দুপুরের স্কোয়াটে দুপুর ৩ টায় আমাদের চান্দের গাড়ি যাত্রা শুরু করে। আপনাদের জানা জরুরী যে আপনারা যে চান্দের গাড়ি দিয়ে যাবেন আবার আসার পথে সেই গাড়ি দিয়ে আসতে হবে। যাত্রা পথে পাহাড়ি আকাবাকা রাস্তা আপনাকে মুগ্ধ করবে। অনেক সময় আপনার মনে হবে আপনি আকাশে ওঠতেছেন কারণ সাজেক সমুদ্রপৃস্ট থেক অনেক উচুতে। রাস্তার দুপাশে আদিবাসী অনেক শিশু আপনাকে হাত নাড়িয়ে অভিভাদন জানাবে। আপনি চাইলে চান্দের গাড়ি থামিয়ে পাহাড়ি ফলমূলের স্বাদ নিতে পারেন। 

আমাদের যাত্রা পথে পাহাড় ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে প্রায় ৩ ঘন্টা রাস্তা বন্ধ ছিল, এই সুযোগে আমরা পাহাড়িদের জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। পাহাড়ি মানুষগুল খুবই আন্তরিক, আমদের পানির পিপাসা পাওয়াতে পাহাড়ি শুশুদের কাছে পানি চাই, তারা আমাদের খুবই আন্তরিক ভাবে পানি এনে দেয় ও সুন্দরভাবে  কথা বলে।   বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দূত পদক্ষেপের জন্য খুব তারাতারি রাস্তা সচল হয়ে যায়। সন্ধার দিকে আমাদের চান্দের গাড়ি চলে সাজেকে।

শেষ কথা

আশা করি আপনারা রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক যাওয়ার উপায় খুজে পেয়েছেন সম্পর্ণ লেখাটি পড়ে। আপনারা কমেন্টের মাধ্যমে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে পারেন। সাজেক ভ্রমণ করার আগে অবশ্যই কিছু বিষয় আগে থেকে করে রাখবেন তা না হলে বিপদে পড়তে পারেন। যেমন আসা ও যাওয়ার বাসের টিকেট, আগে থেকে চান্দের গাড়ি ঠিক করে রাখা, সাজেকের রিসোর্ট আগে থেকে বুকিং দেয়া ইত্যাদি। আপনার যাত্রা শুভ হক।

Tags: No tags

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *